বিজিএমইএ : সব স্থলবন্দর দিয়ে ইয়ার্ন আমদানির সুযোগ দাবি

আগের সংবাদ

করের আওতায় আসছেন ব্যাংকের কার্ডধারীরা!

পরের সংবাদ

শোক দিবসের আলোচনায় শেখ হাসিনা : কুশীলবরাও বের হবেন সেদিন বেশি দূরে নয়

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার নেপথ্যের কুশীলবরাও ধরা পড়বে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে। যারা হত্যাকারীদের পাশে ছিল। আর যারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। সবাই সমানভাবে দোষী। অনেক ঘটনা জানি। আগে হত্যার বিচার করাটা খুব জরুরি ছিল, সেটা করেছি। যারা জড়িত ছিল, ধীরে ধীরে একদিন তারাও বের হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে কারবালার সঙ্গে তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য যখন কোনো হত্যাকাণ্ড হয়, তখন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান শুধু তাদেরই হত্যা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটল, যা একমাত্র কারবালার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। সেখানে শিশু-নারী কাউকেই খুনিরা রেহাই দেয়নি।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। সভার শুরুতেই ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট

নীরবতা পালন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় বাহাত্তর সাল থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা দেশে ফেরার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি হলো। জাসদ সৃষ্টি হলো। পাকিস্তানি দোষর, বড় বড় নেতাদের অনেকেই পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেছে। যারা এদেশে ছিল, তারা যেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেল, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গেল।
তিনি বলেন, যেখানে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে বছরের পর বছর সময় লাগে, সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বছরও সময় দেয়া হলো না, সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনা শুরু হয়ে গেল, ধৈর্য ধরা হলো না। এটা নাই, ওটা নাই। এটা হবে না কেন, হচ্ছে না কেন? নানা কথা লেখা হলো।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কারা সেগুলো লিখেছিল, কাদের খুশি করতে? কারা এই হত্যাকাণ্ডের অবস্থানটা তৈরি করছিল? আমি জানি, যারা সরাসরি হত্যা করেছে, নিজেরা স্বীকার করেছে। বিবিসির সাক্ষাৎকারে রশিদ-ফারুক বলেছিল, যে তারা এই হত্যা করেছে। কারণ একটা চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার। নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়েও তাকে জনগণ থেকে দূরে সরাতে পারেনি। আর সরাতে পারেনি বলেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আজকে কেউ কমিশন গঠনের কথা বলছেন? এ দাবি করছেন, ও দাবি করছেন? খুব ভালো কথা। কিন্তু সেই সঙ্গে এই জিনিসগুলো পড়ে দেখেন, অনেক কিছু সবার কাছে স্পষ্ট হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার বাবা একটা জাতির জন্য জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল। নিজের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। শুধু দেশের মানুষের কথা ভাবতেন। বাংলাদেশের মানুষ ঠিকমতো খেতেও পারত না। চিকিৎসা নাই, শিক্ষা নাই, ঘরবাড়ি নাই। শোষিত-বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। ভাবতেন, দেশ স্বাধীন হলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তার সফলতা সেখানেই একটি জাতিকে তিনি দীর্ঘ সংগ্রামের পথ দিয়ে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় এনে দিয়েছিলেন।
পলাতক খুনিদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের বিচার হয়েছে। পলাতকদের মধ্যে ডালিম প্রথম থেকেই পাকিস্তানে আছে। রশীদ পাকিস্তান ও লিবিয়া এই দুই জায়গায়ই থাকে। পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে মাঝেমাঝে ডালিম কেনিয়া বা অন্যান্য দেশেও যায়। নূর কানাডায় আর রাশেদ আমেরিকায়। মোসলেহউদ্দিনের খোঁজ মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। পাকিস্তানকে বহুবার বলা হয়েছে, তারা স্বীকারও করে না, ফেরতও দেয় না। নূরকে ডিপোর্ট করার কথা ছিল। সেই সময় কানাডার হাইকমিশনার ছিল মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে। সে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, সেটা করেনি। তবে আমাদের প্রবাসী বাঙালি ও আমরা চেষ্টা করছি তাকে ফিরিয়ে আনতে।
তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়া, তাদের জীবনটা উন্নত করা, সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। প্রত্যেক ঘরে আলো জ¦ালা, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করা, যেটা বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল, সেটা যখন করতে পারব, আমি মনে করব, এই হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ সেদিনই আমি নিতে পারব। আজকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩১ জুলাই আমরা দুই বোন রেহানা আর আমি জার্মানিতে পৌঁছাই। ১৩ আগস্ট শেষ কথা হয় আমাদের…। তার দুদিন পরই এই ঘটনা। ৮১ সালে ফিরে আসি। যখন আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচন করে। অনেক বাধা, অনেক সমস্যা, অনেক কিছু আমাকে পার করতে হয়েছে। সেগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আমি আমার চলার পথ ঠিক রেখে, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এটা সফল হবে। এর সফলতা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের ঘরে পৌঁছাবে, তাদের জীবন উন্নত হবে। এই একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেছি। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ দেশবাসী সবার সহযোগিতা পেয়েছি।
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক কিছু পাওয়ার জন্য যারা অস্থির হয়ে পড়ে, তারা যে কোনো দুঃসময় দেখলেই ঘাবড়ে যায়, ভয় পেয়ে যায়। সেটা আসে তাদের মধ্যে, যাদের অর্থের লোলুপতা থাকে। রাজনীতির মাধ্যমে ব্যাপক ধনসম্পদ কামাই করে, তারা অর্থের লোলুপতা দিয়েই বাঁচে, দুঃসময়ে দাঁড়াতে পারে না। আত্মসমর্পণ করে। আর যারা এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারে, তারা যে কোনো বাধা আসুক, তা অতিক্রম করতে পারে- এই কারণে যে সততাই শক্তি। আর এই সততা দিয়েই এগিয়ে যাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষের জন্য। রক্ত দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আমিও সেই রক্ত দিতেই বাংলাদেশে পা রেখেছি। আমি জানি, আমার জীবনের কোনো মায়া নেই, কোনো কিছু চাওয়া নেই। একটাই চাওয়া, যে আদর্শ নিয়ে আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন। সেই আদর্শ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। ১৫ আগস্টে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা হবে, যে ওই রক্ত কখনো বৃথা যায়নি, বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে দেব না। এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার বাবা-মা, ভাইয়ের আত্মা যেন শান্তি পায়, সেটাই চাই। অনেক দূর এগিয়েছি। সুবর্ণজয়ন্তীও পালনের সুযোগ পেয়েছি। মৃত্যুকে সামনাসামনি দেখেছি। কোনো দিন ভীত হইনি, হবও না। কারণ আমি তো প্রস্তুত। আমি তো জানি, যে কোনো মুহূর্তে আমাকে চলে যেতে হবে। যতটুকু সময় আছে দেশের জন্য কাজ করব। সেটাই বড় কথা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়