ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও রাসেল রিমান্ডে

আগের সংবাদ

যাত্রীসেবার মান তলানিতে : সড়ক আইন প্রয়োগে উদাসীনতা > নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ কর্তৃপক্ষের

পরের সংবাদ

চলে গেলেন ‘মাধুকরী’র স্রষ্টা কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কখনো ‘মাধুকরী’, কখনো ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’, কখনো ‘জল মঙ্গল’ আবার কখনো ‘জলছবি’র মধ্যে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ডুবিয়েছেন-ভাসিয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ। অন্য রকম চিত্রকল্প এঁকেছেন পাঠক হৃদয়ের গহিনে। তাকে বেঁধে রেখেছেন রূপময় জাদুর ভুবনে। কখনো তাকে ছেড়ে যায়নি পাঠক। তবে সবাইকে ছেড়ে এবার চলে গেলেন স্রষ্টা নিজেই। দুই বাংলার ভক্তকুলকে কাঁদিয়ে চির না ফেরার দেশে ঠাঁই নিলেন বাংলা কথাসাহিত্যের শক্তিশালী স্তম্ভ সাহিত্যসম্রাট বুদ্ধদেব গুহ।
করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেলেও করোনা-উত্তর স্বাস্থ্যগত জটিলতায় মৃত্যুর কাছে হার মানলেন বাংলা কথাসাহিত্যের এই বরপুত্র। গণমাধ্যমের খবর, দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে গত রবিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। গত ৩১ জুলাই থেকে প্রায় মাসব্যাপী সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৮৫ বছর বয়সি এই প্রতিভাধর লেখক। এদিকে দুই বাংলার জনপ্রিয় এ কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুতে উভয় বঙ্গের সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখককে স্মরণ করে ভক্তরা স্মৃতিচারণমূলক নানা পোস্ট দিচ্ছেন। প্রিয় লেখকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।
বুদ্ধদেব গুহ ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন জন্ম নেন অবিভক্ত বাংলার কলকাতায়। তবে তার শৈশবের একটি বড় অংশ কেটেছে বাংলাদেশের বরিশাল ও রংপুরে। পড়াশোনা করেছেন বরিশাল জেলা স্কুলেও। এপার বাংলার বিচিত্র অভিজ্ঞতা তার নানা লেখায় এসেছে বারবার। অসাধারণ লেখন শৈলী আর স্বকীয় দৃশ্যকল্প দিয়ে তিনি সমকালীন বাংলা সাহিত্যে নিজের জন্য বিশেষ জায়গা গড়ে তোলেন। তার লেখার পরতে পরতে রয়েছে অরণ্য, প্রকৃতি আর প্রেমের জয়গান। সুধীজনের মত, ‘মাধুকরী’ আর ‘সবিনয় নিবেদন’ এর মতো উপন্যাস তাকে খ্যাতির চূড়ায় তুলে দেয়।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। শোকবার্তায় মমতা বলেন, বুদ্ধদেব গুহের প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বুদ্ধদেব গুহের স্ত্রী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ঋতু গুহ ২০১১ সালেই মারা গেছেন। বর্তমানে তাদের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মালেনি বি গুহ। তিনিই সবার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবার মৃত্যুসংবাদ জানান। এতে তিনি বলেন, বুদ্ধদেব গুহ আর নেই। ২০২১ সালের জন্মষ্টমীর রাতে ভগবান তাকে ফিরিয়ে নিলেন। গত এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হলে বুদ্ধদেব গুহ কলকাতার একটি

হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। পরে তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ৩৩ দিনের লড়াই শেষে ভাইরাসমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। তবে করোনাপরবর্তী জটিলতার কারণে গত ৩১ জুলাই তাকে দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা বুদ্ধদেব গুহ পেশায় ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। ধ্রæপদী সংগীত আর ছবি আঁকাতেও তার দক্ষতা ছিল। ইউরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া আর পূর্ব আফ্রিকার বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। পূর্ব ভারতের বন আর আরণ্যক জীবন দেখেছেন খুব কাছ থেকে। সেই জীবনের ঘন ছায়া দৃশ্যমান তার লেখার ছত্রে ছত্রে। তার প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ ‘জঙ্গল মহল’। এরপর ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘অববাহিকা’, ‘বাবলি’, ‘বাসনাকুসুম’, ‘পরিযায়ী’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘খেলা ঘর’, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘জলছবি’র মতো বহু জনপ্রিয় উপন্যাস বেরিয়ে এসেছে তার হাত থেকে। পাশাপাশি কিশোর সাহিত্যেও ছিল তার অবাধ বিচরণ। বহু কিশোর-কিশোরীর কাছে এখনো প্রিয় তার অমর সৃষ্টি ‘ঋজুদা’ বা ‘ঋভু’ চরিত্র। আনন্দ পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ। তার লেখা ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’র ওপর ভিত্তি করে পুরস্কারজয়ী বাংলা চলচ্চিত্র ‘ডিকশনারি’ নির্মিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়