অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

ডিজিটাল মডেল পৌরসভা করতে চাই : আহসানুল হক তুহিন মেয়র, গলাচিপা পৌরসভা

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুনতাসীর মামুন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) থেকে : প্রায় পৌনে ২০০ বছর আগে বর্তমান মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি অংশ দুর্গম বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে তৎকালীন জনমানবহীন ‘রাঙ্গাবালী’ দ্বীপে আশ্রয় নেয়। পরবর্তী সময়ে তারা পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। রাখাইনদের একটি অংশের ‘পাড়াপ্রধান’ ছিলেন ‘গ্যালাচি মং’ নামে এক প্রভাবশালী রাখাইন। এই ‘গ্যালাচি মং’-এর নামানুসারে তাদের আশ্রয় নেয়া স্থানের নামকরণ করা হয় ‘গলাচিপা’।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে গলাচিপা ও ডাকুয়া ইউনিয়নের দুটি অংশ নিয়ে ১৯৯৭ সালে গলাচিপা পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পৌর প্রশাসক আ. বারেক ঢালী প্রশাসন কাজ পরিচালনা করেন। গলাচিপা পৌরসভার বয়স ২ যুগ অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ২০১৩ সালে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ৩ দশমিক ৩৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৯টি ওয়ার্ডসংবলিত এ পৌরসভায় মোট জনসংখ্যা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ২১ হাজার ২০০। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৮৮৮ ও নারী ১০ হাজার ৩১২ জন। ভোটার ১৫ হাজারের অধিক। এ পৌরসভার আওতায় রয়েছে হাটবাজার ৫টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫টি, কলেজ ২টি, মাদ্রাসা ৫টি, গণশৌচাগার ৭টি, খেলার মাঠ ২টি এবং মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ রয়েছে ১টি।
গলাচিপা পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত আবু তালেব মিয়া। এরপর একটানা দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন হাজি আ. ওহাব খলিফা। তার মৃত্যুর পর ২০১৭ সালে উপনির্বাচনে ছেলে আহসানুল

হক তুহিন বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।
ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আহসানুল হক তুহিন বলেন, আমার বাবা হাজি আ. ওহাব খলিফা ছিলেন এই জনপদের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেয়র। তার আমলে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পৌর ভবন, পৌর মার্কেট, পৌরবাসীর সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ২টি ওভারহেড পানির ট্যাংক, ৩টি সাইক্লোন শেল্টার, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, টয়লেট, সড়কবাতি এগুলো মূলত তারই অবদান। আমি তার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমি অবস্থা ও সার্বিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রাস্তা জীবাণুমুক্তকরণ, ৯টি ওয়ার্ডে ৩৯টি পানির ট্যাপ ও সাবানসহ বেসিন স্থাপন, মাস্ক ও জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, খাদ্য সহায়তা ও টিকা নিবন্ধনে সহায়তা করছি। মাছ ও কাঁচাবাজার খোলামেলা জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে, যাতে জনগণ স্বাস্থবিধি পালন করতে পারেন। ৪টি উৎপাদক নলকূপ ও ২টি ওভারহেড ট্যাংকের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার পানি পৌরবাসীকে সরবরাহ করা হচ্ছে। ওভারহেড ট্যাংক ও পানির পাইপলাইন নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে।
এসবের পাশাপাশি আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ড্রেজার দিয়ে পৌর এলাকার পুকুর, ডোবা ইত্যাদি ভরাট করার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেজার মালিকরা পৌর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বালু ভরাট করছে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনে প্রায় ১৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা হয়েছে এবং প্রস্তাব রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ খালটি পুনরুদ্ধারসহ সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং ১২টি প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। মশক নিধনের জন্য বছরে ২-৩ বার কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
পৌর মেয়র বলেন, এ পর্যন্ত পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ৭০০টি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে এবং ২টি জেনারেটরের মাধ্যমে সাড়ে ৫০০ গ্রাহককে জরুরি বিদ্যুৎসেবা দেয়া হচ্ছে। পৌর এলাকার আরেকটি সমস্যা, বর্জ্য অপসারণের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। অর্থ স্বল্পতার কারণে ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি হয়ে গেলে পৌরবাসীকে আবর্জনা নিয়ে ভাবতে হবে না।
পৌরসভার জন্য ভবিষ্যতে কী পরিকল্পনা রয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে আহসানুল হক তুহিন বলেন, প্রত্যেক মানুষের মতো আমারও কিছু স্বপ্ন, কিছু আশা আছে। তা পূরণে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। জনগণের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাকে সঙ্গী করে আগামী দিনে দলীয় সহমর্মিতা পেলে গলাচিপা পৌরসভাকে ডিজিটাল মডেল পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যা কন্যা এবং সফল প্রধানমন্ত্রী জননত্রেী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে মনে-প্রাণে কাজ করে যাচ্ছি। শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদন পার্ক নির্মাণ, গোটা পৌর এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, ব্যায়ামাগার নির্মাণ ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এককথায় শহর হবে আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন।
তিনি আরো বলেন, তার বাবা প্রয়াত মেয়র হাজি আ. ওহাব খলিফার বিপুল জনপ্রিয়তা ও মানুষের ভালোবাসার কোনো দিন অমর্যাদা হতে দেব না। জনগণ আমাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করেছেন। জনগণের সেবায় নিজেকে আমরণ নিয়োজিত রাখতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়