মানুষের কল্যাণ করার জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন : সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা

আগের সংবাদ

প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিভাজন! মাঠ প্রশাসনকে কেন্দ্রের বিশেষ নির্দেশনা : জানালেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

পরের সংবাদ

ডেঙ্গু : নাগরিক ও দায়িত্বশীলদের দায়

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারির এই অস্থির সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। শহরে যেন করোনা আর ডেঙ্গুর পাল্লাপাল্লি। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আড়াইশ থেকে তিনশ ডেঙ্গু রোগী। প্রশ্ন হলো- গত শতাব্দীর ঢাকায় কি নাগরিকরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হতো? হতো না, হলেও অল্পবিস্তর, মহামারি রূপে হয়নি কখনো। তাহলে বর্তমান শতাব্দীতে হঠাৎ করে বৃহৎ পরিসরে সংক্রমিত হলো কেন! আর বৃষ্টির শেষাশেষি এই সিজনেই মশার প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কেন হয়? সাম্প্রতিক সময়েই বা কেন বাড়ল? সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে- জলবায়ুর পরিবর্তন এবং আমাদের নাগরিক জীবনের অবহেলা, অলসতা আর অসচেতনতায় ভরপুর।
ডেঙ্গু জ্বর মূলত এডিস ইজিপ্টি (অবফবং ধবমুঢ়ঃর) মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ যখন এই মশা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়িয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে কামড় দেবে, তখন দ্বিতীয় ব্যক্তিও ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন। জার্নাল নেচারের বর্ণনা মতে, এডিস মশা দেখতে ছোট এবং কালো। যাদের শরীরে আছে সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগ। এডিস মশা বসবাস করে সুন্দর সুন্দর দালানকোঠায়। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের অপছন্দ। স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে এই মশা। সেখানে লার্ভা ফুটে বাচ্চা হয় এদের।
ঢাকা শহরে যারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন, খেয়াল করলেই দেখবেন নিচতলায় বা দ্বিতীয়-তৃতীয় তলায় মশার চলাচল অস্বাভাবিক রকমের। ওপরের তলাগুলোতে সে তুলনায় মশা নেই বললেই চলে। অর্থাৎ মশার চলাচল মাটির কাছাকাছি। যদি ব্যাঙ বেঁচে থাকত মশা প্রাকৃতিক উপায়েই ব্যাঙের খাবার হয়ে যেত। গাছ কেটে, ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ির অতিরিক্ত প্রচলন, কলকাখানার নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড ভ্যাপসা গরমের সৃষ্টি করেছে। অহরহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবহার প্রতিবেশে ফেলেছে নেতিবাচক প্রভাব। বনায়নও ধ্বংস করা হয়েছে অতিদ্রুত। ফলাফলে বৃষ্টির পরপরই অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরমে জমে থাকা পানিতে মশা জন্মানোর সুযোগ পায়।
ডেঙ্গু জ্বরের কোনো ভ্যাক্সিন বা প্রতিকার ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কার হয়নি। প্রতিরোধই একমাত্র মূলমন্ত্র। এডিস মশার বিস্তার ধ্বংস এবং কামড় থেকে নিজেদের রক্ষা করাই একমাত্র পথ। থাকতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের বাইরে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির পানি জমে জন্ম নিতে পারে মশার লার্ভা- যেমন : পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, পানির ট্যাংক, মাটির পাত্র, ডাবের খোসা, টিনের কৌটা, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি। নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে ফুলের টব। নজর রাখতে হবে ছাদ কৃষির দিকে যেন জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা না জন্মে। এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে পারে টয়লেটের অব্যবহৃত কমোডেও। বেসিনের জমে থাকা পানির দিকে সতর্ক থাকতে হবে। এ মশা সাধারণত দিনের বেলা বেশি চলাচল করে, বিশেষ করে আলো-আঁধারি সময়টাতে। যেমন সকাল এবং সন্ধ্যার প্রারম্ভে। এ কারণে সম্ভব হলে বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের পরিবর্তে ফুলপ্যান্ট বা পাজামা পরানো যায়। প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় মশার কয়েল বা স্প্রে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যেন তাকে কামড়ে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে না পারে। খাওয়াতে হবে প্রচুর তরল জাতীয় খাবার। জানালার পাশে লাগানো যেতে পারে তুলসী গাছের মতো ভেষজ। কারণ তুলসী গাছে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান আছে, যা মশা তাড়াতে প্রবল ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়াতে কর্পূর ব্যবহারেরও বিকল্প নেই। দরজা-জানালা বন্ধ করে, সকাল-সন্ধ্যায় ঘরে কর্পূর জ্বালিয়ে রাখলে ভালো ফল দেয়।
যে এলাকায় ময়লার স্তূপ জমে থাকে, পর্যাপ্ত জলাশয় থাকে না, অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, জেনেশুনে ধ্বংস করা হয় বনায়ন, বাস্তুতন্ত্র নিঃশেষিত হয়, ব্যবহৃত হয় এয়ারকন্ডিশন, জলবায়ু বিপর্যয় দেখেও সচেতন হয় না, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ থাকে না; সেখানে রোগ জীবাণু আক্রান্ত হবে না তো হবে কি? চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু মশা তো স্বাভাবিক সেখানে। মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং মশার দাপট অব্যাহত ছিল সব সরকারের আমলেই।
একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে কোভিড-১৯ এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই তীব্র জ্বর অনুভূত হলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। শত বছরের অভ্যাস একদিনে পরিবর্তন হওয়ার নয়। বেঁচে থাকার তাগিদে, মানবিক শহরে রূপান্তর ঘটাতে অংশগ্রহণ করতে হবে নাগরিকদেরই। সিটি করপোরেশন বড়জোড় রাস্তায় অ্যাকশন নিতে পারবে, কিন্তু বাড়ির দায়িত্ব ব্যক্তির। ঘরে-বাইরে মশক নিধনে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু সমস্যা দূর হবে, সব নাগরিকের রোগমুক্ত নিরাপদ জীবন, এই প্রত্যাশা।
সজীব ওয়াফি
লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়