ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুরও করোনা! শিশুদের করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : ভূমিষ্ঠ হবার চার ঘণ্টা পর এন্টিজেন পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসে এক নবজাতকের। ময়মনসিংহ থেকে সে রাতেই (মঙ্গলবার) নবজাতকটিকে অভিভাবকরা নিয়ে আসেন ঢাকা শিশু হাসপাতালে। সেখানেই ভর্তি করানো হয় নবজাতকটিকে। মায়ের গর্ভ থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নবজাতকের জন্ম হয়নি। ফলে বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারেই দেখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে গতকাল বুধবার নবজাতকের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় আরটিপিসিআর ল্যাবে। ওই পরীক্ষায়ও যদি রিপোর্ট পজেটিভ আসে তাহলে সেটি হবে বিরল ঘটনা।
করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে শিশুদের সংক্রমিত হবার প্রবণতা কিছুটা কম ছিল। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়ার পর থেকে আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় শিশুদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এমনকি একদিন বয়সি নবজাতকেরও নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ এসেছে।
সম্প্রতি ১ হাজার ৪০০ নবজাতকের ওপর ঢাকা শিশু হাসপাতাল পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নবজাতকদের ২ শতাংশের শরীরে করোনা সংক্রমণ ছিল। যাদের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে তার ৩২ জনই আক্রান্ত ছিল। এসব নবজাতকের মধ্যে একদিন বয়সি নবজাতকও ছিল। ৩২ নবজাতকের মায়েদের করোনা পরীক্ষায় ২৬ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে।
সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর করোনা পজেটিভ হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি প্রসঙ্গে হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ কিংকর ঘোষ ভোরের কাগজকে বলেন, মঙ্গলবার ময়মনসিংহ থেকে চার ঘণ্টা বয়সি এক নবজাতক আমাদের হাসপাতালে আসে। বলা হয়, নবজাতকটি এন্টিজেন পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ। নবজাতকের মা ময়মনসিংহেই আছে। তবে তিনি করোনা নেগেটিভ বলেই আমাদের জানানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত মায়ের গর্ভ থেকে কোনো নবজাতক করোনা পজেটিভ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়নি। আমরা বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে আরটিপিসিআর ল্যাবে নবজাতকের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়েছি। আশা করছি, আগামী (আজ) বৃহস্পতিবার রিপোর্ট পাব। সেই পরীক্ষায়ও যদি রিপোর্ট পজেটিভ আসে তবেই আমরা নিশ্চিত হতে পারব। রিপোর্ট পজেটিভ আসলে নবজাতকের মায়েরও আবারো করোনা পরীক্ষা করানোর হবে। এক্ষেত্রে আমরা ওই এলাকার সিভিল সার্জনের সহযোগিতা নেব।
করোনা পজেটিভ হয়ে নবজাতক

জন্মের প্রসঙ্গে অবস্ট্রেটিক্যাল এন্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (জিএসবি) সাবেক সভাপতি ঢামেক হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, দুয়েকটি ঘটনা শুনতে পেয়েছি। তবে, ওই নবজাতক মাতৃগর্ভ থেকেই করোনা পজেটিভ হয়ে জন্মেছে না কি? জন্মের পর আক্রান্ত হয়েছে? তা নিশ্চিত নয়। এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সহজ কাজ নয়। বিষয়টি স্ববিরোধী বলে উল্লেখ করেন বিশিষ্ট এই ধাত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বয়স বিবেচনায় শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সি ৭২ জন শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সি ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালে শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ ভোরের কাগজকে জানান, ২০২০ সালের মে মাসে ঢামেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য আলাদা ইউনিট করা হয়। সেই থেকে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৮২৮ জন শিশু। মৃত্যু হয়েছে ১৪৮ জনের। আর চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪৯ জন করোনা আক্রান্ত শিশু ঢামেকে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৩৬ জন।
ঢামেক পুরানো বার্ন ইউনিটের (নতুন করোনা ইউনিট) আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) ডা. এ এফ এম আরিফুল ইসলাম নবীন ভোরের কাগজকে বলেন, আগে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল কম। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আসার পর শিশুরাও করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। করোনা ইউনিটের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) শিশুদের জন্য ১২টি বেড রয়েছে। গতকাল বুধবার সেখানে রোগী ভর্তি ছিলো আটজন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল হাকিম ভোরের কাগজকে জানান, গতকাল বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১৪ জন। গত মঙ্গলবার ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ জন। আগের তুলনায় এখন করোনা আক্রান্ত শিশু রোগী আসছে বেশি। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৬৩৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের।
শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন মনে করেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় নতুন রূপান্তরিত ভাইরাসটির ভিন্নতর বৈশিষ্ট্য এবং জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে শৈথিল্য, স্কুল, কোচিং বন্ধ থাকলেও শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বাজার-মলে যাবার প্রবণতা অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে ঈদ ভ্রমণের ফলে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুরা আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে উপসর্গ কম থাকে। শিশুরা আক্রান্ত হলে তাদের মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে কিংকর ঘোষ বলেন, সংক্রমণ শুরুর পর শিশুরা আক্রান্ত হয়নি এমনটা বলা যাবে না। কারণ, সংক্রমণের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে এপ্রিলেই আমরা শিশু হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী পেয়েছি। তবে এ কথা সত্যি, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপকতার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের আক্রান্ত হবার সংখ্যাও বেড়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ৪৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে তারা কেবল করোনায় মারা যায়নি। তাদের সবারই অন্য জটিলতা ছিল। যেমন সেপটিসেমিয়া, নিউমোনিয়া প্রভৃতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়