অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব : চরফ্যাশনে বাস্তুহারা হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনে নানা দুর্যোগের শিকার হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে বারবার সৃষ্টি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ- বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াস ও টর্নেডোসহ লবণাক্ততা। ফলে দিন দিন বাস্তুহারার সংখ্যা বাড়ছে এ উপজেলার দ্বীপাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে। সেই সঙ্গে দরিদ্র মানুষগুলোর জীবন ও জীবিকা নির্বাহে বাড়ছে অধিক ব্যয়। বৈশ্বিক জলবায়ুপ্রবণ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। আর এ দেশের জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলা। সূত্রমতে জেলার ১৮ লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, জলোচ্ছ¡াস ও টর্নেডোয় আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে গত ৪৫ বছরে তেঁতুলিয়া ও মেঘনার করাল গ্রাসে জেলার ৫৭ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে যায়। সেই সঙ্গে লাখেরও বেশি মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছেন। নদীভাঙনের শিকার উপজেলার ঢালচর, কুকরি-মুকরি, চরপাতিলাসহ একাধিক উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ শিশুই জড়িয়ে পড়ছে জেলে পেশায়।
চরফ্যাশনের ভাঙনকবলিত ঢালচর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে জাহানপুর ইউনিয়নের তুলাগাছিয়া এলাকার আবাসন প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছে শত শত পরিবার। উপজেলার প্রায় ৪০টি আবাসনে ভাঙনকবলিত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রায় দুই হাজার দরিদ্র পরিবার বসবাস করছে। এসব পরিবারের অধিকাংশ নারীই ভুগছেন পুষ্টিহীনতাসহ শারীরিক নানা জটিলতায়। জেলে শিশু মো. সাদ্দাম হোসেন (১৩) পড়ালেখা করত ঢালচরের একটি মাদ্রাসায়। কয়েক বছর আগে নদীভাঙনে সে পরিবারের সঙ্গে চর-ফকিরা আবাসনে বসবাস করছে। পারিবারের অভাব-অনটনে তার আর পড়ালেখা হয়নি বলে জানায় সাদ্দাম হোসেন। একইভাবে জাহানপুরের তুলাগাছিয়া আবাসনের শিশু রুবেল (১২) নদীভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে ঢালচর থেকে এসে বাস করছে। রুবেল জানায়, ঢালচরের একটি বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় তাকে এ অঞ্চলে চলে আসতে হয়েছে। তবে আর স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি সে। বাবার সঙ্গে নদীতে মাছ শিকারে যেতে হচ্ছে তাকে। এ বিষয়ে উপজেলা জলবায়ু ফোরামের সভাপতি এম আবু সিদ্দিক বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে শীত, গরম ও বর্ষার ভারসাম্যতা হারিয়ে গিয়েছে। এছাড়া চরফ্যাশনের কয়েকটি দ্বীপাঞ্চলসহ উপজেলার কিছু এলাকায় নদীভাঙনের প্রবণতা খুব বাড়ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস ও বিভিন্ন এলাকার ডুবোচরের কারণে সমুদ্র থেকে মাছের ঝাঁক নদীতে আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা। যার প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। এছাড়া এ উপজেলায় বন্যা-তুফানের আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় ঝড়-জলোচ্ছ¡াসে খামারি ও গৃহস্থের পুকুর-জলাশয় এবং মাছের খামার ডুবে গিয়েও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সøুইস গেটগুলো দিয়ে জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি প্রবেশ ও বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে কৃষকদের ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। বন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, চরফ্যাশনের ঢালচরসহ কয়েকটি এলাকায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার ভাঙনে হাজার হাজার হেক্টর জমির বনায়ন ও কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া লবণাক্ত পানির কারণে ম্যানগ্রোভ বনের চারা মরে যাচ্ছে। এবং কমে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এছাড়া বন্যপ্রাণীর মিঠা পানির জলাশয়গুলোর পানিও লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা ত্রাণ ও প্রকল্প কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, আবাসনগুলোতে প্রায় ১ হাজার ৫শ পরিবার বাস করছে। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে পুরনো আবাসনের সংস্কার করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা ২-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে নদী ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাঙনকবলিত এলাকার বেড়িবাঁধগুলোর উচ্চতা কিন্তু বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ও উচ্চ বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়