ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিদপ্তরে : বর্তমানে ভোক্তায় অভিযোগ ২২ হাজার, ৩ মাসে অভিযোগ বেড়েছে ৯ হাজার

আগের সংবাদ

মিলছে টিকা, করোনায় স্বস্তি : তবুও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত

পরের সংবাদ

ভুয়া ডাক্তার আটক : ভুল চিকিৎসায় শিশুর হারানো পায়ের মূল্য লাখ টাকা!

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি : গ্রাম্য সালিশেই নির্ধারিত হলো কেরানীগঞ্জে আলোচিত কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় পা হারানো শিশুর ভবিষ্যৎ! কোনো মামলা-মোকদ্দমা না করার শর্তে স্থানীয় প্রভাবশালীরা শিশুর ডান পায়ের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন মাত্র এক লাখ টাকা। গৃহহীন অসহায় পরিবারটি যেখানে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তাদের একমাত্র ছেলে সন্তানটিকে ঘিরে, সেখানে কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় সব স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেল। এক মাস বয়সি ফুটফুটে ছেলে অনিক এখন যেন তাদের দীর্ঘশ্বাস। কী হবে ছেলের ভবিষ্যৎ? কীভাবে পাড়ি দিবে জীবনের দীর্ঘপথ? ছেলেইবা করবে কী ভবিষ্যতে? নানা চিন্তায় এক দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে সীমা-আবুল বাসার দম্পতি।
ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আব্দল্লাহপুর কলাকান্দি মধ্যপাড়া এলাকায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর সীমা-বাসার দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় শিশুপুত্র অনিক। জন্মের পর থেকেই শিশুটির কান্নাকাটি না কমায় জন্মের ষষ্ঠ দিন চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে স্থানীয় কবিরাজ ও কথিত ডাক্তার কিশোর দেবের কাছে নিয়ে যান তার মা-বাবা। সেখানে কবিরাজ শিশুটিকে ঝাড়ফুঁকের পাশাপাশি একটি ট্রাইজন নামক ইনজেকশন পুশ করেন। শিশুটিকে বাসায় নিয়ে এলে কান্না না থামায় দ্বিতীয় দিন আবারো সেই কবিরাজের কাছে নিয়ে গেলে সেই দিনও আরো একটি ইনজেকশন পুশ করেন কবিরাজ।
এতে শিশুর পা ফুলে গেলে কবিরাজ নিজেই প্রথমে শিশুটিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে শিশু অনিকের অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার শিশুটিকে ভর্তি করাতে না পেরে বাংলাদেশ স্পেশালাইড হাসপাতালে ভর্তি করান। তবে সেখানে আইসিও না থাকায় ধানমন্ডিতে মাদার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসক জানান শিশু অনিকের ডান পায়ের হাড়ে পচন ধরেছে। এখন তার পা কাটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। অবশেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শিশুটির পা কেটে ফেলা হয়।
ছেলে অনিকের পা কাটার ২৩ দিন পর নির্মম ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রচার হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে। থানার ওসি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যন্ত সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন পরিবারটিকে। তবে এর পরই পাল্টে যায় সব চিত্র। কবিরাজ ও কথিত ডাক্তারকে বাঁচাতে নড়েচড়ে বসেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। স্থানীয় খবির মেম্বার, তাইজুল ইসলাম, বাতেন, জাহাঙ্গীরসহ কিছু প্রভাবশালী মাতুব্বর মিলে ১ লাখ টাকায় মীমাংসা করে দেন ঘটনাটি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন কোনো দাবি দাওয়া না করতে পারে সে জন্য ভুক্তভোগী অনিকের বাবা-মার স্বাক্ষর নেয়া হয় সাদা স্ট্যাম্পে।
শিশুর বাবা আবুল বাসার অভিযোগ করে বলেন, কবিরাজ না বলে ইনজেকশন পুশ করার কারণে আমার আদরের ধন আজ পঙ্গু। আমার ছেলের মতো কোনো মানুষ যেন হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে না যায় আর কোনো শিশুর পা হারাতে না হয়। এক লাখ টাকার বিনিময়ে কেনো আপোস করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকায় বসবাস করতে হবে, আমরা গরিব মানুষ, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা থাকতে পারব না। তবে আমি টাকা নয় ছেলের অঙ্গহানির বিচার চাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির জানান, সংবাদ প্রকাশের পরপরই পুলিশ আসামিকে আটক করতে অভিযানে নামে। পুলিশের দুদিনের অক্লান্ত চেষ্টায় আসামি দেব কিশোর সরকারকে আটক করতে সক্ষম হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কবিরাজ ও কথিত ডাক্তার দেব কিশোর সরকার পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়