ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

চট্টগ্রাম নগরীর ৩৬৬ প্রজাতির ঔষধি গাছ বিলুপ্তির পথে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে ৩৬৬ প্রজাতির ঔষধি গাছের সন্ধান পেয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক। গবেষণায় নগরের ২০টি এলাকায় মোট ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার প্রাণ-প্রকৃতির শহর চট্টগ্রামে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষ নিধনের কারণে চট্টগ্রামের প্রকৃতির সেই নান্দনিকতা প্রায় হারাতে বসেছে। বিলুপ্ত হতে বসেছে ঔষধি গাছ।
চবির গবেষক দল বলছে, পাহাড় নিধন, পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে ১৩ প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ এবং অনেক ঔষধি উদ্ভিদ হারিয়ে যাবে যা চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ বিনষ্ট করবে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে অবিলম্বে পাহাড় নিধন, পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করছে গবেষক দল। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ-প্রকৃতি, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য নিয়ে পরিচালিত সামাজিক সংগঠন ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়ন (ইকো) এর উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় এসব সুপারিশ করা হয়। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন চবি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল। চলতি বছরের মার্চ হতে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি স্পটে জরিপের মাধ্যমে উদ্ভিদ শনাক্ত করে গবেষণার মাধ্যমে আটটি শ্রেণিতে এদের ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বড় বৃক্ষ, গুল্ম জাতীয়, বীরুৎ জাতীয়, লতা জাতীয় ও ঔষধি উদ্ভিদ। এ ছাড়া বিপন্ন প্রজাতি, ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হবে এমন এবং এখনো শনাক্ত করা যায়নি এমন প্রজাতিও আছে। গবেষণায় শনাক্ত মোট ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ১৭৭ প্রজাতির বড় বৃক্ষ, ৮৬ প্রজাতির গুল্ম জাতীয়, ১৭৯ প্রজাতির বীরুৎ জাতীয় ও ৫৩ প্রজাতির লতা জাতীয় উদ্ভিদ পাওয়া গেছে। আবার এর মধ্যে ৩৬৬ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে যেগুলো ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বিপন্ন প্রায় ১৩টি এবং ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে এমন প্রজাতি পাওয়া গেছে ১৩৭টিরও বেশি। ৩০টির বেশি প্রজাতি পাওয়া গেছে যেগুলো এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি গবেষক দল।
গবেষক দলের প্রধান ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল বলেন, গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম শহরের উদ্ভিদরাজির পুরো চিত্র তুলে আনা, অজানা প্রজাতিগুলো শনাক্ত করা ও বিপন্ন প্রজাতিগুলো চিহ্নিত করা। যাতে এগুলো সংরক্ষণে আগাম পরিকল্পনা নেয়া যায়। এ ছাড়াও ঔষধি উদ্ভিদগুলো শনাক্ত করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পরিচিত করা।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরে পাহাড়নিধন, পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ যদি বন্ধ করা না যায়, তবে ভবিষ্যতে গবেষণায় শনাক্ত হওয়া বিপন্ন প্রায় ১৩ প্রজাতি ও ঔষধি ৩৬৬ প্রজাতিসহ মোট ৪৯৫ প্রজাতির অনেক উদ্ভিদই হারিয়ে যাবে। যা চট্টগ্রাম শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করবে। তাই এখনই উদ্ভিদ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয় রোধে অবিলম্বে পাহাড় নিধন, পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেয়া এবং ভবিষ্যতে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে গবেষণায় শনাক্ত ৪৯৫টি উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
সংরক্ষণের জন্য সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিদেশি উদ্ভিদের পরিবর্তে দেশীয় ফলদ, বনজ ও ঔষধি উদ্ভিদ ব্যাপকহারে রোপণের জন্য জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া সড়ক-মহাসড়কের পাশে এবং বিভাগকে তিনস্তরে ঔষধি ও দেশীয় ফলদ গাছ রোপণ করা যেতে পারে।
ইকোর সভাপতি সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শাহেদ মুরাদ সাকু ও এসএম আবু ইউসুফ সোহেলের সহযোগিতায় গবেষণা দলে যুক্ত ছিলেন চবি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক-বর্তমান একদল ছাত্র। তারা হলেন- খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, সজীব রুদ্র, আরিফ হোসাইন, সনাতন চন্দ্র বর্মন, মো. মোস্তাকিম ও ইকরামুল হাসান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়