অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা : আ.লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে রাষ্ট্রের মদতেই গ্রেনেড হামলা

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার জন্য তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে আবারো অভিযুক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই রাষ্ট্রের মদতে আমাদের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের আলামত ধ্বংস, খুনিদের পালাতে সহায়তা করা সেই সঙ্গে বিচারকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার যে অপচেষ্টা, এতেই স্পষ্ট হয়, খালেদা জিয়াও এই ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত ছিলেন। কারণ এই ঘটনার কয়েক দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, আমি না কি প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা কোনোদিন বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারব না। এর আগে কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে আমাকে হত্যা চেষ্টার আগেও খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলটির প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। আলোচনা সভার শুরুতেই শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হলো। ওই হামলার প্রতিবাদে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডাকলাম। মুক্তাঙ্গনে সভা হওয়ার কথা ছিল, অনুমতি দেয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই করব। পোস্টার করা হলো, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম। হঠাৎ আগের দিন রাত ১২টায় মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার অনুমতি দিল। তখনই সন্দেহ হলো- কেন এত রাতে অনুমতি দিল? তাছাড়া আমাদের সমাবেশ করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। অবশ্য প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে আর্জেজ গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করবে, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।
সেদিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সমাবেশ শেষ করামাত্র ফটোগ্রাফার গোর্কীসহ কয়েকজন এসে ছবি নিতে না পারার কথা জানাতেই আমি দাঁড়াই। মাইকটি আমার হাতেই ছিল, তখনই গ্রেনেড হামলা শুরু হয়ে যায়। গ্রেনেড

বিস্ফোরিত হওয়ার শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হানিফ ভাইসহ (সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) কয়েকজন ঘিরে ফেলেন। আমি দেখলাম, আমার গায়ে শুধু রক্ত আর রক্ত। অর্থাৎ ওই যে স্পিøন্টারগুলো সব এসে আঘাত করছে হানিফ ভাইয়ের মাথায় ও গায়ে। যেহেতু সে ধরে রেখেছে, তার রক্তে আমার শরীর ভেসে যাচ্ছে। তিনটি গ্রেনেড ফোটার পর কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবার। মনে হচ্ছে যেন এর শেষ নেই, কেয়ামতের মতো। চারদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। জানি না, আল্লাহ কীভাবে হাতে তুলে আমাকে বাঁচালেন। আমার গায়ে একটা স্পিøন্টারও লাগেনি। কিন্তু আওয়াজে

