সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানববন্ধন

আগের সংবাদ

ঝুঁকিতে উদারপন্থি ও নারীরা : শরিয়া আইনে দেশ চালানোর ঘোষণা তালেবান প্রশাসনের, তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে

পরের সংবাদ

জীবনযুদ্ধে শিক্ষার আলোবঞ্চিত কয়রার জেলেপল্লীর শিশুরা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ সিরাজউদ্দৌলা লিংকন, কয়রা (খুলনা) থেকে : ওদের কানে পৌঁছায় না স্কুলের ঘণ্টা। যে বয়সে হাতে থাকবে বই, কাঁধে থাকবে স্কুল ব্যাগ; সে বয়সে নদীর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছ ধরে ওরা। যে বয়সে হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা; সে বয়সে ওরা মাথায় বহন করে মাছের ঝুড়ি। এমন শিশুদের খোঁজ মেলে উপকূলের কয়রা উপজেলার একাধিক জেলেপল্লীতে। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সুন্দরবন বেষ্টিত নদীর কূল ঘেঁষে খুলনার কয়রা উপজেলা। সেখানে হাজারো জেলেদের বসবাস। নদী ভাঙনে দিশেহারা ওই জনপদের মানুষ। ৭০ ভাগ লোক নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। পৈতৃক পেশাকে ধরে রেখেছেন উপকূলের এ অঞ্চলের হাজারো জেলে।
দারিদ্র্যের সংসারে একটু আয়ের আশায় এখানকার শিশুরা খুব কম বয়সেই বেছে নিতে বাধ্য হয় নদী ও জেলে জীবন। যেখানে তাদের এই বয়সে হাসি-খুশি ও আনন্দ-উল্লাসে বেড়ে ওঠার কথা, সেখানে শুধুই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জড়িত। যে বয়সে শিশুটির হাতে থাকার কথা ছিল বই-খাতা, সেই শিশুটির হাতে আজ মাছ ধরার জাল। দিন কাটে তার নদীর বুকে। সন্তানদের পড়ালেখা করানোর প্রতি আগ্রহ নেই তাদের বাবা-মায়ের। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে পল্লীর অধিকাংশ শিশুদের জীবনের গল্প এমন।
সরেজমিনে দেখা যায় কয়রা উপজেলার, কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, আড়পাঙ্গাসিয়া, খোলপেটুয়া নদীতে অসংখ্য শিশু প্রতিদিন মাছ ধরে। ওরা জাল টানা, কিংবা বৈঠা ধরার কৌশল শিখেছে ষোলোআনা। জেলে নৌকায় কাজ করা অধিকাংশের বয়স ৮-১৫ বছর। জীবনের প্রয়োজনে তারা এই বয়সে হয়ে ওঠে দক্ষ মাঝি বা জেলে। মাঝে মাঝে বাবার কাজের দায়ভারও তাদের বইতে হয়। ধরা মাছ নিয়ে বাবা হাটে গেলে বাবার অনুপস্থিতিতে উত্তাল নদীতে নৌকা নিয়ে চলে যায় শিশুটি। দিন শেষে এই মাছ বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হয় তাদের পরিবারের মানুষগুলো।
জোড়শিং গ্রামের ক্যানিং পাড়া এলাকার বাসিন্দা সেলিম গাজীর ছেলে সবুজ (১৩) বাবার মাছ ধরার সঙ্গী। সেলিমের ভাষ্য ‘স্কুলে যাইতে তো ইচ্ছা করে তবে কাজের জননি যাইত পারিনে। জোয়ার আসার আগেই জাল পাতি, আর ভাটিহোলি পানি টানলে মাছ নে আসতি আসতি স্কুল ছুটি হুই যায়। এখন করোনার জন্যি স্কুল বন্ধথ।’ এ অঞ্চলের কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মাছ ধরা আমাদের পৈতৃক পেশা। এই পেশাকে ধরে রেখেছি এখনো। আমাদের সন্তানরা সেই পেশা ধরে রাখবে। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করানোর খরচ নেই। তাই মাছ ধরার কাজ শিখাচ্ছি। ছেলেবেলা থেকে কাজ শিখলে বড় হয়ে একজন দক্ষ মাঝি হিসাবে নিজেদের গড়তে পারবে ওরা। তেঁতুলতলার চ্বর গ্রামের জেলে আক্কাস (৪৫) বলেন, ‘সব পরিবারই এখন বোঝে যে, তাগে ছেলেমেইগুলারে পড়ানো উচিত। কিন্তু পেটের তাগিদে সবাই তো পুড়াইতে পারে না।’
দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান কবি শামছুর রহমান জানান, ‘নৌকায় একজন জেলের পক্ষে জাল টেনে মাছ ধরা কষ্টকর। মাছ ধরতে হলে আরো লোকের দরকার হয়। দরিদ্র জেলেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার পরিবারের মানুষগুলোকে সহকারী হিসেবে ব্যবহার করে। মূলত এই কারণে শিশুগুলোকে স্কুল ছাড়তে হয়।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আলাউদ্দিন বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষিত করতে হবে এমন প্রবণতা কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই অঞ্চলে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের বিচরণ বেশি। শিশুদের শিক্ষিত করার প্রবণতা তখন বৃদ্ধি পাবে যখন সমাজ থেকে অভাব দূর করা যাবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়