অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

সাপকেন্দ্রিক কুসংস্কার পরিহার করুন

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাপ নিয়ে বেশকিছু কুসংস্কার আমাদের সমাজে বিদ্যমান। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যারা থাকে তাদের বিশাল একটা সংখ্যা এখনো এসব বিশ্বাস করে। লোকমুখে শোনা যায়, যদি কখনো কোনো ব্যক্তি কোনো সাপকে রাগিয়ে দেয় তাহলে সেই সাপ সেই ব্যক্তিকে খুঁজে কামড় দেবে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে সাপ খুবই ভুলোমনা একটা প্রাণী। এদের খাওয়া, বাঁচা এবং প্রজনন ছাড়া অন্য কাজে দেখতেই পাওয়া যায় না। আবার এমনো হয় যে, সাপ নিজের আস্তানাই ভুলে গিয়েছে। সেখানে অন্য কাউকে কোনোভাবেই মনে রাখা সম্ভব না। সাপের স্মৃতিশক্তি অনেক দুর্বল। তবে হ্যাঁ, সাপ তখনই আপনাকে কামড় দেবে যখন সে আপনাকে তার জন্য হুমকি মনে করবে। নিজের আত্মরক্ষার জন্য সে কামড় দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। অনেকেই বলে সাপ দুধ খায়। অথচ সাপ কখনো দুধ হজমই করতে পারে না। অনেক সাপের ক্ষেত্রে দুধ হচ্ছে বিষের মতো। দুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মৃত্যুও হতে পারে। অনেক সাপুড়ের কাছে দেখতে পাওয়া যায় সাপ দুধ খাচ্ছে। আপনিও হয়তো দেখে থাকবেন। এক্ষেত্রে তারা দীর্ঘদিন সাপকে কোনো তরল পদার্থ খেতে দেয় না। যার কারণে কোনো তরল পদার্থ সেই সাপের সামনে ধরলে তারা সেসব পান করা শুরু করে। অনেকেরই বিশ্বাস সাপ নাকি বিন বাজানো দেখলে সেই বিনের সুরে নাচে। এটা পুরোটাই একটি ভ্রান্ত ধারণা। বিনের সুরে নয়, বিনের দুলুনি দেখে সাপ নিজে দুলতে থাকে। আবার অনেকের কাছেই শুনতে পাওয়া যায় যেখানে সুগন্ধিযুক্ত ফুলের গাছ থাকে সেখানে সাপ আসে। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে ফুলের সুবাসে ছোট ছোট পোকামাকড় আসে। এসবের জন্য ব্যাঙ আসে। আর সাপ এদের খেতে আসে।
বিষহীন সাপের কামড়ে সামান্য ব্যথা, কামড়ানো স্থান ফুলে যাওয়া ও ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। এসব লক্ষণ থাকলেও ঝুঁকি নেয়াটা ঠিক নয়। বিষধর সাপের কামড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে দেখা যায় যথাযথ সচেতনতার অভাব। ওঝা বা বেদের মাধ্যমে কুসংস্কারকে ভিত্তি করে চিকিৎসা করানো এবং রোগীকে হাসপাতালে আনতে বিলম্ব করাও একটি কারণ। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে নিকটবর্তী হাসপাতালে আনতে হবে। সাপে কাটলে রোগীকে আতঙ্কিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। আতঙ্কের কারণে হার্ট অ্যাটাক করে রোগী মারা যেতে পারেন। রোগীকে বোঝাতে হবে বহু মানুষ সাপের কামড় খেয়েও বেঁচে আছেন। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। রোগীর নড়াচড়া কম হতে হবে। বিষধর সাপ কামড়ালে তাতে বিষ ধীরে ধীরে ছড়াবে। সাপে কাটা ব্যক্তিকে হাঁটতে না দিয়ে কাঁধে বা কোনো যানবাহনের সাহায্যে হাসপাতালে খুব দ্রুত নিয়ে যেতে হবে। বিষধর সাপের বিষের বিরুদ্ধে বিশেষ ওষধ হলো অ্যান্টিভেনম। দেশে প্রায় প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজে এবং কিছু কিছু জেলা সদর হাসপাতালে সাপের বিষের প্রভাব প্রতিরোধী এই ওষুধ মজুত আছে। বিষধর সাপে কাটা রোগীর জন্য এটি একমাত্র চিকিৎসা। অ্যান্টিভেনম শরীরকে সাপের বিষের প্রভাব থেকে মুক্ত করে। ঘোড়ার দেহে সাপের বিষ প্রবেশ করার মাধ্যমে ঘোড়ার দেহে অ্যান্টিভেনম তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাপের ধরন, কামড়ের ধরন ও উপসর্গ প্রভৃতি দেখে অ্যান্টিভেনমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং রোগীর বা রোগীর অভিভাবকের অনুমতি নিয়েই রোগীর দেহে সেটার প্রয়োগ করা হয়। একটু সচেতন হলেই সাপের কামড় থেকে দূরে থাকা যায়। ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে বা জঙ্গলের আশপাশে সাবধানে চলাচল করতে হবে। ঝোপঝাড় কিংবা পুকুরের আশপাশে অন্ধকারে চলতে গেলে সঙ্গে টর্চ রাখতে হবে। সচরাচর সাপ পায়ে বেশি দংশন করে। তাই জুতা ব্যবহারে খানিকটা আশঙ্কামুক্ত হওয়া যায়। রাতে ঘুমানোর সময় বিছানা ভালো করে ঝেরে ফেলতে হবে। মশারীর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। ঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অনেক বাসাতে রান্নাঘরে ইঁদুরের উপদ্রব থাকে। এই ইঁদুর খেতেই মাঝেমধ্যে সাপ বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তাই বাড়িতে ইঁদুরের উপদ্রব কমাতে হবে। সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করে চললেই সাপের কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সাপ দেখলেই অনেকে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে। ব্যাপারটা মোটেও ভালো নয়। সাপকে বিরক্ত না করলে কামড়ায় না। শুধু তার নিজের আত্মরক্ষায় দংশনে উদ্বুদ্ধ হয়। সাপ আমাদের শত্রæ নয় বরং বন্ধু বলা যায়। সাপ মেরে ফেললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সাপ ইঁদুর ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখে। যার কারণে ফসলে ভালো ফলন দেখা যায়। এছাড়াও সাপের বিষ থেকে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি রোগের ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে। তাই সাপকে বিরক্ত না করে তাদের মতোই থাকতে দেয়া উচিত। সাপের ব্যাপারে সবাই সার্বিকভাবে সচেতন হলেই কমে আসবে সাপে কাটার মতো ঘটনা। ফলে বেঁচে যাবে মূল্যবান আরো কিছু প্রাণ।
মাহমুদুল হাসান মাহদি
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়