বিজিএমইএ : সব স্থলবন্দর দিয়ে ইয়ার্ন আমদানির সুযোগ দাবি

আগের সংবাদ

করের আওতায় আসছেন ব্যাংকের কার্ডধারীরা!

পরের সংবাদ

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নির্দিষ্ট সময় বন্ধ রাখতে চায় বনবিভাগ : পর্যটক না থাকায় বেড়েছে বন্যপ্রাণী

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে : করোনার মহামারিতে পর্যটকদের বিচরণ না থাকায় মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে তাদের প্রাকৃতিক প্রজনন। উদ্ভিদেরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বন্যপ্রাণীর ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বছরের নির্দিষ্ট সময়ে প্রাকৃতিক পর্যটন স্থানগুলোতে মানুষের বিচরণ বন্ধ রাখতে চায় বন অধিদপ্তর।
উদ্ভিদ আর প্রাণীবৈচিত্র্যের আধার ১২৫০ হেক্টর জমি নিয়ে গঠিত জেলার লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ১৯৯৬ সালে এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উদ্যানটিতে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেখা মেলে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য বিখ্যাত এ বন।
বৈশ্বিক মহামারি রূপ নেয়া ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ আটকাতে লকডাউনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এখন মানুষের অত্যাচার নেই। তাই সজীব চেহারা ফিরে আসায় জীববৈচিত্র্যের নতুন প্রাণ ফিরেছে। লাউয়াছড়া পুঞ্জির খাসী সম্প্রদায়ের মানুষের খুব কাছাকাছি বন্য প্রাণীরা অবাধে বিচরণ করছে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসায় তাদের বংশ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতি বজায় থাকলে দুর্লভ প্রাণীগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরেজমিন গিয়ে অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, লকডাউনে মানুষের আনাগোনা না থাকায় জাতীয় উদ্যোন লাউয়াছড়ার আসল রূপবৈচিত্র্য ফিরে এসেছে। কয়েক গুণ বেড়েছে বণ্যপ্রাণীর সংখ্যা। লাউয়াছড়া জামে মসজিদের ইমাম ইমরানুজ্জামান জানান, চার বছর ধরে আমি এখানে ইমামতি করি। এর আগে কখনো এভাবে লাউয়াছড়ায় এত বন্যপ্রাণী ও পশুপাখি দেখিনি। ভোরে উল্লুক, বানর, হরিণ ও চশমাপরা হনুমান মসজিদের কাছাকাছি দেখি।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী বলেন, ৫৭ বছর ধরে এই লাউয়াছড়াতে বসবাস করছি। এত হরিণ, মাথায় ঝুঁটি মাতুরা, বনমোরগ, শূকর, বানর চশমাপরা হনুমান ও উল্লুক দেখিনি। বর্তমানে করোনার কারণে মানুষের আনাগোনা না থাকায় লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণীর দ্বিগুণ বংশবিস্তার হয়েছে। সাজু মারচিয়াং বলেন, এখানে প্রাকৃতিকভাবে পশুপাখির খাবারো বেড়েছে। নীরব পরিবেশে পশুপাখিরা ভালো থাকে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এখানে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে। এদের টিকিয়ে রাখতে হলে কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করি না বলে তারাও আমাদের কোনো ক্ষতি করে না।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির হেডম্যান ফিলা পওমী বলেন, প্রকৃতিতে মানুষের হস্তক্ষেপ কমছে। চিরসবুজ এ বনে বন্যপ্রাণী বানর, হরিণ, হনুমান, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, অজগর সাপ হরিণ, মাথায় ঝুঁটি মাতুরা, বনমোরগ, শূকর ও দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ। আমরা ঘর থেকে বের হলেই বন্যপ্রাণী দেখতে পাই। চশমাপরা হনুমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ঘরের পাশেই চলে আসে। আমাদের কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ায় অনেক ধরনের জীববৈচিত্র্যের বসবাস। মানুষের বিচরণে এরা বনের ভেতরেই বসবাস করত। বর্তমান সময়ে মানুষের অবাধ বিচরণ না থাকায় সকাল-বিকাল রাস্তার পাশেই চলে আসে। প্রায় সময়ই উল্লুক, হরিণ ও বানর অবাধে বিচরণ করতে দেখা যায়। মৌলভীবাজার সহকারী বনসংরক্ষণ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, লাউয়াছড়ায় পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ থাকায় বাঘ মারা নামক স্থানে প্রায়ই হরিণ দেখা যায়। হরিণ খোলা মাঠে কচি ঘাস খেতে আসে। আগে যেসব প্রাণীর দেখা পাওয়া যেত না এখন তাদেরও দেখা মেলে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জাতীয় উদ্যোন লাউয়াছড়ায় পর্যটন বন্ধ থাকায় বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীদের পজিটিভ সাইন এসেছে। চাপালিস, ঢেউয়া,আমলকি, ডুমুর ও বটসহ ১০২ প্রজাতির গাছ আছে যে গাছগুলো ফল দেয়। উল্লুক, বানর, হরিণ, হনুমান এরা ফল খাচ্ছে এবং নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারছে। মানুষের অবাধ বিচরণ না থাকায় এবং পর্যাপ্ত খাদ্য থাকায় জুন, জুলাই ও আগস্ট এ তিন মাসে তাদের বংশবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে বছরের এই একটা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকায় সাময়িকভাবে মানুষের চলাচল বন্ধ করা হবে, তবে সেটা পরিবেশ ও প্রাণিজগতের জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়