১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি স্কুলছাত্র আব্দুর রহিমের

আগের সংবাদ

প্রত্যাবাসনে বাধা চীন-রাশিয়া! বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলও নিষ্ক্রিয়

পরের সংবাদ

দাদনের জালে বন্দি উপকূলের জেলেরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ সিরাজউদ্দৌলা লিংকন, কয়রা (খুলনা) থেকে : ঋণ বা দাদনের জালে অনেকটাই বন্দি হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। গত বছর সাগর-নদীতে ভরা মৌসুমেও মাছের তীব্র সংকট ছিল। বর্তমানে সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। সংকট ও বন্ধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জেলেদের সাংসারিক অভাব-অনটন। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আয়-রোজগার নেই। এ কারণে সংসার চালাতে কিংবা পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে জেলেরা হাত পাতছেন বিভিন্ন এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। ঋণ নিয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান করলেও পরবর্তী সময়ে যা আয় করছেন তা দিয়ে চালাচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি কিস্তি। ঋণ-দাদনের কিস্তির টাকা দিতে গিয়ে বাড়তি কোনো টাকা সঞ্চয় করে রাখতে পারছেন না। ফলে ঘুরে-ফিরে সেই ঋণ-দাদনের জালেই জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সরজমিন দেশের সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনবেষ্টিত নদীকেন্দ্রিক জেলা খুলনার কয়রা উপকূলীয় এলাকা ঘুরে জানা যায়, নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর জেলেরা হতদরিদ্র। তারা সুন্দরবনের মৎস্য শিকারের ওপর তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জীবিকার প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় তাদের। তবে জেলেদের কষ্টের আয়ের প্রায় সবটাই চলে যায় দাদন ব্যবসায়ীদের (কোম্পানি) পকেটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়রা উপজেলার চারপাশে নদী ও সুন্দরবনবেষ্টিত, উপজেলা ৪নং কয়রা, ৫নং কয়রা, ৬নং কয়রা, তেঁতুল তলার চর, চৌকুনী, গিলাবাড়ী, হাতিয়ার ডাঙ্গা, ভাগবা, সুতির অফিস, কাটকাটা, গাজীপাড়া, আংটিহারা, গোলখালী, মাটিয়াভাঙ্গা, চরামুখা, জোড়শিং এসব গ্রামের ৭০ শতাংশ লোক নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলেরা দিন ও রাতে মাছ ধরে কয়রা বাজার মৎস্য আড়ত, হোগলা মৎস্য আড়ত, চাঁদ আলী মৎস্য আড়তে তা বিক্রি করেন।
কয়েক জন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলেরা হতদরিদ্র। মাছ ধরার জাল, নৌকা ও ট্রলার কেনার জন্য উপজেলার আড়তদার ও মহাজনদের কাছ থেকে প্রতি বছর ঋণ নেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা একে দাদন ব্যবসা বলে থাকেন। জেলেরা যে পরিমাণ টাকা দাদন নেন, প্রতিদিন সেই টাকার ১৫ শতাংশ দাদন ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। পাশাপাশি জেলেদের নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর আড়তে এনে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি করতে হয়। নিলামে ওঠার আগেই জেলেদের মজুত মাছের এক-দশমাংশ আড়তদার সরিয়ে রাখেন। সরিয়ে ফেলা মাছ পরে আবার নিলামে বিক্রি করা হয়।
সদরের, আমাদী, গিলাবাড়ী মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর আড়তে এনে মাছ তুলে থাকেন। মাছ আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে আড়তের লোকজন নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ নিজেদের আয়ত্তে নিচ্ছেন। এরপর বাকি মাছের নিলাম করছেন। নিলামে তোলার পর মোট টাকা থেকে ১০-২০ টাকা হারে দৈনিক সুদ কেটে নেয়া হচ্ছে।
কয়রা সদরের আড়তদার আলমগীর হোসেন বলেন, উপজেলায় কয়েক হাজার জেলে রয়েছে। প্রায় সব জেলে আমাদের কারো না কারো কাছ থেকে অথবা কোম্পানিদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছ ধরেন। আমরা কাউকে জোর করে দাদনের টাকা দেই না। জেলেরা গরিব। নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের কাছে এসে তারা টাকা নেন। সারাদেশের মতো একই নিয়মে আমরা জেলেদের কাছ থেকে মাছ ও টাকা আদায় করি।
৫নং কয়রা ও ৬নং কয়রা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দুপুরের খাওয়া শেষে ঘুমাচ্ছেন। আবার অনেকে ছোট মাছ ধরার জাল বুনছেন। কেউ কেউ নদীতে মাছ ধরতে গেছেন। ৫নং কয়রা গ্রামের জেলে আইয়ুব আলী বলেন, দাদন ব্যবসা ও মহাজনের কবলে পড়ে জেলেরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। প্রতিদিন মাছ নিয়ে আড়তে না গেলে আড়তদারদের লোকজন বাড়িতে এসে জেলেদের অনেক গালমন্দ ও অনেক সময় মারধরও করেন।
৬নং গ্রামের জেলে রজব আলী বলেন, ‘সরকারই পারে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে। নতুবা এ অভাব কোনো দিনই শেষ হবে না।’
কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেও জেলেদের দাদন ব্যবসা থেকে দূরে রাখতে পারিনি। জেলেদের যে সুবিধা দেয়া হয় কার্ডের মাধ্যমে তা সামান্য। সরকারিভাবে তাদের জন্য সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা হলে হয়তো দাদন ব্যবসা বন্ধ হতো

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়