ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

সরকার গঠনে আলোচনায় ৮ নেতা > কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ : নিহত ১৩, বহু হতাহত, সন্দেহে আইএস

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : আফগানিস্তানে একটি তালেবান নিয়ন্ত্রিত সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় ধীরলয়ে হলেও অগ্রগতি হচ্ছে প্রতিদিন। গতকাল মোল্লা আবদুল কাইউম জাকির নামে প্রবীণ তালেবান নেতাকে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ এই মোল্লা জাকির দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বের কারাগারে বন্দি ছিলেন।
অন্যদিকে কাবুল বিমানবন্দরে গতকাল ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নিহত ও অসংখ্য লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও হামলার পেছনে আইএসের হাত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিমানবন্দরে হামলা হতে পারে- এমন আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার গঠনে সতর্ক পদক্ষেপে অগ্রসর হচ্ছে তালেবানরা। যাতে ফের ১৯৯০-এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এজন্য তারা চাইছে উজবেক, তাজিক এবং হাজারা স¤প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা স্থায়ী সরকার গড়ে উঠুক দেশে। সরকার গঠনে ৮ নেতার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে তারা, তাদের মধ্যে রয়েছেন, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, হামিদ কারজাই, আবদুল্লা আবদুল্লা, আব্দুল রশিদ দোস্তাম, আমরুল্লা সালেহ, আহমদ মাসুদ, আতা মহম্মদ নুর এবং মহম্মদ করিম খলিলি। এদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনাও শুরু করেছে

তারা। এদের মধ্যে গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী; হিজব-এ-ইসলামি দলের নেতা। আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গির তালিকায় ছিলেন তিনি। হামিদ কারজাই দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। পেশায় চিকিৎসক তাজিক নেতা আবদুল্লা আবদুল্লা ছিলেন নর্দার্ন অ্যালায়েন্স প্রধান আহমদ শাহ মাসুদের উপদেষ্টা। এছাড়া আব্দুল রশিদ দোস্তাম উজবেক নেতা এবং আফগানিস্তানের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৬-২০০১ নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তিনি। আমরুল্লা সালেহ ছিলেন আশরফ গনি সরকারের গোয়েন্দা প্রধান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। আহমদ মাসুদ হচ্ছেন নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রধান। এছাড়া রয়েছেন হাজারা সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী নেতা মহম্মদ করিম খলিলি এবং বলখ প্রদেশের সাবেক গভর্নর আতা মহম্মদ নুর।
এদিকে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে শিগগিরই পানশির উপত্যকায় মাসুদ বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে যাচ্ছে তালেবানরা। ৯ হাজারের বেশি যোদ্ধা নিয়ে সেখানে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান নেতৃত্ব বারবার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না পানশির। ফরাসি গণমাধ্যমে অ্যালায়েন্স নেতা আহমেদ মাসুদ গর্বোদ্ধত কণ্ঠে বলেন, আহমেদ মাসুদের ছেলে আমি। তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না। তিনি এ সময় তালেবান ঠেকাতে পশ্চিমা শক্তিগুলোকে তার পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গনি সরকারের অনুগত কয়েক শ’ সেনা বিগত কয়েকদিনে নর্দার্ন অ্যালায়ান্সে যোগ দিয়েছে। তালেবানরা কাবুল দখল নেয়ার পরপরই পানশির চলে আসেন তারা। তাদের সঙ্গে আরো আছেন গনি জমানার ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ। একটি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে সালেহ বলেন, তালেবানরা দাবি করছিল পানশিরের একটি অংশ তারা দখল করেছে। এই দাবি সর্বৈব মিথ্যা। সমগ্র এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একই সঙ্গে সালেহ আরো বলেন, আমরা শান্তি-আলোচনার পক্ষপাতী। কিন্তু তা যদি ফলপ্রসূ না হয়, তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে তালেবানদের প্রতিরোধে আমরা প্রস্তুত।
এদিকে, তালেবান আতঙ্কের মধ্যে আরো একটা নতুন আতঙ্ক মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে কাবুলে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, কাবুল বিমানবন্দরে বড়সড় হামলা চালাতে পারে ইসলামিক স্টেট। সন্ত্রাসদমন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, কাবুল দখল করার পর বাগরাম এবং পুল-এ-চাখরি জেল থেকে হাজার হাজার বন্দির মুক্তি দিয়ে দেয় তালেবানরা। ওই দুই জেলে তালেবান, আল-কায়দা, আইএস এবং সাধারণ অপরাধীসহ ৫ হাজার কয়েদি
ছিল। গোয়েন্দা সূত্রের আশঙ্কা, যেহেতু আইএসের সঙ্গে তালেবানের মতবিরোধ রয়েছে, তাই এই সুযোগে আইএস সদস্যরা প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে। তা ছাড়া আফগানিস্তানে আইএসের প্রচুর স্লিপার সেলও রয়েছে।
কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ১৩, বহু হতাহত : কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। বিমানবন্দরে থাকা নারী ও শিশুসহ আহত হয়েছেন অনেকে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের খবরে জানায়, কাবুল বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। হামলার কারণে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
ঘটনার পরপরই সেখানে পৌঁছান মার্কিন সেনারা। বিবিসির খবরে বলা হয়, বিমানবন্দরের বাইরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এ ঘটনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অবহিত করেছেন। বিস্ফোরণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবিও। এ ঘটনায় কোনো ব্রিটিশ সেনা হতাহত হয়নি বলে জানায় যুক্তরাজ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়