অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

বসুন্ধরার পয়েন্ট কেড়ে নিল ব্যাঙ্গালুরু

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মালদ্বীপ ন্যাশনাল ফুটবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে গতকাল ব্যাঙ্গালুরু এফসির বিপক্ষে ড্র করে এএফসি কাপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছে বসুন্ধরা কিংস। মালদ্বীপের মালেতে অনুষ্ঠিত নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কিংস গোলশূন্য ড্র করেছে ভারতের জায়ান্টদের সঙ্গে। আগের ম্যাচে স্বদেশী মোহনবাগানের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছিল ব্যাঙ্গালুরু। এই ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ভিন্ন কৌশলে এক পয়েন্ট আদায় করে নিয়ে কাগজ-কলমে এখনো টুর্নামেন্টে টিকে রইল সুনীল ছেত্রীর দল। পরবর্তী ম্যাচে মোহনবাগান জিতে গেলে অবশ্য টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হবে ছেত্রীদের। ব্যাঙ্গালুরু এফসির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করায় দুই ম্যাচ শেষে বসুন্ধরা কিংসের পয়েন্ট চার। পরবর্তী ম্যাচে মোহনবাগান মাজিয়া স্পোর্টসকে হারালে তখন তাদের পয়েন্ট হবে ছয়।
গতকাল প্রথমার্ধে দুই দলের লড়াইয়ে ছিল সমতা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে একচেটিয়া খেলেছে ব্যাঙ্গালুরু । বসুন্ধরার জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান। তপু বর্মণ, খালিদ শাফিহ, বিশ্বনাথ ঘোষ ও তারিক রায়হান কাজীদের নিয়ে গড়া রক্ষণভাগও বড় ঝড় সামলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। আক্রমণে বসুন্ধরার আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল বেসেরাকে আজ খুঁজেই পাওয়া যায়নি। বল দখলে না রাখতে পারায় পুরো দলকে ভুগতে হয়েছে। শেষ ২৫ মিনিট প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল বসুন্ধরা। কখনো গোলকিপার কখনো ভাগ্য বসুন্ধরাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
ঘরোয়া ফুটবলে যেভাবে প্রতিপক্ষের ওপর ‘হাই প্রেসিং’ ও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে বসুন্ধরা, এএফসি কাপের মহাদেশীয় ফুটবলে গিয়ে সেটি বদলে ফেলেছে তারা। প্রতিপক্ষকে নিজের অর্ধে খেলার সুযোগ দিয়ে প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল বেছে নিয়েছেন অস্কার ব্রুজোন। স্বাভাবিকভাবে এই কৌশলেও তার পরিকল্পনার অংশজুড়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন দা সিলভা। জোনাথন, মাসুক মিয়াদের পায়ে বল গেলেই পাসের প্রথম পছন্দ রবসন।
আগের ম্যাচে মাজিয়া স্পোর্টসের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে রবসন দুর্দান্ত ফুটবল খেলায় গতকাল তাকে বোতলবন্দি করার কৌশল নিয়েছিলেন ব্যাঙ্গালুরুর জার্মান কোচ। অ্যাটাকিং থার্ডে রবসনের পায়ে বল যাওয়া মানেই তাকে প্রতিপক্ষ দুজন ঘিরে ধরেছে। রবসন বল নিয়ে দৌড়ালে তার পেছনে প্রতিপক্ষ কয়েকজনকে দেখা গিয়েছে। ২১ মিনিটে বাঁপ্রান্ত দিয়ে ড্রিফট করে ভেতরে দিকে ঢুকে পড়েছিলেন রবসন। তাকে ফেলে দেয়া হলে বক্সের ঠিক বাইরে ভালো জায়গায় ফ্রি কিক পায় বসুন্ধরা। শটটিও নিয়েছিলেন রবসন। সেটি মানব দেয়ালে লেগে ফিরে আসে।
রবসন যদি হয় বসুন্ধরার আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা, মাঝমাঠের মেরুদণ্ড আরেক ব্রাজিলিয়ান জোনাথন। রক্ষণভাগকে তো ছায়া দিয়েছেনই। প্রায় প্রতিটি আক্রমণই শুরু হয়েছে তার পায়ে। ৩৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে আচমকা বুলেট গতির শট নিয়েছিলেন জোনাথন। ফিস্ট করে বিপদমুক্ত করেছেন গোলকিপার গুরপ্রীত সিং।
