অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

লোকালয়-দেবালয়-শিক্ষালয় লেলিহানে পুড়ছে সব আলয়

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

লোকালয় পুড়লে দেবালয়ও রক্ষা পায় না- পুস্তকে নয়, করোনা মহামারি দেখিয়ে দিল প্রবাদটির বাস্তবতা। বাংলা প্রবাদটির সর্বজনীনতা কেবল বাংলাদেশে নয়, গোটা বিশ্বেই। মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় এমন শূন্যতা! হজ, নামাজ, প্রার্থনা, পূজায় এমন ছেদ বিশ্বের ইতিহাসে আর ঘটেনি। লোকালয়ে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না; পুস্তক-প্রবাদে এমন কথা থাকলেও বাস্তবে ভাবেওনি কেউ। বলার জন্য বলেছে, লেখার জন্য লিখেছে।
মসজিদ, মন্দির, চার্চ কিংবা অন্য উপাসনায়গুলোতে ধর্মনির্ভর করে মূলত নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও তাদের সংবেদনশীলতার ওপর। সেই সংবেদনশীলতায়ও বাধা আসবে বা আসতে পারে তা ছিল ভাবনার অতীত। কোনো কোনো ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে করোনা ভাইরাসকে ‘আজাব’ বলে মত এসেছে। তবে তা বেশিদিন টেকেনি। গজব না হলেও, আজাব সবচেয়ে বেশি ভর করেছে শিক্ষালয়ে। বিচারালয়েও কম নয়।
তালেবান ঝড়ে বিধ্বস্ত আফগান মেয়েরা ঠিকভাবে স্কুলে যেতে পারবে কিনা, এ নিয়ে চিন্তামগ্ন মানুষ বাংলাদেশেও কম নয়। তা অন্যায্য নয়। বাংলাদেশের অবস্থা তো আরো গুরুচরণ। করোনার ধাক্কায় স্কুল-কলেজসহ বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ প্রায় সোয়া পাঁচশ দিন। কবে খুলবে? স্পষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। লকডাউন-শাটডাউন বলতে যা বোঝায় সেটা একমাত্র শিক্ষাঙ্গনেই। জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্য প্রায় সব সেক্টরই খুলেছে। সর্বশেষ খুলেছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল-মোটেল-বার খোলা শুরু হয়েছে আরেকটু আগেই। অনিবার্য কারণে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। খুলে দিলে কোনো অঘটন ঘটলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে উচ্চকণ্ঠদের ভূমিকা তখন কী হবে- এ বিষয়ে সরকার ওয়াকিবহাল। প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে কিছু মন্তব্যও করেছেন। তা অনেকের কাছে ভালো লাগেনি। শিক্ষামন্ত্রীর এ প্রসঙ্গ এড়ানোর উপায় নেই। যদি, কিন্তু তবে যোগ করে তাকে কিছু একটা বলতে হয়। দিতে হয় সম্ভাব্য দিন না হলেও মাস নাগাদ তারিখ। সরকারের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে, সংক্রমণ ৫ শতাংশে নামলে খোলা হবে- এমন মাঝামাঝি কথাও বলেছেন। আগে জীবন তারপর শিক্ষা- এমন মন্তব্যও করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু কোনো কথাই বিশ্বাস করাতে পারছেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়া পর্যন্ত এসব কথায় আস্থা রাখার কারণ নেই। এটাই নিষ্ঠুর বাস্তবতা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবার জন্যই তা কষ্টের। উপশমও নেই। ক্ষিপ্ত হয়ে কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছেন- পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানবসম্পদ ধ্বংস করে দেশকে দীর্ঘমেয়াদে পরনির্ভরশীল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াবার ডাক দিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টাও আছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে সবই তো খুলে দেয়া হয়েছে। ইউনিসেফ এবং ইউনেস্কো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও বিশ্ব ঐতিহ্য সংস্থা ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুলের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্কুলে যেতে না পারার কারণে শিশু এবং তরুণ জনগোষ্ঠী যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে নেয়া যাবে না। শুধু শিক্ষার্থী নয়, বাবা-মা এবং শিক্ষকদেরও সমান ক্ষতির ভার বইতে হচ্ছে। টিকা দিয়ে স্কুল খুলে দেয়ার বিষয়ে ইউনিসেফ-ইউনেস্কোর বিবৃতিতে বলা হয়, স্কুলগুলো পুনরায় খোলার ক্ষেত্রে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর টিকা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করা যায় না। বৈশ্বিক টিকার ঘাটতি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। স্কুলে প্রবেশের আগে টিকাদান বাধ্যতামূলক না করাসহ সব স্কুলের উচিত যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা।
