অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

ঢাকা রিপোর্ট আগস্ট ১৯৭১

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকান কনসুলেট থেকে কনসুলার জেনারেল অনুমোদিত একটি প্রতিবেদন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করেন এ. উইসবার্ড এবং আর. কার্লে। ঈষৎ সংক্ষেপে রিপোর্টটি ভাষান্তরিত হলো :
সার সংক্ষেপ : পূর্ব পাকিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। অসহযোগিতার প্রমাণ মিলছে। হিন্দু জনসংখ্যা যে হারে কমছে তা হিন্দু নিপীড়নের সমানুপাতিক। মুসলিম লীগের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন কোনো খবর নেই। বাঙালি-বিহারি সম্পর্ক খুবই খারাপ। রাজাকার বাহিনী গঠিত হচ্ছে।

সামরিক পরিস্থিতি/নিরাপত্তা
সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে সামরিক/নিরাপত্তা পরিস্থিতি ২৮ জুনের পর থেকে আরো খারাপ হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অপারেশনের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে মধুপুর বন এবং নোয়াখালী জেলা। মেজর জেনারেল ফরমান আলী বিশ্বাস করেন তোহায়া-হকের অতিবাম অনুসারীরা নোয়াখালীতে গোলযোগের জন্য দায়ী। তাদের মোকাবিলা করার জন্য সেনা ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লা ও সিলেটের মুক্তিবাহিনী তাদের অপারেশনের জন্য স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করে থাকতে পারে। এই চারটি সেক্টরে সেনা ইউনিট আক্রান্ত হবার খবর কনসাল জেনারেল কার্যালয় জানতে পেরেছে।
২৫ মার্চ পরবর্তী সময়ে সীমান্ত এলাকায় এগুলোই সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করার প্রথম নজির। মুক্তিবাহিনী এসব এলাকায় থানার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় গুলি ও পাল্টা গুলি অব্যাহত রয়েছে। অতি সম্প্রতি ২০ জুলাই কুমিল্লা শহরে মর্টারের গোলা আঘাত করেছে। প্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় অর্ধেক অংশজুড়ে সেতু ধ্বংস করা এবং শান্তি কমিটির সদস্যদের হত্যা করার ঘটনা বেড়ে গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ আছে। ১১ থেকে ১৭ জুলাই সপ্তাহে সিলেটে চা-শ্রমিকবহনকারী ট্রাক ট্যাংক-বিস্ফোরক মাইনে বিস্ফোরিত হলে ৬ জন শ্রমিক নিহত ও প্রায় ১২ জন আহত হয়। ঢাকা ও কুমিল্লা সড়কপথে দাউদকান্দি ইলিয়টগঞ্জ অংশে খাদ্যবাহী একটি ট্রাক মাইন বিস্ফোরণের কবলে পড়ে। ৩ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সড়কে ফেনী অংশে সামরিক যানবাহন আক্রমণ ও প্রতিরোধের শিকার হচ্ছে। ঢাকা শহরে রাতের বেলা বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে গত মাসে তিন-চারবার বোমাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিরোধকারীদের দুটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য শনাক্ত করা যায়। ১৫ জুলাই তারা এসএসসি (ম্যাট্রিকুলেশন) পরীক্ষা ঠেকাতে তাদের দেয়া হুমকির বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। সেনাবাহিনীর বিস্তর আয়োজন ও সতর্কতার পরও ঢাকা ও ময়মনসিংহের চারটি পরীক্ষাকেন্দ্রে তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
দ্বিতীয় সাফল্য ১৯ জুলাই ঢাকায় পাওয়ার-ট্রান্সফর্মার উড়িয়ে দেবার অপারেশন- যাতে পরিকল্পিতভাবে সুসংগঠিতভাবে ‘গ্রুপ আক্রমণ’ চালিয়ে ঢাকা শহর অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে। প্রদেশের পশ্চিমাংশে তাদের তৎপরতা কম বলে আমাদের ধারণা। এখানে মাঝে মাঝে আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ব্যাপার ঘটছে, তবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণের নজির সামান্যই। মুক্তিবাহিনীর ইউনিটগুলো এখন বাংলাদেশের ভেতরে স্থায়ীভাবে থেকে অপারেশন চালাতে শুরু করেছে, তাদের প্রতিরোধ ও প্রতিহতকরণ ক্রমাগত আধুনিক হয়ে উঠছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের সাফল্যের প্রচারণা, এসএসসি পরীক্ষায় বাধাদান ইত্যাদি এটা স্পষ্ট করে তুলেছে যে বিদ্রোহীদের বিগত মাসে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।

