জাসদের পাল্টা প্রশ্ন : ১৫ আগস্ট সেলিম মার্কিন দূতাবাসে কী করছিলেন

আগের সংবাদ

কারা এই আইএস-কে? আফগানিস্তানে সক্রিয় নৃশংসতম জঙ্গিগোষ্ঠীর কাবুলে হামলার দায় স্বীকার

পরের সংবাদ

দীর্ঘ হচ্ছে টিসিবির পণ্য বিক্রির লাইন : বিক্রির পরিধি আরো বাড়ানোর আহ্বান

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। টিসিবির ট্রাক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষের লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। আগে শুধু নিম্নবিত্তের লোকজনকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে দেখা গেলেও মধ্যবিত্তের অংশগ্রহণে টিসিবির ট্রাক সেলের লাইনগুলো দীর্ঘ হচ্ছে।
আগে এই লাইন তেমন চোখে পড়ার মতো না থাকলেও করোনা মহামারির কারণে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশের আয় কমে যাওয়ায়, কাজের সুযোগ সীমিত হওয়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে টিসিবির পণ্য কেনার লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, টিসিবি পণ্য বিক্রির পরিধি আরো বিস্তৃত করা এবং বছরব্যাপী এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অধিক সংখ্যক জনসাধারণকে সেবা দিতে সরকারের টিসিবির ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া দরকার। যাতে করে একজন স্বল্প আয়ের মানুষ সুলভমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, চিনি ও তেল সংগ্রহ করতে পারেন।
নগরীর আন্দরকিল্লা, জামালখান, বহদ্দারহাট এলাকায় টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে দেখা যায়, কম মূল্যে পণ্য নিতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে, আবার কখনো হালকা-মাঝারি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইনে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
নিম্নবিত্ত মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মানুষকেও এসব লাইনে থাকতে দেখা যায়। সিরাজুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে আগে কখনো জিনিসপত্র কিনিনি। এখন করোনার কারণে আয়-রোজগার কমে গেছে। সাধারণ দোকানে জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে টিসিবির পণ্য কেনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় সময় এখান থেকে পণ্য কিনি।
আন্দরকিল্লায় পূরবী দাশ নামে আরেক ক্রেতা ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কারণে স্বামীর চাকরি নেই। মাঝে মাঝে কাজ পেলে করি। জমানো টাকা প্রায় শেষ। আমিও আগে মানুষের বাসা-বাড়িতে গিয়ে কাজ করতাম। এখন সেই কাজও নেই, আয়ও কমে গেছে। তাই কম দামে পণ্য কিনতে এখানে এসেছি। কয়েক টাকা সাশ্রয় হলে পরিবারের ওপর চাপ কমবে।
অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির কারণে মধ্যবিত্ত অংশের মানুষের আয় কমে গেছে। অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়া কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে এবং অল্প বেতনে কাজ করছেন এমন জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই তাদের পরিবারের ব্যয় বহনে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। এসব কারণে টিসিবি ট্রাক সেলের লাইনগুলো দীর্ঘ হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া- এটি করোনা মহামারির প্রভাব। মহামারি যাওয়ার পরে হয়তো ভিড় আস্তে আস্তে কমে আসবে।

ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কারণে মানুষের আয়ও কমে গেছে, ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। টিসিবির পণ্য কিনতে অনেক মধ্যবিত্ত মানুষকে ঘণ্টার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি। লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের টিসিবিকে আরো শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা জরুরি। টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, টিসিবি পণ্য বিক্রির পরিধি আরো বিস্তৃত করা জরুরি। পাশপাশি এই কার্যক্রম বছরব্যাপী অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এছাড়া টিসিবির যে ট্রাক সেল এজেন্টগুলো রয়েছেন, সেখানে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি যাতে না হয় সেদিকেও নজরদারি বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি আড়তদার, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট যাতে অধিক মুনাফার জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। সরকার ও টিসিবির উচিত বাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
টিসিবি চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্র জানায়, নগরীর ১৮টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ১৮টি ট্রাকের প্রতি ট্রাকে ৪০০ কেজি মসুর ডাল, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৮০০ লিটার সয়াবিন তেলসহ মোট ১৭০০ কেজি বরাদ্দ দেয়া হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ১৩টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। যা আগে রমজানের সময় ৪৩টি ট্রাকে করে বিক্রি করা হয়েছিল। টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান জামাল উদ্দিন বলেন, নগরীর ১৮টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে কমপক্ষে ১৬০০ থেকে ১৮০০ কেজি পণ্য দেয়া হয়। তবে রমজানে ২৫০০ থেকে ৩০০০ কেজি পর্যন্ত পণ্য দেয়া হতো। তিনি বলেন, আগে পণ্য নিতে মানুষের লাইন দীর্ঘ না থাকলেও বছর খানেক যাবত টিসিবির পণ্য নিতে উপচে পড়া ভিড় থাকে। আর পণ্যের মজুতও পর্যাপ্ত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়