ঢাকা সেনানিবাসে এনআইডি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন

আগের সংবাদ

যশোর বোর্ডের হিসাব থেকে আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন : জালিয়াতির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিদপ্তরে : বর্তমানে ভোক্তায় অভিযোগ ২২ হাজার, ৩ মাসে অভিযোগ বেড়েছে ৯ হাজার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রতিনিয়ত আসছে ই-কমার্স নিয়ে নতুন নতুন অভিযোগ। ইতোমধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরে ২২ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। সম্প্রতি ই-কমার্স নিয়ে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অভিযোগের সংখ্যা। এসব অভিযোগের প্রায় ৯০ শতাংশ অভিযোগ রাজধানীকেন্দ্রিক। গত তিন মাসে প্রায় ৯ হাজার অভিযোগ বেড়েছে ভোক্তা অধিদপ্তরে। আর অভিযোগ বাড়ার কারণে গতি কমেছে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে। ভোক্তা অধিকারের সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানা গেছে।
ভোক্তা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসে গ্রাহকরা অভিযোগ এনেছিলেন ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১টি। অভিযোগের বেশির ভাগই ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। এসব ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বাইরে অসংখ্য ফেসবুক পেজও রয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লাফিয়ে বেড়েছে অভিযোগের সংখ্যা। সেপ্টেম্বর শেষে এ অভিযোগের সংখ্যা দেখা যায় প্রায় ২২ হাজার। এর আগে অর্থাৎ তিন মাস আগে এ সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার। জুন পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে ইভ্যালি, দারাজ, সহজ, আজকের ডিল, ফুডপান্ডা, চালডাল, প্রিয়শপ, ফাল্গুনী, অথবা, উবার, পাঠাও, বিক্রয়, নিরাপদ, ই-অরেঞ্জ, রকমারি, ধামাকা শপিং, আদিয়ান মার্ট ও আলেশা মার্ট। সেপ্টেম্বরে তালিকায় যোগ হয় আরো ২৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম। এগুলো হলো- মনোহর, দালাল প্লাস, কিউকম, পিকাবু, পাফজি, আলাদিনের প্রদীপ, মীনা ক্লিক, বাবুই, ব্যাকপ্যাক, আলি টু বিডি, সেলমার্ট, গ্যাজেট মার্ট, বিডিটিকেটস, সাবু শপ, আমারি, শপআপ, সিরাজগঞ্জ শপ, কমপ্লেক্স ডটকম, রাজারহাট, বিডিশপ, চাহিদা ইশপ, আনন্দের বাজার ও বুমবুম।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ অভিযোগ এসেছে ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর তিন বছরও পেরোয়নি, জমা হয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। গত তিন মাসেই অভিযোগ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবে গত তিন মাসে অভিযোগের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। মাঝে এক সপ্তাহেই অভিযোগ এসেছে ২ হাজার ৬০০টির মতো। ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করা ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গত তিন মাসে অভিযোগ বেড়েছে প্রায় ৯৯ গুণ। তবে শেষ তিন মাসে তালিকায় যুক্ত হওয়া ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কোনোটির বিরুদ্ধেই অভিযোগ ৫০টির বেশি নয়।
ভোক্তা অধিকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সবাই যে প্রতারণা করছেন তা নয়। অনেকের সৎভাবে ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে। কারো কারো জন্য অন্যদের বদনাম হচ্ছে। অনেক সময় অভিযোগ আসছে, কিন্তু ভোক্তাদের কাছে এর প্রমাণ নেই। দারাজ, চালডালের ভোক্তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা গেছে। তারা ভোক্তা অধিকারে নিজেরাই এসে সমস্যা জেনে তা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মোট অভিযোগ পড়েছে প্রায় সাড়ে ৫৬ হাজার। এর মধ্যে শুধু ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগ প্রায় ২২ হাজার অর্থাৎ মোট অভিযোগের ৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রায় ৯০

শতাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগের ৯৫ শতাংশ মোটরসাইকেল ক্রয়সংক্রান্ত। ফেসবুক পেজ খুলে অনেকেই অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করেন। এ ধরনের ফেসবুক পেজের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগও কম নয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, শুধু জুন পর্যন্তই এসব পেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ৪ হাজার ৪১৩টি। নিষ্পত্তি হয় ৪ হাজারটি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযুক্ত পেজের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৯৫টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৪ হাজার ৪০৩টি।
ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ফেসবুকে পেজ খুললেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে। ভুয়া পেজেও পণ্য বিক্রির অভিযোগ আছে। অভিযানের সময় সেসবের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পেজে দেয়া নম্বরও ভুল। পণ্য বিক্রিতে ফেসবুকের এ পেজগুলো ব্যবহারকারীরা বুস্ট (টাকার বিনিময়ে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানো) করেন। এভাবে ফলোয়ার (অনুসারি) বাড়ে। একজনের প্রায় ১২ লাখ পর্যন্ত ফলোয়ার রয়েছে। এমন পেজকে মানুষ সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে। এদের ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং নম্বর না থাকায় চিহ্নিত করতে সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তা নিতে হয়।
অভিযোগ বেড়ে যাওয়ায় গতি কমেছে নিষ্পত্তিতে। বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের অভিযোগ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় নিষ্পপ্তি করতে সময় লাগছে বেশি। জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত অভিযোগের ৮৬ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ হার এসে ঠেকেছে ৫৮ শতাংশে। এ সময় পর্যন্ত মোট অভিযোগের ১২ হাজার ৫৫০টি নিষ্পত্তি হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়