অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

চার বছর পর সচিব সভা আজ : গুরুত্ব পাবে কোভিড, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও অর্থনীতি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাতটি আলোচ্যসূচি রাখার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪ বছর পর আজ বুধবার সকালে সচিব সভায় বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় পরিকল্পনা বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠেয় এ সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২ জুলাই সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সচিব সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সর্বশেষ সচিব সভার পর ৪ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে গত দেড় বছর ধরে কোভিড চলছে। এই কোভিড মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সচিবদের আলাদা গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়া গত ৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী নানা প্রকল্পে সরাসরি সচিবদের যুক্ত করেছেন। এরপর জাতীয় সংসদে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ আমলাদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের পরই দেশজুড়ে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আজ সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সভা বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, সভায় আলোচনার জন্য সাতটি বিষয় রাখা হয়েছে। এই সাতটি বিষয় হচ্ছে- খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসেবায় বিবিধ পদক্ষেপ, কোভিড-১৯ পরবর্তী উত্তরণ এবং অর্থনীতিকে সুসংহত রাখার জন্য করণীয়, আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং মুক্ত আলোচনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব ভোরের কাগজকে জানান, সভায় সাতটি আলোচনা রাখা হলে প্রথম ছয়টি বিষয়ে নথি ধরে প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে পারেন এবং এই ছয়টি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যা নির্দেশনা দেবেন তা মেনে নিয়ে সচিবরা কাজ করবেন। তার মতে, সভায় মুক্ত আলোচনাটিই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে সচিবরা কথা বলবেন। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, আজকের সচিব সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কোনো দাবি-দাওয়া উত্থাপন করব না।

কারণ দেশ এখন করোনায় বিপর্যস্ত। এ কারণে সভায় আমরা নিজেদের দাবি বাদ রেখে কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা এবং অর্থনীতির ওপর আলোচনায় জোর দেব। তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলে কীভাবে স্কুল-কলেজ খোলা

হবে এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলবে, মানুষের অর্থনীতির কী অবস্থা হবে এবং আমাদের কি করণীয় থাকবে- তাই মূলত সরকারপ্রধানের কাছ থেকে শুনব।
জানা গেছে, ৪ বছর আগে ২০১৭ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় ২৬টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একই বছর ২৩ জুলাই সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দেন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সচিবের সঙ্গে দেখা বা কথা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মিলনমেলা ‘সচিব সভায়’ সরাসরি অংশ নেননি তিনি।
সর্বশেষ গত ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সচিব সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়। সেই সভাকে কেন্দ্র করে ৪ বছর আগের সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়ে সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে চিঠিও দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, যা আজকের সচিব সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।
চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন এর মূল বিষয়বস্তু ছিল একটি সক্রিয় ও জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা এবং দেশের মানুষের স্বার্থসংরক্ষণ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানিয়ে সচিবদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করুন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে নয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও জনগণের সেবক হিসেবে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগে সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করুন। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা জনগণই বিচার করবে। তবে বেশ কিছু নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু চলমান রয়েছে। যেমন সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে তুলে ধরা। গত এপ্রিল পর্যন্ত এগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতির হার প্রায় ৬০ শতাংশ। অনেক নির্দেশনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ফলে এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় জানতে চাইবেন।
কী ছিল ২৬ দফা নির্দেশনায় : রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য কাস্টমস ও ব্যাংকিং কার্যক্রম সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। পাহাড় ও টিলা-অধ্যুষিত এলাকার পরিবেশ রক্ষা, ভূমিধস প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। জরুরি দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। রাস্তাঘাট নির্মাণের সময় প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ ও রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরোপণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। এছাড়া জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম তিন মাস প্রকল্পের পেপারওয়ার্ক সম্পন্ন করে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে কাজের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প বাছাই করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সমাপ্ত করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়নে ব্যাংক সুদের হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর’ নির্ধারণ করতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। অর্থবছরের শুরুতেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়