মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

আশুরার শিক্ষা ও করণীয়

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসলামি পরিভাষায় মহরমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। মহরম হলো চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাস। হজরত ওমরের (রা.) শাসন আমলে ১৬ হিজরিতে প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) ইরাকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমরের (রা.) কাছে পত্র লিখে জানালেন, আপনার পক্ষ থেকে নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের কাছে পৌঁছে তাতে দিন তারিখ না থাকায় কোন চিঠি কোন দিনের তা নিরূপণ সম্ভব হয় না। ফলে নির্দেশ বাস্তবায়নে অসুবিধা হয়। আমরা চিঠির ধারাবাহিকতা বুঝতে না পেরে বিব্রত হই। গভর্নরের এই চিঠি পেয়ে হজরত ওমর এ বিষয়ে পরামর্শ সভা আহ্বান করেন। কীভাবে একটি ইসলামিক পঞ্জিকা প্রবর্তন করা যায় সে বিষয়ে হজরত ওসমান (রা.) ও হজরত আলীসহ বিশিষ্ট সাহাবিদের কাছে পরামর্শ চান। পরামর্শ সভায় সাহাবিরা বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন। কেউ বলেন মহানবীর (সা.) জন্ম মাস থেকে বর্ষ গণনা শুরু করা হোক। কেউ বলেন মহানবীর (সা.) ওফাতের মাস থেকে বর্ষ গণনা শুরু হোক। অনেকেই পরামর্শ দেন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের মাস থেকে বর্ষ গণনা করা হোক। সবার পরামর্শক্রমে হজরত ওমর (রা.) হিজরতের বছরকে ইসলামি সালের সূচনা বছর হিসাবে ধরে ওই বছরের মহরম মাস থেকে নতুন হিজরি পঞ্জিকা চালুর সিদ্ধান্ত নেন। হিজরি সালের প্রথম মাস মহরম একটি বরকতময় মাস। পবিত্র কুরআনে এই মাসকে শাহরুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই মাসে রয়েছে ফজিলতপূর্ণ আশুরা।
সৃষ্টির শুরু থেকে মহরমের ১০ তারিখ, তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরা মর্যাদাবান ও মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছে। আগে মুসলমানদের জন্য আশুরার রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে নফল রোজার মধ্যে আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। মহানবী (সা.) বলেন আমার বিশ্বাস আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ পাক বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি আরো বলেন, রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও তবে মহরম মাসে রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে যেদিন আল্লাহ তায়লা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও তওবা কবুল করবেন। এদিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেছেন। এদিন নুহ (আ.)-এর প্লাবন সমাপ্ত হয় এবং নুহ (আ.)-এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ নামক পর্বতে গিয়ে থামে। এদিন হজরত ইব্রাহিম (আ.) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পেয়েছিলেন। এদিন হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এদিন হজরত আইয়ুব (আ.) রোগমুক্তি লাভ করেন। এদিনেই হজরত সুলাইমান (আ.) তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এদিনে হজরত ইয়াকুব (আ.) হারানো পুত্র হজরত ইউসুফকে (আ.) ৪০ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। এদিনে হজরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এদিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। আশুরার পবিত্র এই দিনে আরো বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল। সর্বশেষ ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালার মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনার কারণে আশুরা বহুল পরিচিত। মহানবীর (সা.) ওফাতের অর্ধশতাব্দী পর ৬১ হিজরির ১০ মহরম শুক্রবার এক অসম যুদ্ধে হজরত হোসাইন (রা.) শাহাদতবরণ করেন। প্রাণ দেন শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ অনেকেই। কারবালা প্রান্তরে হজরত হোসাইন (রা.) অকাতরে জীবন দিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন অন্যায়, অবিচার, জুলুম, শোষণের কাছে মাথা নত নয়; বরং তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে হবে।
আশুরার দিনে কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে চলমান কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব প্রকার জাহিলি রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। ফজিলতের এই মাসে আমরা রোজা এবং নফল ইবাদতসহ বিভিন্ন নেক আমল করব পাশাপাশি কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নিবো।

সাইফুল হক সিরাজী, লেখক : শিক্ষক ও গবেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়