অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

কথামালা ও কবিতায় স্মরণ শামসুর রাহমানকে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শ্রদ্ধা, কথামালা ও কবিতায় ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কবি শামসুর রাহমানকে স্মরণ করেছে বাংলা একাডেমি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকীর অনলাইন অনুষ্ঠানের এক পর্বে দেশের অন্যতম প্রধান এই কবিকে স্মরণ করে একাডেমি।
এতে শামসুর রাহমানের স্মৃতিচারণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি ও বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি শামসুর রাহমান প্রয়াত হওয়ার ১৫ বছর পরেও মানুষের মননে ও চিন্তায় তিনি জায়গা করে নিয়েছেন। আমৃত্যু তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন বলে দেশের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা চিরজাগরুক। জাতীয় শোক দিবসের মাসব্যাপী এই অনলাইন আয়োজনে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে আমরা প্রখ্যাত এই প্রয়াত কবি ও সাহিত্যিকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই ও তাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনার পর তাকে স্মরণে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা তার কবিতা ‘ধন্য সেই পুরুষ’ পাঠ করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও ‘যাঁর মাথায় ইতিহাসের জ্যোতির্বলয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন রফিকুল ইসলাম।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলির নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শামসুর রাহমান। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। শামসুর রাহমানের ডাক নাম বাচ্চু। পঞ্চাশের দশকে তিনি আধুনিক কবি হিসেবে বাংলা কবিতায় আবির্ভূত হন।
শামসুর রাহমান পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজে সহসম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে রেডিও পাকিস্তান, দৈনিক পাকিস্তান (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা) ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করেন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে কবিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় লেখেন ‘হাতির শুঁড়’ নামক কবিতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন অসাধারণ কবিতা ‘টেলেমেকাস’। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তানে কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসংগীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৬৮ সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন আইয়ুব খান। যার প্রতিবাদে ওই বছরের

আগস্টে ৪১ জন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন। অন্যতম ছিলেন শামসুর রাহমানও। কবি ক্ষুব্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহীদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিকভাবে মারাত্মক আলোড়িত হয়ে তিনি ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি রচনা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। এপ্রিলের প্রথমদিকে তিনি লেখেন মুক্তিযুদ্ধের কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী চার বছরে তিনি প্রথম বছরে ‘শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা’, দ্বিতীয় বছরে ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা’, তৃতীয় বছরে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ এবং চতুর্থ বছরে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা’ লেখেন। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা’।
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়