অসহযোগিতা
অসহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ এসএসসি পরীক্ষায় অত্যন্ত স্বল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি। মূলত মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ আতঙ্কেই তা ঘটেছে। মুক্তিবাহিনীর হুমকি বনাম ব্যক্তিগত প্রত্যয় নিয়ে পরীক্ষা বয়কট করা- কোনটা গুরুত্ব বেশি পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কনসুলেট অফিসারদের পর্যবেক্ষণ এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা এটা স্পষ্ট করে তুলেছে যে জুট বোর্ডে কোথাও না কোথাও ‘ধীরে চলো’ নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কোথাও কোথাও একই নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। অনেক আমলা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক শ্লথ গতিতে কাজ করছেন। ২৫ মার্চের আক্রমণের পর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়ে এলেও অনেকেই কাজের পূর্ব-গতিতে ফিরে আসছেন না। অসহযোগিতাই এই ধীরে চলো নীতির অন্যতম কারণ।

মুসলিম লীগের সম্ভাবনা
উপনির্বাচনে (দেশ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করা এমএনএ ও এমপিএদের শূন্য আসনে) মুসলিম লীগ কেমন করবে সে সম্পর্কে উপসংহার এত আগে টানা সম্ভব নয়। তার আগে জানতে হবে ক’টা শূন্য আসনে তারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে যাচ্ছেন এবং প্রার্থী হিসেবে তাদের পরিচিতি কী?

বাঙালি-বিহারি সম্পর্ক
আমাদের ধারণা বাঙালি-বিহারি সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। যেসব ঘটনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে আগের প্রতিবেদনে উপসংহার টানা হয়েছে তারপর সাক্ষ্য ও পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে।

হিন্দু নিপীড়ন
সবচেয়ে উলঙ্গ ধরনের নিপীড়ন ছিল হিন্দু নির্যাতন; এটা এখন অনেক কমে এসেছে। তাদের ওপর চালানো গণহত্যা এবং বিনা প্ররোচনায় গ্রামে আগুন দেবার কথা ইদানীং শোনা যায়নি। সর্বশেষ হিসাব থেকে ধারণা করা হচ্ছে ষাট লাখ পূর্ব পাকিস্তানি হিন্দু ভারতে চলে গেছে। অবশিষ্টের অধিকাংশই গা-ঢাকা দিয়ে আছে- সেনাবাহিনী সহজে পৌঁছতে পারবে না এমন জায়গায় চলে গেছে অথবা যেসব পেশা সেনাবাহিনী সহ্য করে, যেমন সুইপার, নাপিত, জেলে- এসব পেশা চলে এসেছে। কুমিল্লা শহরের যে পরিস্থিতি তার উদাহরণ দেয়া যায়। জেলার ২০ শতাংশই হিন্দু, শহরে হিন্দু ২০ শতাংশের কম হবার কারণ নেই। তবে শহরে সেনাবাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য কয়েকটি পেশা ছাড়া অন্য কোনো পেশার লোক নেই। কেবল সাইক্লোনপ্রবণ এলাকায় বেশি সংখ্যক হিন্দু রয়েছে। সে এলাকার খ্রিস্টীয় ধর্মযাজকের কাছে জানা যায়- হিন্দুদের ত্রাণসামগ্রী থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। তারা সেনা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাদের সম্পত্তি হাতছাড়া হচ্ছে।

