মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

প্রায় পাঁচ মাস পর খুলল পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** সৈকতে উচ্ছ¡াস ** ভিড় নেই পার্কে ** বন্ধ থাকছে জাতীয় চিড়িয়াখানা **

কাগজ প্রতিবেদক : করোনার বিধিনিষেধের কারণে টানা ৪ মাস ২০ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে খুলেছে দেশের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো। বৃষ্টি বিঘিœত প্রথম দিনে তেমন চাপ দেখা যায়নি এমিউজমেন্ট পার্কগুলোতে। তবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছিল মানুষের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ¡াস।
ঢাকার কাছে নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা জানান, প্রথম দিনে তেমন দর্শনার্থী না পেলেও এতেই তারা খুশি। কারণ দীর্ঘদিন পর পার্কগুলো খুলতে পেরেছেন। এতে তাদের লোকসানের পরিমাণ কমবে। এতদিন পার্ক না চালিয়েও বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান গুনতে হচ্ছিল তাদের। অনেক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছিল। গতকাল এই পার্কটিতে দুয়েক’শ দর্শনার্থী আসেন বলে জানান তিনি।
এদিকে রিসোর্ট, বিনোদন পার্ক, হোটেল-মোটেলের পক্ষ থেকে চলছে প্রচার-প্রচারণাসহ নানা ছাড়ের অফার। খুলে দেয়ার প্রথম দিনেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলে চাপ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর অনেকেই সমুদ্র তীরে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন। পর্যটক টানতে কক্ষ ভাড়া ও সেবার ওপর ৩০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও রেস্তোরাঁ মালিকরা। ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, এ কারণে বেশ সাড়াও মিলেছে। গতকাল সকালে কক্সবাজারে অনেক পর্যটক এসেছেন। এখানকার প্রায় ৪০ ভাগ হোটেলে আগাম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে।
আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, সমুদ্রসৈকত ও অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে পর্যটকদের পদচারণায় উচ্ছ¡সিত হয়ে উঠেছে। ফলে দীর্ঘদিন জনশূন্য থাকা কক্সবাজারের পর্যটন জোনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। সকাল থেকেই
সৈকতে অনেক মানুষ দেখা গেছে। কক্সবাজার সৈকতের পাশাপাশি হিমছড়ি, ইনানী, সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন, ন্যাচারপার্ক, বার্মিজ মার্কেট, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ অন্যান্য স্পটগুলোতেও মানুষের

আনাগোনা বেড়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিন যাওয়ার কোনো তোড়জোড় ছিল না।
পর্যটন চালু হওয়ায় পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়ায় উচ্ছ¡সিত প্রকৃতিকন্যা খ্যাত সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্টরাও। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে জল, পাহাড়-টিলা, নদী আর পাথর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছানাকান্দি, মিঠাপানির একমাত্র জলাবন রাতারগুল, কোম্পানিগঞ্জের সাদা পাথর এবং উৎমাছড়ায় সবুজের সমারোহ আরো বেড়েছে। জৈন্তাপুরের সারি নদী ও নগরের এমএজি ওসমানী শিশুপার্কও খুলছে আজ থেকে।
বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেয়ায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও সিলেট রুটে দৈনিক ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার প্রতিদিন ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা পথে ২টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করত। গতকাল থেকে তার সংখ্যা বাড়ানো হয়। ইউএস বাংলা গতকাল ৩টি ও নভোএয়ার ওই রুটে ৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব এমিউজমেন্ট পার্কস এন্ড এট্রাকশনের (বাপা) সমন্বয়ক অনুপ কুমার সরকার জানান, নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্ক চালু করা হয়েছে। তবে প্রথম দিন খুব একটা চাপ ছিল না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটনকেন্দ্রগুলো চালাতে হবে বলে তারা খুব বেশি দর্শনার্থী এই মুহূর্তে প্রত্যাশাও করছেন না। এ কারণে প্রবেশ বা কক্ষ ভাড়ায় কোনো ছাড় বা অফার তারা ঘোষণা করেননি। তিনি আরো জানান, অনেক দিন বিনোদন পার্ক বন্ধ থাকায় এ খাতের বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। এখন টিকে থাকার লড়াই চলছে। ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ দর্শনার্থী প্রবেশ করার নিয়ম মেনে খোলা হয়েছে। পুরো বিষয় তদারকির জন্য বাপা একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। এই সেলের সদস্যরা বিভিন্ন পার্ক সরজমিন পরিদর্শন করছেন।
প্রসঙ্গত, ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ দর্শনার্থী প্রবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত দিয়ে গত ১২ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে। গত বছর করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে বন্ধ হয়েছিল পর্যটন। এরপর সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে গত বছরের ১৭ আগস্ট চালু হলেও চলতি বছরের ১ এপ্রিল আবার বন্ধ হয়ে যায় পর্যটনকেন্দ্র।
আপাতত খুলছে না মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা : বিধিনিষেধ শিথিল করার পর সব পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেয়া হলেও মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা আপাতত বন্ধই থাকছে। প্রাণীদের নিরাপত্তায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আগামী মাসের শুরুর দিকে চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় গতকাল অনেককেই দূর-দূরান্ত থেকে পরিবারসহ জাতীয় চিড়িয়াখানায় এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, জাতীয় চিড়িয়াখানা অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রের চাইতে আলাদা। এখানে জীবন্ত প্রাণী রয়েছে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একটি আক্রান্ত হলে তা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য ঝুঁকি এড়াতে এখনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়