একাই কোকোর কবর জিয়ারত করলেন রিজভী

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ তৈরি করে পাকিস্তান ও আমেরিকা

পরের সংবাদ

সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ : টার্গেট পূরণ হচ্ছে না এবারো

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তানভীর আহমেদ : চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের টার্গেটে মাঠে নামে সরকার। গত ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানের তিন মাসে সাড়ে তিন লাখ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারি, লকডাউন, বাজারে ধান-চালের অস্বাভাবিক দাম, খাদ্যগুদামের শর্ত জটিলতায় সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে কৃষকের সাড়া নেই। এই পরিস্থিতিতে এবারো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ছয় লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ধান এবং ৭ মে থেকে শুরু হয় চাল সংগ্রহ। বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। গত সাড়ে তিন মাসে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৬ টন বোরো ধান ও ৮ লাখ ৩১ হাজার ৫৫৬ টন সিদ্ধ বোরো চাল এবং ৬৭ হাজার ৭২৫ টন বোরো আতপ চাল ও ১ লাখ ৩ হাজার ২১২ টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, খাদ্য বিভাগ বোরো ধান ও চাল এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি সংগ্রহ করতে পারলেও এখনো ৬ লাখ টনের বেশি ঘাটতি রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো সংগ্রহ না হওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহের সময় আরো ১৫ দিন বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। যদি এটি চূড়ান্ত হয় তাহলে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ চলবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে বোরো ধান ও চাল কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণে সংগ্রহ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস, ঘূর্ণিঝড় আম্পান, লাগাতার বৃষ্টি-বন্যা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করেছে।
খাদ্যগুদামের শর্ত জটিলতায় গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না প্রকৃত কৃষকরা। সরকারি দামে গুদামে ধান দিতে সর্বোচ্চ ১৪ ভাগ ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রতা নিশ্চিত করতে গিয়েও বিপাকে পড়ছেন প্রান্তিক চাষিরা। ময়েশ্চারাইজার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ও বিভিন

œ শর্ত মেনে সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
কৃষকদের অভিযোগ, প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের জন্য সরকারিভাবে প্রচারের অভাব, খাদ্যগুদামে সিন্ডিকেটের দাপট এবং ধান বিক্রির জন্য সনাতনী শর্তসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সাধারণ কৃষকরা। এছাড়া অ্যাপের কারিগরি সমস্যার কারণে যে কারো নম্বর দিয়ে যে কেউ নিবন্ধন করতে পারছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়ারা, লাভ যাচ্ছে তাদের পকেটে।
অ্যাপে নিবন্ধন না করে কৃষক স্থানীয় বাজারের বেপারিদের কাছে ভেজা ধান ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করছেন। কোথাও কোথাও স্থানীয় বাজারে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ ধরেও ধান বিক্রি হচ্ছে। অনেকে বলছেন, সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারলে ১ হাজার ৮০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করা যেত। এতে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু এত ঝক্কি-ঝামেলা করে ধান বিক্রি করতে কেউ যেতে চায় না।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিনা খানম ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ কম। তাছাড়া এ বছর বাজারেও ধানের দাম অনেক বেশি। যে কারণে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে চাচ্ছে না অনেকে।
যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের গগোনাথপুর গ্রামের কৃষক মাহমুদ হোসেন বলেন, সরকারের কাছে ধান বেচতে গেলে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরকার চায় পরিষ্কার ও শুকনা ঝরঝরা ধান। এছাড়া ধান সরকারি গুদামে দিতে পরিবহন খরচ হয়। তাই এ বছর সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছি না।
খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, কৃষকদের ধান বিক্রিতে আগ্রহী করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শুরুতে প্রতি বছরের মতো সরকারি অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। তাতে তেমন সাড়া না পেয়ে ‘আগে আসলে, আগে পাবেন’ নীতিতে ধান কেনার ঘোষণা দেয়া হয়। তিনি বলেন, এ বছর সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। যে কারণে ধান সংগ্রহে গতি কম। এছাড়া সরকারিভাবে ধানের যে দাম ধরা হয়েছে সেই দরে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে রাজি না। তিনি বলেন, বোরো ধান ও চাল কাক্সিক্ষত পরিমাণে সংগ্রহ না হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। করোনার কারণে সারাদেশ তো লকডাউনে ছিল। এটি বাস্তবতা।
প্রসঙ্গত, গত আমন মৌসুমে দুই লাখ টন ধান, ছয় লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি আমন ধান ২৬ টাকা, চাল ৩৭ টাকা ও আতপ চাল ৩৬ টাকা। গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ শুরু হয়। ধান-চাল কেনার তারিখ নির্ধারিত ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। আমনে দুই লাখ টন ধানের বিপরীতে মাত্র ১২ হাজার ৩৪২ টন সংগ্রহ করা হয়। ছয় লাখ টন সিদ্ধ চালের বিপরীতে ৭০ হাজার ১৩৬ টন এবং ৫০ হাজার টন আতপ চালের বিপরীতে ৪ হাজার ৮৬৩ টন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
গত বছর বোরোতে ১০ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম চলে। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ লাখ ১৯ হাজার টন ধান, ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯০ টন সিদ্ধ চাল এবং ৯৯ হাজার ১২৩ টন আতপ চাল কিনতে সক্ষম হয় খাদ্য অধিদপ্তর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়