ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি চুক্তি দেড় মাসের মধ্যে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়ায় কয়লার খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে চীনা কোম্পানির সঙ্গে আবারো চুক্তি হতে কমপক্ষে দেড় মাস লাগবে। চুক্তির বিষয়টি এখন একেবারেই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। দুই থেকে তিনটি বৈঠকে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এদিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কয়লা উত্তোলন শুরু না হলে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে খনির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী দুই থেকে আড়াই মাস তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা মজুত আছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় কোনো আশঙ্কা নেই।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান জানান, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হবে। এখন যে চুক্তি রয়েছে তার মেয়াদ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। খনি থেকে কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। এখন করোনার কারণে বেশির ভাগ লোককে কাজের বাইরে রাখা হয়েছে। চীনা কর্মীরা কম কাজ করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে চুক্তি করতে সার্বিক প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। চীনা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন একেবারেই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নতুন চুক্তি হবে।
তিনি আরো বলেন, কয়লার সংকটের কারণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হবে না। এখনো কয়েক মাস বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখার মতো কয়লা মজুত আছে।
বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনির স্থানীয় সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া কয়লার খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি এবং সিএমসি গঠিত কনসোর্টিয়াম। গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত চীনা কোম্পানির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার নির্ধারিত তারিখের আগেই গত ২৫ জুলাই থেকে চীনা কোম্পানিটি খনি থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। খনিতে কর্মরত চীনা নাগরিকরা ২৫ জুলাইয়ের পর আর কাজ করেনি। চীনা কর্মীদের উপস্থিতি না থাকায় পুরো খনির কয়লা উত্তোলন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদেরও আর কোনো কাজ নেই। এ কারণে খনির কর্মীরা কর্মস্থল ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পর আবার শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবি- পেট্রোবাংলা ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চুক্তি করতে ব্যস্ত রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ২৫ জুলাই বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত খনির যে স্তর থেকে কয়লা তোলা হচ্ছিল সেই স্তর থেকেই আবার কয়লা তোলার কাজ শুরু হবে। ওই স্তরে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এক থেকে দেড় লাখ টনের মতো কয়লা এখনো মজুত রয়েছে। খনির কাজ শুরু হলে ওই মজুত কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে।
এর আগেও কয়েক দফায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্প থেকে কয়লা উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই আবার কার্যক্রম শুরু হয়। এবার করোনার কারণে চীনা প্রতিষ্ঠান ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনায় বসার সুযোগ ছিল না। ফলে কোনো বৈঠক হয়নি এবং চুক্তি নবায়নের বা নতুন করে চুক্তির বিষয়ে কথা হয়নি। এরই মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে পৌঁছায়। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলোচনা হতো। কঠোর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় এখন কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে এবং বেশ এগিয়েছে। এখন শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নতুন করে চুক্তির পর খনি থেকে আবারো কয়লা উত্তোলন শুরু হবে।
জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্প থেকে উত্তোলিত কয়লা ব্যবহার করেই কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তাই এই কয়লা খনিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খনির উৎপাদন বন্ধ থাকলে কয়লার অভাবে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে খনির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, কয়লার উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও এখন খনি এলাকায় তিন লাখ টনের মতো কয়লা মজুত রয়েছে।
এই বিপুল পরিমাণ কয়লা দিয়েই আগামী তিন মাস বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। এই তিন মাসের মধ্যে চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন এবং কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। তাই ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়