ডান দিকের কানে আর শুনতে পাচ্ছিলাম না। এরপর যখন আমি গাড়িতে উঠতে যাব, দরজাটা খুলে আমার দেহরক্ষী মাহবুব তখন দাঁড়ানো, তখনই গুলি এলো এবং সেই গুলিতে সে মারা গেল। আরো কয়েকটি গুলি এসে গাড়িতেও লাগল।
পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত এই ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ আহতদের রক্ষায় এগিয়ে আসে। এখানে দেখা গেল উল্টো। আমাদের নেতাকর্মীরা যখন আহতদের সাহায্য করতে ছুটে আসল, তখন তাদের আসতে বাধা দেয়া হয়। টিয়ার গ্যাস মারা হয়, লাঠিচার্জ করা হয়। তার মানে কী? যারা আক্রমণকারী এদের রক্ষা করা, এদের রেসকিউ করার জন্যই এই টিয়ার গ্যাস মারা, লাঠিচার্জ করা। সব আলামত সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে ধুয়ে নষ্ট করা হয়েছে। একটা গ্রেনেড অবিস্ফোরিত ছিল, সেটি সংরক্ষণের কথা বলায় একজন অফিসারকে ধমকানো হয়। পরে তাকে নির্যাতনও করা হয়েছে। সরকারের সহযোগিতা না থাকলে তো এমন হতে পারে না।
বিএনপির অত্যাচারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির অত্যাচার শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এমনকি জুলাই মাসে আমার ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই এক অদৃশ্য শক্তির বলে তাদের দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়। সামরিক-অসামরিক আমাদের অনেক কর্মকর্তাকে ওএসডি করা, চাকরিচ্যুত করা থেকে শুরু করে হত্যা, গুমসহ, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচারসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতোই নির্যাতন শুরু করেছিল।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়- বিএনপির ডাক্তারদের কেউ সেদিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল না। আর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আহতকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বলেছে, এখানে ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা নিতে পারবে না। সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ। আর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিএনপির কোনো একটা ডাক্তারও চিকিৎসা করেনি। আমাদের ডাক্তার রোকেয়া আইভি রহমানসহ প্রায় ৭০ জনকে নিজে একা অ্যানেস্থেশিয়া দিয়েছে। এমনকি যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের লাশও পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাপে ভোররাতে তারা লাশ দিতে বাধ্য হয়।
ঘটনার রাতের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই দিন রাত ১১টার দিকে চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে খালেদা জিয়ার সরকার দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে তাজউদ্দীন ছিলেন, একজন কারারক্ষী এবং শোনা যায় কর্নেল রশিদ এবং ডালিম সে সময় ঢাকায় এসেছিলেন এবং খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ- সবাই এর সঙ্গে জড়িত ছিল। কাজেই তারাই এদের রক্ষা করে এবং দেশ থেকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। কারণ যখন তারা জানল, আমি মরি নাই, বেঁচে আছি, তখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। একজন কারারক্ষীও এর সঙ্গে জড়িত ছিল। জেলখানার ভেতর গ্রেনেড পাওয়া গেল। এরা অনেকগুলো ক্রিমিনাল জোগাড় করেছিল, তাদের মধ্যে কিছু জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু প্রত্যেকের হাতে যে গ্রেনেডগুলো ছিল, সবাই সেগুলো মারতেও পারেনি। রমনা হোটেলের সামনের গলিতে এবং কয়েকটি জায়গায় সেই গ্রেনেড পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সে সময় সংসদে কথা বলতে না দেয়ার আক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর কয়েক দিন পরেই জাতীয় সংসদে অধিবেশন শুরু হলো। আমরা বিষয়টি সংসদে তুলতে চেষ্টা করলাম। কিছুতেই এ ব্যাপারে কথা বলতে দেবে না। শোক প্রস্তাব দিতে চাইলাম, সেটাও প্রত্যাখ্যান করা হলো। আমরা যারা কথা বলতে চেয়েছি, তাদের কোনো মাইক দেয়া হলো না। উল্টো আমাকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া নিজেই দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ওনাকে আবার কে মারবে। উনি তো ভ্যানিটি ব্যাগে করে নিজেই গ্রেনেড নিয়ে সেখানে গেছেন এবং নিজেই গ্রেনেড মেরেছেন। এটা খালেদা জিয়ার নিজের ভাষ্য।’ তখন আমি তাকে বলি ‘আমরা কী ওখানে সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম?’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নামের দরিদ্র একজনকে তার পরিবার লালন-পালনের আশ্বাস দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাহিনী তৈরি করে। অথচ তার আর্জেজ গ্রেনেড সংগ্রহ করা বা গ্রেনেড মারার মতো, লোক সংগ্রহ করার মতো কোনো ধরনের সামর্থ্যই ছিল না। পাশাপাশি ওই সময় মগবাজার আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করাসহ আমাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করে তাদের দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের পরিকল্পনা হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলেই এই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি বলেন, সে সময় একটা গ্রেনেড পাওয়া গেল জেলখানার ভেতরে, দেয়ালের সঙ্গে। সেটা আবার আমাদের কোনো কোনো স্বনামধন্য পত্রিকা ডায়াগ্রাম এঁকে দেখাল যে জেলখানার পাশের কোনো এক বাড়ি থেকে ওই গ্রেনেড ছুড়ে মারাতে ওটা ওখানে পড়েছে। জেলখানার পাশে এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখান থেকে গ্রেনেড মারলে ওই জায়গায় এসে পড়বে। একজন জজ সাহেব বললেন, পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা নাকি এ কাণ্ড ঘটিয়ে চলে গেছে। পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে দিনদুপুরে এভাবে এতগুলো গ্রেনেড যদি শহরের ভেতরে মেরে যেতে পারে, তাহলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো কী করছিল? তাহলে তারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কীভাবে? আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, তারা কী করছিল? এভাবেই তারা সবার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাবার পথ ধরেই এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। গ্রেনেড, বোমা, বুলেট দিয়ে বারবার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে নেতাকর্মীরা আমাকে বাঁচিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়