প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

ফসলি জমিতে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষে ঝুঁকছে কৃষক

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মনসুর আলী, ঠাকুরগাঁও থেকে : ফসলি জমি কেটে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক কৃষক। অবাধে ফসলি জমিতে পুকুর খননের ফলে ক্রমাগত কৃষিজমি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। অন্যদিকে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ইটভাটার মালিক তাদের প্রয়োজনমতো মাটি কেটে ভাটায় নিচ্ছেন। বেশি লাভের আশায় পুকুর খনন করলেও এর নেতিবাচক প্রভাবেরও সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চলছে ফসলি জমি খননের মহোৎসব। সব চেয়ে বেশি দেখা গেছে সদর উপজেলার ভেলাজান, চিলারং, জগন্নাথপুর ও গাঙ্গর এলাকায়। উপজেলাগুলোর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী এলাকার কালমেঘ, হরিণমারি, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈলসহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাগুলোতে সর্বত্র খনন করা হচ্ছে পুকুর। সদর উপজেলার গাঙ্গর এলাকার কৃষক আব্দুল আওয়াল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিন ফসলি জমিতে ধান ও সবজি উৎপাদন করতেন তার ৫ একর জমিতে। কিন্তু এবার ওই জমিনে পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেছেন। অন্যদিকে বাজারে দাম না পাওয়ায় ৫ বছর আগে ধানের আবাদ বাদ দিয়েছেন জানিয়ে সদর উপজেলার ভেলাজান এলাকার মৎস্যচাষি আব্দুল গফুর বলেন, যেসব জমিতে আগে রবিশস্য আবাদ করতাম সে জমিতে এখন মাছ চাষ করছি। অল্প জায়গায় ধানের লাভ হয় কম। আবার ধান উৎপাদন, মাড়াই খরচসহ শ্রমিকদের টাকা দিতে গিয়ে নিজের আর কিছুই থাকে না। পুকুর মালিক ওই এলাকার মৎস্যচাষি আব্দুল হাই, মানিক, জলিলসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে জানান, উৎপাদিত ধান বাজারে ও পাইকারি দরে বিক্রি করতে গেলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে ধানের প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই গেল কয়েক বছর থেকে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ জেলায় ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ১১১ হেক্টর। তা বর্তমানে কমে এসে (২০২১ সাল) দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০৩ হেক্টরে। গত ১০ বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে মাছ চাষে পুকুর খনন হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। যে কেউ চাইলে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবু হোসেন। তিনি বলেন, কেউ যদি ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে চায় এটা অবশ্যই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে। ফসলি জমিতে যেসব পুকুর খনন করা হয়েছে তা তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি বিভাগের শীর্ষ এ কর্মকর্তা বলেন, এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী জমির মালিক কৃষকদের ফুসলিয়ে তাদের কাছ থেকে জমি লিজ (চুক্তি) নেন। পরে তারা জমির উপরিভাগের গুরুত্বপূর্ণ টপ সয়েল (কৃষি মাটি) ৬ ইঞ্চি করে তুলে নেয়। এ টপ সয়েলের কারণে পরবর্তীতে ওই জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং এটা পূরণ করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
ঠাকুরগাঁও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালিদুজ্জামান বলেন, নিচু জলাবদ্ধ জমিতে পুকুর খনন করে প্রকল্পের মাধ্যমে প্রযুক্তিভিত্তিক মাছ চাষ করছে মৎস্য চাষিরা। জেলায় পুকুর সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৬০টি। এ সংখ্যক পুকুরের আয়তন ৫ হাজার ৩০৩ দশমিক ৭ হেক্টর। জেলায় পুকুর সংখ্যা ও আয়তনের বিবেচনায় প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার সরকারি জলাশয়ে হরিপুর ও পীরগঞ্জে ১২টি পুকুর খনন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়