অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

সেই ভিক্ষুক এখন ঘরের মালিক! ‘আল্লাহ দয়া হরছে হাছিনা ঘর দিছে’

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন জর্জ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরামা গ্রামের সখিনা বেগম আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘বাড়িঘর তো নাইগা। বাড়িঘর যদি থাকত বাবা, তে আর এহেনো (এখানে) আইলাম অইলে (আসতাম)? মাইনষের বাইত (বাড়ি) রইছি (থেকেছেন)। একটা ছেলে থাহে হউর (শ্বশুর) বাইত ছুডু (ছোট) ছেলেডারে লগে (সঙ্গে) রাহি (রাখি)। আর চাইট্টা (৪) মেয়ে বিয়া দেয়ালছি। আমি বহুত বছর দইরা (যাবৎ) বাইরে থাকতাছি। বরামা গেরামে আছলাম (ছিলেন) মাইনেষর বাইত-ই। ভিক্ষা-চিক্কা হইরা ভাড়াও দিছি, কিছু খাইছি বাবা, পেটটা বাঁচাইছি, মিছা কতা কইলে বাবা লাভ নাই। এনো (এখানে) উড়ছি (উঠেছেন) মাসেক খানে দরে (এক মাসের কাছাকাছি)। খুব কষ্ট হইরা বাবা আল্লাহ দয়া হরছে (করেছে)। হাছিনা ঘর দিছে। অনে (এখন) এট্টু বালাই (ভালো) লাগতাছে বাবা। নিজের বাড়ির মতোন, ঠাঁই মতোন (নিশ্চিত নিজের বাড়ি)। বিত্তে (মনের ভেতর) কোনো ডুরকুড়ি (ভয়) নাই, যে একজনে কইতারতো না (বলতে পারবে না) যে, এই বেডি বাড়া (ভাড়া) দিছত (দেয়া) না যাইগ্যা (চলে যাওয়া)। তর বাড়া কবে দিবে? এলিগ্যা (এজন্য) আমার এট্টু আনন্দ অইছে বাবা। ভিক্ষা করলেও এহন নিজের ঘরে থাকি শান্তি লাগে।
বরমী ইউনিয়নের গোলাঘাট ভিটিপাড়া গ্রামের সাদিকুল ইসলাম (৩২)। তিনি বলেন, যাদের বাড়িঘর নেই তারাই বুঝে নিজের বাড়িঘর না থাকার যে কী যন্ত্রণা। অভাবের কারণে বাবা ভিটেবাড়ি বিক্রি করেছেন ছোটকালে। নিজের বাড়িতে ১৫ বছর বড় হয়েছেন। বাকি সময় মানুষের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। একেক সময় একেক বাড়িতে ভাড়া রয়েছেন। কখনো এলাকায় কখনো এলাকার বাইরে। বাড়ি পেয়ে মনে হচ্ছে তার ভেতর থেকে একটা কিছু হারিয়ে গিয়েছিল, সেটা তিনি ফিরে পেয়েছেন।
বাড়িঘর হারানোর পর আধা পাকা বাড়ি পেয়েছেন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পেয়ে খুব ভালো বোধ করছেন। টয়লেট, রান্নাঘর, থাকার ঘর সংযুক্ত থাকায় খুশি হয়েছেন।
অশীতিপর হযরত আলী বলেন, একটি ঘরের জন্য উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা, উপজেলার রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সবার কাছে গিয়েছেন। অবশেষে একটি ঘর পেয়েছেন। তিনি বলেন, আগে মানুষের বাড়িতে ভাড়া থেকেছেন। ভিক্ষা বৃত্তি করে মাস শেষে দুই, আড়াই, তিন হাজার টাকা ভাড়ায় থেকেছেন। জীবনে বাড়ি পাল্টিয়েছেন বহুবার। এখন সেসবের কোনো ঝামেলা নেই। মাস শেষে কাউকে ঘর ভাড়া দিতে হবে না।
মুলামুলিরটেক এলাকার মৃত আইনুদ্দীনের স্ত্রী উপকারভোগী এশা বেগম জানান, তাদের এলাকায় ঘর নির্মাণে নতুন করে মাটি ভরাট করতে হয়নি। বন্যা বা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না এমন জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ঘর নির্মাণ ছাড়া মাটি ভরাট বা জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হবে এমন কোনো কাজ করতে হয়নি।
তেলিহাটী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার জানান, তার এলাকায় ২০ জন গৃহহীন মানুষ গৃহ পেয়েছে। তারা সবাই ওইসব ঘরে বসবাস করছেন। সম্প্রতি যে পাকা ঘরগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো কোনো রকম ক্ষতি হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কোনো ক্ষতি হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়