ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

পৌরসভা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টানাপড়েন : নওগাঁয় বর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : নওগাঁ পৌরসভায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (বর্জ্য পরিশোধনাগার) ও শহরের বিভিন্ন স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পান চলতি বছরের ১২ এপ্রিল কিন্তু কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যথাযথভাবে সাইড (কর্ম এলাকা) বুঝে না দেয়ার অভিযোগে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে সম্প্রতি চুক্তি বাতিলের আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও গণশৌচাগার নির্মাণের স্থান বুঝে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় তাদের কোনো দায় নেই।
নওগাঁ পৌরসভা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) অধীনে নওগাঁ পৌরসভায় একটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণের লক্ষ্যে গত বছরের ৩০ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র বাছাই শেষে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল কাজটি পায় মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৩ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৌরসভা থেকে কার্যাদেশ পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ২৪৭ টাকা। ওই প্রকল্পের আওতায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ছাড়াও নওগাঁ শহরের ডিগ্রি কলেজের মোড়, পৌর বাজারের কিচেন মার্কেট, মুক্তির মোড়, সুপারিপট্টি, তুলসীগঙ্গা ও দয়ালের মোড় একটি করে মোট ৬টি গণশৌচাগার নির্মাণের কথা রয়েছে। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, যথাযথভাবে পৌরসভা সাইড বুঝে না দেয়ায় তারা কাজ শুরু করতে পারছেন না। নওগাঁ শহরের ডিগ্রির মোড়-বাইপাস সড়কের পাশে পৌরসভার কোমাইগাড়ী মৌজায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিল উন্নয়নের স্থান নির্ধারণ করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। স্থানটিতে দীর্ঘদিন ধরে শহরের ময়লা-অবর্জনা ফেলে আসছে তারা। ওই স্থানে বর্তমানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ওই স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাইড বুঝে দেয়ার কথা পৌর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ময়লা-আবর্জনা সরানো হয়নি। এখনো প্রতিদিন ১০-১২ টন ময়লা ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালির পরেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২৭ জুলাই দরপত্রের চুক্তি বাতিলের আবেদন জানিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ইকবাল শহরিয়ার বলেন, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল কার্যাদেশ পাওয়ার ১৫ দিন অপেক্ষার পরও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সাইড বুঝে না দেয়ায় তারা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত ২৭ এপ্রিল চিঠি দেয়। সাইড থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে কাজের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরে আরো তিনটি চিঠি দেয়া হয় কিন্তু তারপরেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সাইড বুঝে না দেয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না।
এদিকে প্রকল্পের মেয়াদও আর বেশি দিন নেই। বারবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও সাইড বুঝে না দেয়ায় আমরা চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেও যদি আমাদের সাইড বুঝে দেয়া হয় তাহলে আমরা কাজ শুরু করব। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো সদিচ্ছাই দেখছি না। আমার মনে হয়, কাজটি বাস্তবায়নে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ রয়েছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের স্থান ও ৬টি গণশৌচাগারের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী যে স্থানটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণের জন্য বাছাই করা হয়েছে। সেখানে আগে থেকে যেসব ময়লা-আবর্জনা রয়েছে সেগুলো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই সরাতে হবে। তবে চুক্তির পর সম্প্রতি যেসব ময়লা-আবর্জনা পৌরসভা ফেলেছে তা মেয়র অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হবে। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থান ছাড়াও একটি গণশৌচাগার নির্মাণের জায়গার মালিকানা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই বিষয়টিও দ্রুত সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা। সব কিছু ঠিক থাকলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়