সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

পলাতক খুনিদের ফেরাতে আর কত অপেক্ষা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আংশিক কার্যকর হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডের রায়। ওই দিন রাতে ৫ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদ। এরপর পেরিয়ে গেছে সাড়ে ১১ বছর। গত বছরের ৭ এপ্রিল ঢাকার মিরপুরে গ্রেপ্তার হওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক খুনি বরখাস্তকৃত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয় ওই বছরই ১১ এপ্রিল দিবাগত রাতে। রায় ঘোষণার আগেই ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যায় খুনি আজিজ পাশা। এখন পলাতক ৫ খুনি। তারা হলেন- রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আব্দুর রশিদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও, এই খুনিদের ফেরাতে পারেনি সরকার। আদৌ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কিনা, তা জানা নেই কারো। প্রশ্ন উঠেছে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এ সময়েই পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে না আনতে পারলে, আর কবে ফেরানো হবে তাদের? তাহলে কী অধরাই থেকে যাবে তারা? তবে সরকার ও দল থেকেই খুনিদের ফেরাতে আরো তৎপর হওয়ার দাবি জোরালো রয়েছে।
জানা গেছে, এই ৫ খুনির মধ্যে দুই খুনির অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। বাকি তিন খুনির সঠিক অবস্থান এখনো জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে খুনি রাশেদ চৌধুরী। আর কানাডায় অবস্থান করছে নূর চৌধুরী। বাকি তিনজন ডালিম, রশীদ ও মোসলেহ উদ্দিন কোথায় আছে- তার সঠিক তথ্য নেই। খুনিদের শনাক্তে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো সক্রিয় আছে। এদের ধরতে ইন্টারপোলে রেড নোটিসও জারি করা আছে। এছাড়া তাদের ধরতে বাংলাদেশে অবস্থানরত খুনিদের স্বজনদের মোবাইল ফোনও ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রক্ষা করছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাজ করছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও।
স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খুনি রাশেদ চৌধুরী ব্রাজিলে ছিল। ১৯৯৬ সালে সেখান থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান নেয়। ২০০৪ সাল থেকে সেখানে

রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকছে সে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাকে ফেরত চেয়ে অন্তত পাঁচবার যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ ও ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই বার চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে। তবে এখন পর্যন্ত বিষয়টি সুরাহা হয়নি। বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, সেখানকার আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে রাশেদকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
খুনি নুর চৌধুরী ১৯৯৮ সাল থেকে কানাডায় অবস্থান করছে বলে বাংলাদেশের কাছে তথ্য আছে। তাকে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার বহুবার চিঠি দেয় কানাডা সরকারকে। কানাডার সরকার ও কোর্ট নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে। এখন সে কোনো স্ট্যাটাস ছাড়াই সেখানে অবস্থান করছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। বিপদ আঁচ করতে পেরে নূর চৌধুরী প্রি-রিস্ক রিমোভাল অ্যাসেসমেন্ট আবেদন করে। এ ধরনের আবেদন সাধারণত এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়। কিন্তু কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল ১০ বছরেও তা নিষ্পত্তি করেনি। বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কানাডার ফেডারেল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে, যাতে কানাডা নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। পরের বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কোর্ট বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস বাংলাদেশকে জানাতে কানাডা সরকারকে নির্দেশ দেয়। একই দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দেন নূরকে ফেরত পাঠাতে। বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি।
এদিকে বুধবার কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী কারিনা গোল্ডের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে মোমেন। এ সময় তিনি প্রত্যাশা করেন, কানাডায় অবস্থান করা বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।
এছাড়া যে তিন খুনিকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তাদের মধ্যে খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ইউরোপের একটি দেশে পালিয়ে আছে বলে দীর্ঘদিন ধারণা করা হয়। তবে গত বছর ২০ এপ্রিলে ভারতীয় আনন্দবাজার পত্রিকার এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিনও ভারতে অবস্থান করছে। সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকা উল্লেখ করে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় মোসলেহ উদ্দিন এরই মধ্যে আটক হয়ে থাকতে পারে। আরেকটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছিল, মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের পরপরই আত্মগোপনে চলে যায় মোসলেহ উদ্দিন। কারণ খুনি মাজেদকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মোসলেহ উদ্দিনের অবস্থান জেনে নেয়। উত্তর ২৪ পরগনার একটি আধা শহরে ইউনানি চিকিৎসক সেজে ভাড়া ছিল সে। সেই ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটকেরও খবর বেরিয়ে আসে। তবে ভারতের অন্য একটি সূত্র বলেছিল, নিজের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গা ঢাকা দেয় মোসলেহ উদ্দিন। অবশ্য এ নিয়ে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
আরেক খুনি খন্দকার আবদুর রশীদ ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করলে তা রিনিউ করতে তাকে আবেদন করতে হতো। রশিদ পাকিস্তান বা আফ্রিকার কোনো দেশে পালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরেক খুনি শরীফুল হক ডালিমও ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। ১৯৯৫ সালে কেনিয়ায় রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন অবসরে যায় ডালিম। বর্তমানে সে কোথায় আছে, জানা নেই কারো। তবে পাকিস্তান, লিবিয়া বা স্পেনে সে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হলেও তা নিশ্চিত নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানের বাসায় ১৫ আগস্ট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন আইনমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, জাতির পিতা খুনের দায়ে যারা সর্বোচ্চ আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। শুধু সরকার ও আওয়ামী লীগ নয়, আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুর অনুসারী একজন থাকলেও এই হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করবে। তাদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এই চলমান প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশদ কিছু বলতে গেলে, তার ব্যাঘাত ঘটবে। সে জন্য শুধু বলব তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এর কয়েক দিন আগে ব্রা²ণবাড়িয়ায় একটি অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, যতই সময় লাগুক না কেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ধরে এনে রায় কার্যকর করা হবে। তাদের ধরে আনতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
অপরদিকে সরকারের আরেকজন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, যিনি ক্ষমতাসীন দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বারবার কথা হচ্ছে, বলা হচ্ছে। সরকার সেটি করছেও। তবে খুনিদের ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রকে আরো কার্যকর তৎপরতা চালাতে হবে। তিনি বলেন, এটা ঠিক, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় না আসতেন, তাহলে এই খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর হতো না। কাজেই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়