সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার থেকে : সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার শুনানির সময় কাঠগড়ায় পুলিশের বরখাস্ত ওসি প্রদীপের মোবাইল ফোনে কথা বলার ঘটনায় সেখানে দায়িত্বরত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান। এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এর আগে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে প্রদীপের ফোনালাপের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম।
তিনি বলেন, আদালত চলাকালে কাঠগড়ায় প্রদীপের মোবাইলে কথা বলার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থি। এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এসআই সাহাবুদ্দিনসহ তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওসি প্রদীপকে সতর্ক করেছেন আদালত। তবে এ কারণে আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না বলে জানান পিপি ফরিদুল আলম।
গত সোমবার কক্সবাজার জেলার দায়রা জজ আদালতে মামলার প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে শুনানির সময় কাঠগড়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলেন বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ। এ কথা বলার একটা ছবি এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আদালত কক্ষের কাঠগড়ার ভেতরে হাঁটু গেড়ে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জানা গেছে, ওই সময় দায়িত্বরত এক পুলিশ কনস্টেবল প্রদীপকে মোবাইল ফোনটি সরবরাহ করেছিলেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মোবাইল ফোনে একের পর এক কলে আনুমানিক ৩০-৪০ মিনিট কথা বলেছেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। ওই দিন পরনে ছিল কালো পোলো শার্ট। তবে প্রদীপ কার সঙ্গে কী বিষয়ে কথা বলেছেন তা জানা যায়নি।
এদিকে সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন কারাগার থেকে আদালতে পৌঁছলে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখে বিরক্তি নিয়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘আমাকে নতুন করে চেনানোর দরকার নেই।’ গত মঙ্গলবার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী ও চেহারা হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কয়েকজন আইনজীবী জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ মলিন মুখে আদালতে এলেও পরের দিন খুব আত্মবিশ্বাসী ও হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাকে দেখা গেছে। মোবাইলে কথা বলার পরেই প্রদীপ আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন অনেকের।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় সোমবার। বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিন এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। মামলায় মোট ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ১ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সাক্ষ্য দিয়ে প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাহিদুল ইসলাম সিফাত। তাকে ২৫ আগস্ট জেরা করছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।