মাহফুজুর রহমানকে অভিনন্দন আইডিইবি নেতাদের

আগের সংবাদ

বন্যায় তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন : তলিয়ে গেছে রৌমারীর ৩০ হেক্টর ফসলি জমি; বিপদসীমার ৬০ সেমি উপরে যমুনার পানি; খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

পরের সংবাদ

যে কারণে চাল আমদানি : রেকর্ড উৎপাদনের সুফল নেই, বাজার ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : দেশে চাল উৎপাদন ও চাহিদার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে উৎপাদনে রেকর্ড। কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় তা মানছে না। সরকারি আরেক প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মৌসুমের আরো দীর্ঘদিন পরে দিচ্ছে আরেক রকম তথ্য। সব মিলে চালের সঠিক পরিসংখ্যান মিলছে না। কাগুজে এসব পরিসংখ্যানের কারণে বাজারে তৈরি হয় অস্থিরতা। যার খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তারা। আর ভোক্তা বাঁচাতে সরকারি-বেসরকারি খাতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয় সরকারকে। চালের বাজারের এই অস্থিরতা দূর এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বশেষ বেসরকারি খাতে ধাপে ধাপে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। সঠিক সময়ে ধান-চাল সংগ্রহ করতে না পারা, বাজারের অব্যবস্থাপনা, মিলারদের কারসাজি, তথ্যের বড় ঘাটতির কারণেই মূলত এমন অস্থিরতা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এসব তথ্য।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। বোরো উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৮ টন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এছাড়া বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলনের পরিমাণও বেড়েছে। গত বছর দেশে বোরো ধানের জাতীয় গড় ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৯৭ টন। এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৯ টনে। অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ৩২ টন, যা গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক শূন্য শতাংশ বেশি। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই তথ্য সঠিক নয়। কারণ হিসেবে সরকারি সংস্থাটি বলছে, দেশে মানুষ বেড়েছে। সেই সঙ্গে চালের কনজুম বেড়েছে। সারাদেশে অটো এবং হাসকিং মিলে ২০ হাজার মিলার রয়েছে। কারসাজিতো আর সবাই করে না। হয়তো কিছু অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করে কারসাজি করে। কিন্তু তা নির্ধারিত সময়ের পরে দাম কমে যাওয়ার কথা। এবার দীর্ঘদিন ধরে চালের দাম বেড়েই চলেছে। এর কারণ হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয় তথ্যের ঘাটতিকে দায়ী করছে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাজমানারা খানুম ভোরের

কাগজকে বলেন, কৃষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। কারণ করোনাকালে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা সমস্যায় পড়েছেন। এজন্য সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। রেকর্ড উৎপাদনের পরও কেন আমদানি করতে হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালের সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। কারণ একেক সংস্থা একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় এক পরিসংখ্যান দিচ্ছে, পরিসংখ্যান ব্যুরো দিচ্ছে আরেক পরিসংখ্যান। গবেষণা সংস্থা আরেক ধরনের পরিসংখ্যান দিচ্ছে। সব মিলে তিন ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে।
সঠিক পরিসংখ্যান থাকলে চালের বাজার এমন হতো না- মন্তব্য করে তিনি বলেন, সারাদেশে ২০ হাজার মিলার রয়েছেন। সবাইতো কারসাজি করবে না। কারণ কারসাজি করে কিছু লোক। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জোগান থাকলে বাজারে দাম স্বাভাাবিক থাকার কথা। মূল বিষয় হলো- সঠিক পরিসংখ্যান না থাকার কারণে বাজারে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আর ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনা করে আমরা আমদানির অনুমতি দিয়েছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার দায়িত্ব ঠিক সময়ে সঠিকভাবে পালন করলে দেশে চাল সংকটের সুযোগ তৈরি হতো না। ধান উৎপাদন নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলনে ভুল ছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয় উৎপাদন খরচের চেয়ে ধান ও চালের দাম কম ধরায় সরকার খাদ্য সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়। অথচ সে সময় খোলা বাজারে ধানের দাম ছিল বাড়তি। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল দিতে রাজি হয়নি মিলাররা। সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকেও কেনার উদ্যোগ নেয়নি।
এ পরিস্থিতিতে চাল সংকটের পূর্বাভাস পায় সরকার। চাহিদা মেটাতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই চাল আমদানির সবুজ সংকেত দেয়া হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ক লিয়াজোঁ পদক্ষেপে অনেক বিলম্ব ঘটে। আর চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে তদারকি দুর্বলতার অভিযোগ তো আছেই। আবার আমদানির নিবন্ধন নিয়েও আমদানিকারকদের চাল আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ রয়েছে। সব মিলে রেকর্ড উৎপাদনেও দিতে হলো আমদানির অনুমতি।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের চাল আমদানির অনুমতি ইতিবাচক। কারণ বর্তমানে সরকার বেসরকারি খাতে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। যা ১৫-২০ দিনের জোগান। আর এই মুহূর্তে সরকারের ১৫ লাখ টন চালের মজুত রয়েছে। করোনাকালে সরকার ওএমএসের কার্যক্রম বাড়িয়েছে। যার কারণে প্রতিদিন আগের তুলনায় বেশি চালের প্রয়োজন হয়। করোনাকালে ওএমএস কার্যক্রম আরো বাড়ানো উচিত। যাতে নিম্ন আয়ের মানুষদের সুবিধা হয়। তবে বাজারে ব্যবস্থাপনাগত একটা দুর্বলতা রয়েছে। এর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, চালের বাজারের অস্থিরতা দূর করতে সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
মিলাররা বলছেন, বিদায়ী বোরো মৌসুমে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৯ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখনকার সময়ে বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।
চাল সংগ্রহের বিষয়ে অটো রাইসমিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খুরশীদ আলম খান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার ধান-চাল সংগ্রহের যে দাম নির্ধারণ করেছিল, তা বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম। যার কারণে কৃষক সরকারকে চাল দিতে আগ্রহী হয়নি। চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলেই মিলারদের দায়ী করা হয়। আমরা বারবার বলে আসছি, ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। উৎপাদন খরচ কমলে কৃষকও লাভবান হবে, ভোক্তাও কম দামে চাল কিনতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়