ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

মেয়েদের জন্য সমঝোতায় রাজি সেই বাবা-মা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশ হেফাজতে থাকা দুই মেয়ে জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সমঝোতার কথা জানিয়েছেন শিশু দুটির বাবা-মা। কি ধরনের সমঝোতা করা হবে, সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। তবে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে ৩১ আগস্টের আগেই বিষয়টি শেষ করার চিন্তাভাবনা করছে উভয়পক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তেজগাঁওয়ে ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের সামনে মেয়ে দুটির বাবা ইমরান শরীফ ও মা জাপানি নাগরিক এরিকো গণমাধ্যমের কাছে সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বাবা-মা একমত হয়ে আদালতে আবেদন দাখিল করলে দুই জাপানি শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার আদেশ দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। গতকাল শিশুদের বাবার আইনজীবী এডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক আদালতে বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দুই শিশুর কষ্ট হচ্ছে। শিশুদের বাবা হোটেলের সব খরচ বহন করবে। আমরা শিশুদের হোটেলে রাখার জন্য আবেদন করেছি। আমাদের আবেদনটি শুনুন। তখন আদালত বলেন, শিশুদের মা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নিয়ে কোনো অভিযোগ করছেন না। তারা বলছেন, শিশুরা ভালো আছে। আপনারা উভয়পক্ষ যদি শিশুদের হোটেলে বা কোনো বাসায় রাখতে একমত হন, তবেই আমরা শিশুদের

হোটেলে রাখার ব্যাপারে আদেশ দিতে পারি।
শিশু দুটির মা এরিকো গণমাধ্যমকে বলেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সমঝোতায় রাজি হয়েছি। বাচ্চাদের দেখে এলাম, তাদের হাস্যোজ্জ্বল দেখেছি। নিজ হাতে তাদের গোসল করিয়েছি। আমি সত্যিই গর্বিত এখানকার যারা দায়িত্ব¡প্রাপ্ত তারা অনেক আন্তরিক। ভিকটিম সেন্টারের পরিবেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যদিও এটি কোনো পাঁচতারকা হোটেল নয়, তারপরও পরিবেশ সুন্দর এবং নিরাপদ।
এ সময় এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, জাপানি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন সন্তানদের যেন এরিকোর কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী সেটি না করে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। যেহেতু পারিবারিক বিষয়, সেখানে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় রয়েছে। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও সমঝোতার মাধ্যমে ৩১ আগস্টের আগেই বিষয়টি কীভাবে শেষ করা যায়।
মেয়েদের সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে ইমরান শরীফ বলেন, আমার মেয়েগুলো এমন পরিস্থিতি দেখে ডিপ্রেশনে চলে গেছে। তারা বারবার আমার কাছে জানতে চাচ্ছে কখন তাদের বের করে নিয়ে যাব। এটাও বলেছে, তোমাদের (বাবা-মা) মধ্যে সমস্যা আমরা কী দোষ করেছি? আমাদের কেন এখানে রাখা হচ্ছে? আমাদের আর এখানে ভালো লাগছে না, আমাদের দ্রুত এখান থেকে বের করার চেষ্টা কর। যদি তাদের হোটেলে স্থানান্তর করা যায় তাহলে সন্তানদের পাশাপাশি মা-বাবা আলাদা আলাদা রুমে পাশাপাশি থাকতে পারবে, ফলে তারা মানসিক শান্তি পাবে বলে আমি মনে করি।
মেয়েরা কার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা সব থেকে ভালো বলতে পারবে আমার দুই মেয়ে। তারা তো এখন কিছুটা বড় হয়েছে। তাদের কেন জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে না তারা কোথায় থাকবে? তিনি আরো বলেন, জাপানের ফ্লাটের বিষয়ে যে তথ্য দেয়া হয়েছে এ বিষয়টি ভুল তথ্য। আমাকে দুদিনের লিগ্যাল নোটিস দিয়ে পুরোদমে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। আমাকে বাধ্য হয়েই চলে আসতে হয়েছে বাংলাদেশে। জাপানি আদালতে এ বিষয়ে আমি বিচার পাব সে আস্থাও রাখতে পারিনি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তার সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়।
এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো। গত ২৩ আগস্ট জাপানি দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনের প্রথমভাগে মা এবং দ্বিতীয় ভাগে বাবা মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়