বসুন্ধরা কিংস গতকাল কিছুটা দুর্ভাগ্যের শিকার বলতেই হবে। বল পজেশন, আক্রমণ সব কিছু ঠিক থাকলেও শুধু গোলটিই করতে পারেনি। ব্যাঙ্গালুরু এফসি বসুন্ধরার দুই ফরোয়ার্ড আর্জেন্টাইন বেসেরা এবং ব্রাজিলিয়ান রবসনকে দুর্দান্তভাবে মার্কিং করে। এরপরও এই দুই ফরোয়ার্ড মাঝে মধ্যে নিজেদের ঝলক দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে ব্রাজিলিয়ান রবসন রবিনহো ব্যতিব্যস্ত রাখেন ব্যাঙ্গালুরুর রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিংকে।
ব্যাঙ্গালুরুর এক পয়েন্ট পাওয়ার পেছনে যথেষ্ট অবদান তাদের জাতীয় দলের গোলরক্ষক গুরপ্রিতের। রবসনের দুর্দান্ত শট দারুণ দক্ষতায় ফেরান তিনি। রবসনকে অতিরিক্ত পাহারা দেয়ায় বক্সের আশপাশে ফ্রি কিক পেয়েছে কয়েকটি বসুন্ধরা। কিন্তু সেই ফ্রি কিক থেকে গোল আদায় করতে পারেননি অস্কারের শিষ্যরা।
বসুন্ধরা কিংসের বিদেশি ফুটবলাররা উঁচু মানের হলেও ব্যাঙ্গালুরুর ভারতীয় ফুটবলারদের মান বাংলাদেশের ফুটবলারদের চেয়ে ভালো। সেটি এই ম্যাচে স্পষ্ট। পাশাপাশি বসুন্ধরার দুই ল্যাতিন ফুটবলারকে সফল মার্কিং করায় এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে ব্যাঙ্গালুরু।
দ্বিতীয়ার্ধে কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন পূর্ণ তিন পয়েন্টের জন্য সব চেষ্টাই করেছেন। কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পায়নি দল।
৫৫ মিনিটে বিপলু-রবসন রসায়নে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল বসুন্ধরার। বিপলুর পাস থেকে বক্সের মধ্যে রবসনের শট গোলকিপার গুরপ্রীতের পায়ে লেগে বক্সে ঢোকার সময় গোল লাইন থেকে সেভ করেন এক ডিফেন্ডার। ফিরতি বলও পোস্টের মধ্যে ঢুকছিল। তখন সেভ করেন গুরপ্রীত। এরপর থেকে ব্যাঙ্গালুরুই ছড়ি ঘুরিয়েছে। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন সুনীল, ক্লেইটন সিলভারা। ৬১ মিনিটে সুনীলের হেড পোস্টে ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
৭০ মিনিটের পর থেকে বসুন্ধরার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। বিশেষ করে ৭৩ থেকে ৭৪ মিনিট। প্রথমে সুনীলের শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়েছেন গোলরক্ষক আনিসুর। পরক্ষণেই সিলভার হেড কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেছেন। ৭৪ মিনিটে তো বসুন্ধরার সমর্থকদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার কথা। সিলভার কর্নার থেকে এলান হেনরিকের হেড ক্রসবারের লেগে ভেতরে পড়ে। ভিডিও রিপ্লে দেখে সেটা গোল লাইনের ভেতরে ছিল বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু ভিএআর, গোললাইন প্রযুক্তি বা গোললাইন রেফারি না থাকায়, এ নিয়ে জোরালো আবেদনের সুযোগ ছিল না ব্যাঙ্গালুরুর। ৮২ মিনিটে জয়েশ রানার শট দারুণ সেভ করেছেন আনিসুর। ব্যাঙ্গালুরু এফসিকে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বসুন্ধরা কিংস হারাতে ব্যর্থ হলো। এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকা আবাহনী বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে হারিয়েছিল সুনীল ছেত্রীর ব্যাঙ্গালুরুকে। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে বসুন্ধরা কিংস শেষ ম্যাচ খেলবে ভারতের আরেক জায়ান্ট এবং ‘ডি’ গ্রুপের অন্যতম ফেবারিট মোহনবাগানের বিপক্ষে। অন্য দিকে ব্যাঙ্গালুরু এফসি নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে হেরেছিল তাদের স্বদেশী ক্লাব মোহনবাগানের কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচে বসুন্ধরার বিপক্ষে ড্র করে সুনিল ছেত্রিদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে প্রায়। তারা শেষ ম্যাচ খেলবে মালদ্বীপের মাজিয়ার বিপক্ষে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়