খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্যবাধকতা

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গতকাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হয়েছে সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে চালু করা হবে সব সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। খোলা থাকবে দোকানপাট ও শপিংমল। গণপরিবহন শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ৮ আগস্ট এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারি ওই আদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বা বিনোদন কেন্দ্র খোলার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশ অনুযায়ী অফিস-আদালত ও দোকানপাট চালুর পাশাপাশি নির্দিষ্ট রুটে অর্ধেক গণপরিবহন চলবে। তাতে আসনের সমপরিমাণ যাত্রী বহন করা যাবে। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিতকরণে কঠোর হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধে দেশজুড়ে গণটিকা কর্মসূচি চালুর পরপরই লকডাউন শিথিল করা হলো। নেয়া হলো দোকানপাট কলকারখানা যানবাহন খুলে দেয়ার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আমরা প্রথম থেকেই মানুষের জীবন-জীবিকায় আঘাত হানে এমন ধরনের বিধিনিষেধের যথার্থতা সম্পর্কে সংশয়ের কথা জানিয়েছি। করোনায় জীবন হানির চেয়েও ক্ষুধার কারণে কেউ যাতে কষ্ট না পায় তা নিশ্চিতকরণের তাগিদ দিয়েছি।
করোনাকালে গত দেড় বছরে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতি সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু করোনায় শিক্ষাক্ষেত্রে যে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেছে, কোন প্রণোদনায় তা পূরণ হবে? শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া এই সময় ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা কী? গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, করোনাকালে দেশে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। ঝরে গেছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। উচ্চ মাধ্যমিকে অটোপাস দেয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি সম্পন্ন করতে পারেনি। আগের বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাসই করতে পারেনি। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ আমরা দেখতে পাই গত দেড় বছরে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হলেও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল। খুলে দেয়া হয়েছে শপিংমল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি শপিংমল-রেস্তোরাঁ খুলে দেয়া যায়, তাহলে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া যাবে না কেন?
বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, এখানে লকডাউন কাজ করেনি। অফিস-ব্যাংক, গণপরিবহন, হাট-বাজার-বিপণি-গার্মেন্ট বিভিন্ন সময়ে খুলে দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে সংশ্লিষ্ট অনেকেই স্ববিরোধিতা হিসেবে দেখছেন। ধরা যাক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখা হলো। কিন্তু তাদের অভিভাবকরা তো কর্মক্ষেত্রে গেছেন। শিক্ষার্থীরা নিজেরাও কি ঘরে ছিল? তারাও ঘুরে বেড়িয়েছে। অভিভাবকরা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে পরিবারের সঙ্গে একত্র হয়েছেন। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে অসুবিধা কী ছিল? ইউনিসেফ ও ইউনেসকো অনেক আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য বলেছে। এখন বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে তো আর সমস্যা থাকে না। মনে রখাতে হবে, স্কুলে যেতে না পারার ক্ষতি কখনোই পুষিয়ে নেয়া যাবে না। করোনা ভাইরাসে দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। লাখ লাখ মানুষ বেকার মহামারির বিষ নিশ্বাসে। কর্মসংস্থানের খাতগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে সরকার ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে। তার সুফল অনুভূত হয়েছে অর্থনীতিতে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে করের বোঝা ও জটিলতা কমালে অর্থনীতির ক্ষত উপশমে অবদান রাখবে বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হয়। আমাদের বিশ্বাস, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রস্তাবগুলো সুবিবেচনা করা হবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমাজের একটি বড় অংশ চরম হতাশার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে সংকট থাকলেও সরকারি চাকরিতে এখনো প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পদ ফাঁকা রয়েছে। অন্তত সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো করোনার মধ্যে চলমান থাকলেও প্রার্থীদের মনে আশার সঞ্চার হতো।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, লাগামহীন লকডাউন মানুষের জীবন শুধু নয়, জীবিকার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করেছে। লকডাউনের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আমরা আশা করব অফিস-আদালত, দোকানপাট ও পরিবহন খুলে দেয়ার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হবে। গণপরিবহন অর্ধেক চালুর সিদ্ধান্তেও সুবিবেচনার ঘাটতি রয়েছে। আমরা আশা করব, গণপরিবহন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করে সে ভুলের সংশোধন করা হবে।
আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়