ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও রাসেল রিমান্ডে

আগের সংবাদ

যাত্রীসেবার মান তলানিতে : সড়ক আইন প্রয়োগে উদাসীনতা > নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ কর্তৃপক্ষের

পরের সংবাদ

কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জে পরিস্থিতির অবনতি : নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অর্ধ লাখ মানুষ। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জেলার নদী অববাহিকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে সার্বিক বন্যা

পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এসব নিচু এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সোমবার সকালে ধরলার পানি ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ ও ব্রক্ষপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়া তিস্তা দুধকুমারসহ জেলার সব কটি নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁইছুুঁই করছে। নিচু চরের পানিবন্দি মানুষ অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এসব এলাকার কাঁচা রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির আমনক্ষেত, ২৭০ হেক্টর সবজি ও ৯৫ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে সদর উপজেলার হোলখানার সারডোব কালুয়ারচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ধরলা নদীর পানি বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করায় বেশ কিছু আমনক্ষেত বাঁধের ভেতর জলমগ্ন হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের জন্য ১২ লাখ টাকা ও ২৮০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ২৬.৮৪ সেন্টিমিটার, ব্রক্ষপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৩.৯৩ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি ২৯.০৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬.১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সিরাজগঞ্জ : টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি আরো বেড়েছে। বর্তমানে পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদী ও চলনবিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা ও গো-খামারিরা। পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য জেলা শহর ও ৫টি উপজেলায় মজুত রাখা হয়েছে ১৭৬ টন চাল ও সাড়ে ৭ লাখ নগদ টাকা।
পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই সিরাজগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন অব্যাহত থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। ভাঙন আতঙ্কে তীরবর্তী বাসিন্দারা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের গেজ মিটার পরিমাপক আব্দুল লতিফ জানান, শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ১৪ আগস্ট থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নদী তীরবর্তী আরো কিছু নিচু এলাকা ও চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমনক্ষেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজি বাগানসহ বিভিন্ন ফসল।
প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি আরো বাড়তে পারে। সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় ১৩৯ টন চাল ও এক লাখ করে নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা সেটা তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় বিতরণ করবেন।
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মার পানি কমতে শুরু করলেও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। একই সঙ্গে নদীভাঙন নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পদ্মার পানি কমলেও এখনো শিবগঞ্জ উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত হয়ে আছে। দুর্ভোগে রয়েছেন এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষ।
পানি কমতে শুরু করায় স্থানীয়দের মধ্যে নদীভাঙন নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পদ্মায় পানি কমছে। পানি কমার সময় নদীভাঙন অনেকটাই স্বাভাবিক।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়ন বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দুর্লভপুর ও উজিরপুর ইউনিয়নের কৃৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নদী তীরের বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক দিন ধরে পানি কমছে। আবার যে বাড়বে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পানি নদী পাড়ের নিচে নামলে আবার ভাঙন দেখা দেবে।
এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, শিবগঞ্জ উপজেলায় আনুমানিক ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে পাকা ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্লভপুর ও উজিরপুর ইউনিয়ন। এসব এলাকায় আউশ ধান, শাকসবজি আর মসলাজাতীয় ফসলের জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন জানান, পদ্মার নদীর পানি দ্রুত কমছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের আশঙ্কা আছে। আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। এর আগে যে কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল এখন সেখানে আর ভাঙছে না। আমরা বালুর বস্তা ফেলছি।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন টিম এসেছিল। তারা নদীর গতিপ্রকৃতি ও ভাঙনের বিষয়গুলো দেখে গেছে। তারা নদী তীর সংরক্ষণের জন্য কী করা উচিত- এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিলে সে আলোকেই আগামীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়