যুক্তি এবং আহ্বান হিসেবে ইউনিসেফ-ইউনেস্কোর বিবৃতিটি তাৎপর্যপূর্ণ। তারা কিছু পরামর্শও দিয়েছে। করোনার অজুহাতে বিশ্বের ১৯টি দেশের বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশের কথাও রয়েছে। সবার শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং সবার আগে খোলা- জাতিসংঘের এই নীতির কথাও রয়েছে। কোনো বিশেষ অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়লে সেই এলাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না রাখার দুনিয়া জোড়া দৃষ্টান্তও এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।
করোনা আরো দীর্ঘদিন নানাভাবে থাকতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই জানিয়েছেন। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না রেখে সভ্য দেশগুলোর দৃষ্টান্ত অনুসরণের কথাও বলছেন অনেকে। এ নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই। স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞানেও তা যথেষ্ট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এদেশে শিশু-কিশোর-তরুণদের শারীরিক-মানসিক বিকাশ ও সামাজিকীকরণের একমাত্র আশ্রয়ের মতো। বন্ধ বা ছুটির ফাঁদ বিচারালয়েও। চলতি বছরে সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারিত ছুটি ১৭৯ দিন। তার মধ্যে সরকারি বন্ধ ১২০ দিন। আর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ছুটি ৫৯ দিন। ৩৬৫ দিনের বাকি ১৮৬ দিন সর্বোচ্চ আদালত খোলা থাকার কথা ছিল। সেটাও মাঠে মারা গেছে। করোনা মহামারি ও একের পর এক লকডাউনের তোড়ে দীর্ঘদিন সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থেকেছে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০ দিন সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকার কথা। এর মাঝে সরকারি ছুটি মাত্র ১৩ দিন। বাকি ২৭ দিন সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ছুটি।
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে নবম-দশম স্থানে। উপসর্গে বা করোনার লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুর হিসাব এর বাইরে। মাঝে কয়েকদিন করোনায় দৈনিক মৃত্যু ২০০-এর নিচে কমই নেমেছে। দৈনিক মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সরকারের ঘোষণার চেয়ে বেশি- এমন কথাবার্তাও আছে। কিন্তু কত বেশি?- তা বলার সাধ্য কারো হচ্ছে না। চিত্র বা বাস্তবতা বড় নির্মম। হাসপাতালে ঠাঁই নেই। অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। বেঁচে থাকাদের কষ্টও অন্তহীন। মানুষ দিনকে দিন উপায়হীন। করোনার জেরে দারিদ্র্যের শিকার হয়ে নতুন এক জনগোষ্ঠীর বিস্তার ঘটছে দ্রুত গতিতে। বেকারত্ব বেড়েছে। কর্মরতদের আয় কমেই চলছে। পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ ও মান কমে যাচ্ছে। সব ছাড়িয়ে অনিশ্চয়তার তলানিতে চলে গেছে শিক্ষার্থীদের জীবন। এত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ফেরানোর তৎপরতা কম নয়। কিছুদিন পরপর চাঞ্চল্যকর ঘটনার উন্মোচন এবং সেটা সমাপ্ত না করে নতুন ঘটনার আবির্ভাব ঘটানো সরকারের পক্ষ থেকে ঘটেই চলেছে। এখন যেমন নায়িকা, মডেল, মাদক নিয়ে চলছে তোলপাড়। কেন, কারা, কীভাবে এসব এত দিন ধরে ঘটাতে পারছে সে প্রশ্নের উত্তর নেই। মানুষের সামনে যা আসে তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সব সময় যা গুরুত্বপূর্ণ তা সামনে থাকে না বা আসে না। অথবা আনা হয় না। শিক্ষা, শিক্ষার্থী, শিক্ষালয়ের অবস্থাটা যেভাবে আলোচনা বা চিন্তায় আসা দরকার সেভাবে আসছে না। আরব্য উপন্যাসের গল্পের মতো একের পর এক নানান কাহিনী নিয়ে যত কথা হচ্ছে শিক্ষা নিয়ে কি তার সিকিভাগও হচ্ছে?
মোস্তফা কামাল : সাংবাদিক ও কলাম লেখক; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়