অ-হিন্দুকরণ
অ-হিন্দুকরণের বড় উদাহরণ হিন্দুদের বহিষ্কার করা। কোথাও কোথাও হিন্দু মন্দির ও সৌধ ধ্বংস করা হয়েছে। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঘটেছে। এখন খুব সহজেই হিন্দু ভাস্কর্য পাওয়া যাচ্ছে। হিন্দু ও ইংরেজ নামের ঢাকার কিছু রাস্তা নাম বদলে মুসলমানি নাম রাখা হয়েছে।

রাজাকার
কনসুলার জেনারেল অবহিত হয়েছেন যে স্বেচ্ছাসেবক রাজাকার বাহিনী সংগঠিত করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর আদেশে স্থানীয় শান্তি কমিটি রাজাকার বাহিনী তৈরি করছে। সঙ্গত কারণেই তাদের বিশ্বাসযোগ্য যুবকদের রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, তাদের ইউনিফর্ম নেই, তবে সেনাবাহিনী তাদের অস্ত্র সরবরাহ করছে। রাজাকারদের বিশেষ কোনো গ্রাম, সেতু, বিদ্যুতের লাইন গ্রাম সীমানায় এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার প্রহরায় নিয়োজিত করা হয়।

বামপন্থি
তোহায়া গ্রুপের কমিউনিস্টরা নোয়াখালীতে খুব সক্রিয়। আহমেদুল কবির জেলে, এছাড়া বামপন্থিদের আর কোনো তৎপরতা নেই।

