মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

মো. মজিবুর রহমান মেয়র, কালিয়াকৈর পৌরসভা > আধুনিক মডেল পৌরসভা গড়ে তুলতে চাই

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. শাহজাহান মিয়া, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) থেকে : গাজীপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং রাজধানী ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কালিয়াকৈর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কালিয়াকৈর পৌরসভা। সাবেক শ্রীফলতলী, আটাবহ ও মৌচাক ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে ২০০১ সালে এ পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. জিল্লুর রহমান উপজেলার সফিপুরে এর মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে ১১-০৫-২০০৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং ০২-০৭-২০০৩ সাল থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান শরীফ। পরবর্তী সময়ে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসলে বিএনপি নেতা মো. মজিবুর রহমান ০২-০৮-২০০৪ সাল থেকে ১৭-১১-২০১১ সাল পর্যন্ত পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২৬-১০-২০১১ সালে পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর শপথ গ্রহণের পর থেকে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র হিসেবে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন মো. মজিবুর রহমান। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় আদালতে মামলা থাকায় আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
তিনটি ইউনিয়নের ১৭টি মৌজার ২৭.২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত কালিয়াকৈর পৌরসভার ওয়ার্ড ৯টি। শিল্প অধ্যুষিত এ পৌরসভায় ছোটবড় ও মাঝারি শিল্পকারখানা রয়েছে প্রায় ৩০০ এবং স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে মোট জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৭ লাখ এবং ভোটার রয়েছে লক্ষাধিক।

কালিয়াকৈর পৌর এলাকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশন, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, আনসার একাডেমি, তালেবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, খ্রিস্টান মিশনারি এবং শ্রীফলতলী জমিদারবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পৌরসভাটি ৩১-০৫-২০১২ সালে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়।
কালিয়াকৈর উপজেলার মাকিসবাথান এলাকায় অবস্থিত বর্তমান কালিয়াকৈর পৌরসভা কার্যালয়, যা পৌরবাসীর চাওয়া-পাওয়া মিটিয়ে এটি আজ আধুনিক পৌরসভায় রূপ নিয়েছে। এখনো পৌরসভার আরো কিছু উন্নয়ন প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন মেয়র আর সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান পরিষদ।
কালিয়াকৈর পৌরসভার যাত্রার শুরুতে পৌরভবন ছিল উপজেলা চত্বরে। সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কাজ করতে হতো পৌর প্রশাসকদের। তিনি বলেন, যেদিন তিনি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন সেদিন থেকে তার ইচ্ছা ছিল কালিয়াকৈর পৌরসভাকে একটি আধুনিক ও মডেল পৌরসভায় পরিণত করা। সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন নতুন রাস্তা তৈরি, পুরান রাস্তা মেরামত ও রাস্তা প্রশস্তকরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন, লাইটিং নিয়ে কাজ করে আসছেন।
তিনি কালিয়াকৈর পৌরসভার নতুন ও সুন্দর একটি আধুনিক পৌরভবন নির্মাণ করেন এবং পৌরবাসীর দুয়ারে সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ০৩টি সার্কেল অফিস স্থাপন করে নিয়মিত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
মেয়র বলেন, পৌরসভার বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। পৌর আইন অমান্য করে ভারী যানবাহন ও মাটির ট্রাক চলাচল করায় রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে বর্তমানে পৌর এলাকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আর.সি.সি দ্বারা উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাস্তা আর.সি.সি দ্বারা উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। পৌরবাসীর জন্য বড় একটি সমস্যা ড্রেনেজ ব্যবস্থা। তিনি বলেন,কালিয়াকৈর পৌরসভার যেমন উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়নের পাশাপাশি কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভাটি শিল্পাঞ্চল হওয়ায় দিন-দিন বসতবাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসাধারণের চাহিদা থাকায় নিচু জমি ভরাট করে ঘরবাড়ি ও শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই পানির স¦াভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের নিমিত্তে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৩ কিমি ড্রেন খনন এবং যেসব স্থানে অল্প বৃষ্টিতেই পানির স¦াভাবিক গতি ব্যাহত হয় সেসব স্থানকে চিহ্নিত করে ৫০ কিমি উপরে ডেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে বলে জানান মেয়র।
তবে পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়ায় এখনো ময়লা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান মেয়র। এছাড়া রাজধানীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকরণে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত পৌরবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ১০ হাজার ৪৬০টি পরিবার অর্থাৎ প্রায় ৬০-৭০ হাজার মানুষকে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্ডের আওতায় আনা হয়, যার দ্বারা একটা পরিবার বিনামূল্যে ওষুধ, বিভিন্ন টেস্ট, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, গর্ভবতী মায়ের সিজারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে পৌরসভার পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যে পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের জন্য ৭৮ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। এই কাজ সম্পূর্ণ হলে পৌর নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর হবে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক রোধে পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৮০ শতাংশ রাস্তায় সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে।
কালিয়াকৈর পৌর এলাকায় ছোট-ছোট মাঠ থাকলেও এখনও কোনো স্টেডিয়াম না থাকায় অতিদ্রুত একটি আধুনিক দৃষ্টিনন্দন মানসম্মত স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. মোজাম্মেল হক-এমপি মহোদয় ডিও লেটার দিয়েছেন বলে জানান মেয়র। এ ছাড়া একটি স্থায়ী ঈদগাহ মাঠ, একটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার কাম অডিটরিয়াম, একটা আধুনিক পৌর পার্ক, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কবরস্থান নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান মেয়র।
মেয়র মজিবুর রহমান আরো বলেন, পৌরসভাকে মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে মাস্টারপ্ল্যান হাতে পেয়েছি। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী রাস্তাঘাট-ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সব কিছুর উন্নয়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ঢাকা ও আমাদের নিকটবর্তী গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌরসভার মতো গ্রামকে শহরে পরিণত করতে হবে। সরকার পৌরসভাকে সবসময় সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। গাজীপুর-১ আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী সেভাবে সহযোগিতা করছেন। জনগণও আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়