প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

সহিংস হয়ে ওঠা নারী জঙ্গি নাবিলা গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তার নাম জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা। জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি ইউনিট।
ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে- এমন এক পুরুষ জঙ্গির সন্ধানে নেমে সিটিটিসির সামনে এ তরুণীর তথ্য উঠে আসে। এর আগেও সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে অনেক নারী গ্রেপ্তার হলেও এ তরুণী ব্যতিক্রম। আনসার আল ইসলামের তিনি প্রথম কোনো নারী জঙ্গি যিনি অনলাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সর্বোচ্চ সহিংস হয়ে উঠেছিলেন। কোনো কর্মকাণ্ড ঘটানোর আগেই দীর্ঘ দেড় মাসের প্রচেষ্টায় গত বৃহস্পতিবার তাকে আটক করা সম্ভব হয়।
ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, গত বছরের শুরুর দিকে নাম পরিচয় গোপন করে করে ছদ্মনামে একটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন এ তরুণী। একসময় আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ তিতুমীর মিডিয়ার খোঁজ পান তিনি। তখন থেকেই এই পেজে যুক্ত হন। একপর্যায়ে পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় তার। এরপর থেকেই অ্যাডমিন তাকে উগ্রবাদী জিহাদি কনটেন্টের লিংক পাঠানো শুরু করে। আর এসব লিংকে প্রবেশ করে তাদের উগ্রবাদী মতাদর্শকে কঠোরভাবে লালন শুরু করেন। পরবর্তীতে মতাদর্শকে সবার সঙ্গে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেয়। এরই ফলে গ্রেপ্তারকৃত নাবিলা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও চার্পওয়্যার নামক অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলেন। তিনি আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে টেলিগ্রাম মাধ্যম ব্যবহার করতেন। টেলিগ্রামে তার ৪টি অ্যাকাউন্ট ও সেই টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৫টির বেশি চ্যানেল তিনি চালাতেন। এসব চ্যানেলে তিনি আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করতেন। তার সবগুলো টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যারা নিয়মিত তার চ্যানেলগুলো অনুসরণ করেন। জিহাদ কেন প্রয়োজন, কিতাবুল জিহাদ, একাকি শিকারি লোন উলফ, স্লিপার সেলগুলোতে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের উপায়, নীরবে হত্যার কৌশল, পুলিশ শরিয়তের শত্রæ, আল আনসার ম্যাগাজিন ইস্যু, জিহাদের সাধারণ দিক নির্দেশনা, তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা ইত্যাদি উগ্রবাদী বই বিভিন্ন সময়ে নাবিলার টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো থেকে প্রকাশ করা হতো বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। আসাদুজ্জামান বলেন, নাবিলা আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল চ্যানেলেও যুক্ত ছিলেন। সেসব চ্যানেলে আইইডি, স্মোক বম্ব, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা ও বিভিন্ন হামলার কৌশলগত বিষয় নিয়ে ভিডিও এবং ফাইল শেয়ার করতেন তিনি। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নাবিলা জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেন।
তাকে ছাড়া আনসার আল ইসলামের আর কোনো নারী সদস্যের সন্ধান পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এ বিষয়ে তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তিনি আনসার আল ইসলামের যে গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, সেইসব লোকজনের নাম আমরা জানার চেষ্টা করছি। তবে এই মুহূর্তে এই বিষয়ে বিস্তারিত আমরা বলতে চাইছি না। নাবিলার টেলিগ্রাম চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারদের মধ্যে কোনো নারী আছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সাবস্ক্রাইবার কোনো নারী থাকতে পারে। আমরা মূলত তরুণদের টার্গেটিংয়ের বিষয়ে অনুসন্ধান করছি। তার জঙ্গিবাদে জড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা কী ছিল জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নাবিলার বাড়ি ভোলার লালমোহনে। পরিবার চেষ্টা করেছিল তাকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে। কিন্তু পারেনি। এমনকি সম্প্রতি তাকে বিয়ে দিয়ে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে পরিবার। তবে সে ছেলেপক্ষকে জানায়, জিহাদের ময়দানে ডাক এলে সে সামনের সারিতে থাকবে। এমনকি শহিদি মৃত্যু এলেও সে পিছু হটবে না। তার মতাদর্শের না হলে বিয়ে সম্ভব নয়। একসময় পরিবারের অমতে তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে বেরিয়ে পড়েন। জিহাদ করার প্রচেষ্টা কোথায় ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোনো জায়গায়, যে কোনো দেশে জিহাদ করার প্রস্তুতি ছিল তাদের। নাবিলার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছে। আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও জানান আসাদুজ্জামান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়