ভাইস এডমিরাল এস এম আহসান
ঢাকার সঙ্গে বিশেষ সখ্য ছিল ভাইস এডমিরাল এস এম আহসানের। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের অবাঙালি গভর্নর। তিনি ক্রান্তিকালের প্রশাসক, ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর গভর্নর হিসেবে শপথ নেন। তিনিও প্রত্যাশা করেছিলেন ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বেসামরিক সরকার গঠিত হবে। তার মনোভাব পাকিস্তান সরকারের অজানা ছিল না। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে তাকে প্রত্যাহার করে বেলুচিস্তানের কসাই পরিচিত লেফটন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে গভর্নর করা হয়। তিনি প্রমাণ করলেন তিনি পূর্ব পাকিস্তানেরও কসাই। মার্কিন ডেপুটি চিফ অব মিশন ১৬ আগস্ট করাচিতে তার বাসভবনে দেখা করেন এবং সাক্ষাতের ওপর ভিত্তি করে স্টেট ডিপার্টমেন্টে একটি টেলিগ্রাম পাঠান। টেলিগ্রামের পুরোটা জুড়েই ঢাকা ও পূর্ব পাকিস্তান। এর নির্বাচিত অংশ বাংলায় অনূদিত হলো :
আহসান সুপারিশ করলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশেষ প্রতিনিধিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে ‘বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে’ এখনই পাঠানো উচিত। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রেসিডেন্টকে বোঝাবেন আর তা একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের পুনর্বাসনের মাধ্যমে এবং তাকে নিয়েই করা সম্ভব।
মুজিবের ভূমিকা : আহসান বলেন, পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার একমাত্র বাস্তবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হচ্ছে রাজনৈতিক সমাধান। আর বিকল্প হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করা। ক্রমাগত সামরিক শাসন প্রয়োগ আর ৮০ হাজার সৈন্যের বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানে লালন-পালনের অর্থনৈতিক যে দায় তা পাকিস্তানের পক্ষে বেশি দিন বহন করা সম্ভব হবে না। সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ তাদের অনুগত স্থানীয় যদুমধুদের নিয়ে জোড়াতালির যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
রাজনৈতিক সমাধানের সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি, তবে তা করতে হলে ইয়াহিয়ার পক্ষে বিশেষ উদারতা প্রদর্শনের কোনো বিকল্প নেই- কারণ রক্তপাত বন্ধ করার ক্ষমতা একমাত্র মুজিব ছাড়া আর কারো নেই আর একমাত্র তার পক্ষেই বাস্তবায়নযোগ্য উত্তর বের করে দেয়া সম্ভব। আহসান মনে করেন শিথিল গ্রন্থিতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে বেঁধে, পূর্ব পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন দিয়ে সমাধান বের করা যেতে পারে। সন্দেহ রয়েছে মুজিব তা চাইবেন কিনা এবং এতসব ঘটনার পর এ প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করবেন কিনা- তবে তিনিই একমাত্র আশা। ইয়াহিয়ার মুজিবের সেবা গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে কিনা তা নির্ভর করতে মুজিবের বিচার বাতিল করা হবে না তা তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হবে এবং তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত কম সময়ে কত তাড়াতাড়ি তাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে দেয়া হবে তার ওপর।
আহসান বলেন, অন্তত মার্চের আগে মুজিব কখনো পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। আশা করা যায়, তার এই অভিব্যক্তির ব্যাপক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। মুজিবের রাজনৈতিক পুনর্বাসন মেনে নেয়া সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু পাকিস্তানি প্রশাসন বিশেষ করে সামরিক আইনের সময় ঐতিহাসিকভাবে যুক্তিসঙ্গত উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তান শাসন
এমনকি জনপ্রিয় সরকারের পক্ষেও অসম্ভব না হলেও পূর্ব পাকিস্তান শাসন করা একটি দুরূহ কাজ। সেখানকার সংকট কেবল হতাশাপূর্ণ মুখাবয়বে নয়, শোষণে, শ্রেণি বৈষম্যে, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতায়, যতটা নয় এমনকি নিয়তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিদ্রোহেও নয়; সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ২ কোটি ৬০ লাখ একর জমিতে শাসন করার মতো কোনো ধরনের সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি করা হয়নি। এই টেলিগ্রামের পরপরই রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে যে টেলিগ্রাম পাঠান তার একটি অনুচ্ছেদ ভাষান্তর করা হলো।
আহসান বিশ্বাস করতেন এবং এখনো বিশ্বাস করেন ইয়াহিয়া একান্তভাবেই চেয়েছেন দেশে বেসামরিক শাসন ফিরে আসুক। জানুয়ারিতে ইয়াহিয়া যখন পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন, আহসান বিশ্বাস করেছিলেন যে ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত, কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তিনি তার মন বদলে ফেললেন। অনুমান করা হয়ে থাকে প্রেসিডেন্টের এই অভিব্যক্তি বদলের প্রধান কারণ জুলফিকার আলী ভুট্টো। আওয়ামী লীগ নেতাদের একনিষ্ঠতার কোনো ঘাটতি ছিল না, তারা তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে উঠে আসা মানুষ, পূর্ব পাকিস্তানের ওপর যে অবিচার করা হয়েছে তার প্রতিকার চেয়ে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দাবি করেছিলেন। আহসান প্রেসিডেন্টকে সম্পূর্ণ স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছিলেন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানে বিলম্ব সর্বনাশ ডেকে আনবে এবং তখন এমনকি পরিস্থিতি মুজিবের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ফেব্রুয়ারির শেষদিকে যখন আহসানকে অব্যাহতি দেয়া হলো, প্রমাণ আছে তখন থেকেই উদ্দেশ্যপ্রবণ হয়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির আয়োজন শুরু হয়ে যায় এবং কঠোর সামরিক আইন প্রয়োগের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো নেয়া হতে থাকে। আহসান মনে করেন কোনো সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানকে বোঝেনি, এখনো বোঝে না এবং ভবিষ্যতেও বুঝবে না।
পাকিস্তান সরকার যে সিনেটর কেনেডিকে ইসলামাবাদ ও ঢাকা সফরের অনুমতি দেয়নি, এটা দুঃখজনক ও নিন্দনীয় বলে তিনি মনে করছেন; পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ খারাপ। সামরিক কর্তৃপক্ষের বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা নেই। তিনি বললেন, টিক্কা খানকে শিগগিরই পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
আহসান কথা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে বলেছেন সামরিক আদালতে মুজিবকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে, তার মৃত্যু পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হবে, তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে না।
ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়