মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে ধরা : ২২ বছর পর গ্রেপ্তার কাজী আরেফ হত্যা মামলার আসামি

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ১৯৯৯ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডের পর রাজশাহীতে পাড়ি জমান অন্যতম খুনি রওশন। সেখানে নিজের নাম ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুন জীবন শুরু করেন। চেহারায় ভিন্নতা আনতে ফেলে দেন মুখের দাড়িও। প্রথম দিকে রাজশাহীতে নিজেকে আলী নামে পরিচয় দিলেও পরে উদয় মণ্ডল নামে গাজীপুরের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। দীর্ঘ সময়ে রাজশাহীতে থাকায় গরুর খামার গড়ে তোলেন। সর্বশেষ জমির দালালি করা শুরু করেন। রওশন এতটাই সূ²ভাবে দিনযাপন করতে থাকেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার হদিসই পায়নি। তার স্ত্রী বিষয়টি জানলেও কলেজ পড়–য়া ছেলেমেয়ে জানত না সে সিরিয়াল খুনি এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এমনকি তিনি দেশে আছেন কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না।
কিন্তু সম্প্রতি একটি হত্যা মামলার তদন্তে তিনি রাজশাহী এলাকায় আছেন বলে তথ্য পায় র‌্যাব। তদন্তের এক পর্যায়ে তার মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। কিন্তু মোবাইল নম্বরটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরে গত বুধবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য নম্বরটি সচল করেন রওশন। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের এ তথ্য ধরেই তার বাসার নম্বর খুঁজে পায় র‌্যাব। কিন্তু নাম ভিন্ন হওয়ায়, এই ব্যক্তিই রওশন কিনা সেটি নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। তবুও রাজশাহীর শাহ মখদুম থানাধীন ভারালীপাড়া এলাকার ওই বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে তিনি নিজেই কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। অভিযানে সঙ্গে থাকা র‌্যাবের এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, গত বুধবার রাতে রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৫ এর একটি দল।
র‌্যাব দাবি করছে, কাজী আরেফ ছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ আরো ৬-৭ জনকে হত্যায় অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার এবং কয়েকটি ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে রওশনের। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রওশনের আসল বাড়ি মেহেরপুরে হলেও সে গাজীপুরের একটি ঠিকানা ব্যবহার করে আত্মগোপনে ছিল। রওশন রাজবাড়ীর একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করে। ১৯৯২ সাল থেকে সীমান্তে চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের কাজে জড়িয়ে পড়ে এবং কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলে। সে সময়ই তার সঙ্গে চরমপন্থি দলের সখ্যতা তৈরি হয়। যাদের সহযোগিতায় সে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করত। ১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় একটি সভায় প্রকাশ্যে কাজী আরেফসহ ৫ জনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ৫ আসামি পলাতক ছিল। তাদের মধ্যে রওশন একজন।
শুধু কাজী আরেফ নয়, ১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান আব্দুল বাকীকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের তেরাইল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে রওশন। ঘটনাস্থলে চেয়ারম্যান বাকী নিহত হন এবং তার ছেলে আবদুল্লাহ গুরুতর আহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শেষে রওশন আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ২০০০ সালে ২১ জুন স্কুল শিক্ষক আমজাদ হত্যা মামলার ১ নম্বর চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি রওশন। এ ছাড়াও তার নামে ২০০৫ সালে গাংনীতে একটি ডাকাতি মামলাও রয়েছে। রাজশাহী থেকে এসে সে এই কাজগুলো করে আবার ফিরে যেত বলে র‌্যাবকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি সভা চলার সময় ব্রাশফায়ারে কাজী আরেফসহ জাসদের ৫ নেতা নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলায় ২০০৪ সালে ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় কুষ্টিয়ার আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট নয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন, একজনকে খালাস দেন ও ১২ জনের সাজা মওকুফ করেন। ২০১৬ সালে ৮ জানুয়ারি তিন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয়জনের মধ্যে রওশনসহ ৫ জন পলাতক ছিলেন। রওশন বাদে অন্য ৪ জন হলেন হত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত মান্নান মোল্লা, জালাল ওরফে বাসার, বাকের ও জীবন। তারা ভারতে অবস্থান করছে বলে ধারণা করছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়