খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

মঞ্চশিল্পীরা করোনায় ঘরবন্দি > ভাত দূরে থাক, চা খাওয়ারও টাকা নেই : কাঙ্গালিনী সুফিয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : করোনা মহামারির কারণে অনেক জনপ্রিয় শিল্পী যারা সুরের মূর্চ্ছনায় মঞ্চ বা কনসার্টে দর্শক শ্রোতাদের হৃদয় কাঁপাতেন তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা বাউল গানের জনপ্রিয় লোকশিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া ভোরের কাগজকে মুঠোফোনে বললেন, আমি আধ মড়া হয়ে বেঁচে আছি। মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে ভিক্ষা করে চলছি। ভাত দূরে থাক, এক কাপ চা খাওয়ারও পয়সা নাই। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে নয় ধরনের ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে। কোনোটা খাওয়ার আগে খেতে হয়, কোনোটা পরে। আছে সিরাপও। ওষুধ কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। ভাত খাওয়ার টাকা কোথায় পাই?
এমনই দুরবস্থা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত লোকশিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়ার। পরানের বন্ধুরা কেউ এখন আর পাশে নেই। টেলিভিশন, রেকর্ড কোম্পানি কিংবা যারা গান করতে ডাকতেন, কেউ খোঁজ নেয় না। সম্বল কেবল দুস্থ শিল্পী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ১০ হাজার টাকা। এই টাকার সঙ্গে গান গেয়ে পাওয়া টাকায় মেয়ে পুষ্প বেগম ও তিন নাতিকে নিয়ে কোনো রকম চলে যেত শিল্পীর। কিন্তু করোনা সে আয়ের পথও বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে একখান দরখাস্ত লিখছি, সেটা করোনার কারণে পাঠাতে পারছি না। তার কাছে আমার আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আগেও আমার পাশে ছিলেন, এই করোনার দুঃসময়ে আমাকে বাঁচান।
কাঙ্গালিনী সুফিয়ার মতোই দেশের আরেক বর্ষীয়ান শিল্পী কিরণচন্দ্র রায়। যার দরাজ কণ্ঠে বাংলার লোক, বাউল, কীর্তন, পালা, বিচ্ছেদ ও পদাবলি সবই যেন অনন্যতা পায়। এই শিল্পী বলেন, আমাদের জন্য তথ্য এবং সংস্কৃতি দুটি মন্ত্রণালয় আছে। একটা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কোনো খোঁজই নেয়া হয়নি। এ অঙ্গনের জন্য আমাদের কোনো অবদান নেই! কেবল যখন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান হয়

তখন ডাক পড়ে, এরপর আর কেউ খোঁজও নেয় না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সংস্কৃতিবান্ধব মানুষ। তাকে আমাদের দুরবস্থার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আক্ষেপ করে শিল্পী কিরণচন্দ্র রায় বলেন, ঘরে বসে থাকলেও গত দুই বছরে বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সবই টানতে হচ্ছে। করোনার এই দুঃসময়ে কীভাবে চলছি তা কেবল স্রষ্টাই জানেন। নিজেদের বুক নিজেরা চাপড়ানো ছাড়া কোনো গতি দেখছি না! শুনেছি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রান্তিক শিল্পীদের পাঁচ হাজার টাকা সহায়তা দিচ্ছে। ওই পাঁচ হাজারে এক বস্তা চালও তো পাওয়া যাবে না। অবশ্য এতে তারা একটু হলেও দম পাচ্ছে। কিন্তু এতটা অবহেলা কেন শিল্পীদের?
বিভিন্ন কনসার্টে যে আগুনের আগুনঝরা কণ্ঠের মাধুর্যে দর্শক উদ্বেল হয় সেই আগুনের কণ্ঠে শোনা গেল হতাশার সুর। তিনি বলেন, আমার কোনো জমাজমি নেই। খেয়ে পরে চলার মতো গান করে যে আয় করতাম তাতেই জীবন চলে যেত। কিন্তু করোনা এসে অসহনীয় কষ্টে পড়ে গেছি। খুব খারাপ অবস্থায় আছি। তারপরও আমি কারো কাছে সহায়তার হাত পাতিনি। তিনি বলেন, ঘরবন্দি এই সময়ে টিভি চ্যানেল, রেডিও এবং অনলাইন প্ল্যাটফরমে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি। তারা ভালো সম্মানী দিচ্ছে। সেসব দিয়েই জীবন চলে যাচ্ছে। আরেক জনপ্রিয় শিল্পী আঁখি আলমগীরের কণ্ঠেও ধ্বনিত হলো একই হতাশার কথা। তিনি বলেন, আমরা যারা একটু সচ্ছল তাদের হয়তো সমস্যা নেই। কিন্তু অনেকেরই পরিস্থিতি ভয়াবহ। তিনি বলেন, করোনাকালে ঈদের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। পাশাপাশি চর্চাটাও চালিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক মহামারিতে আমি তো একা এর শিকার নই। সবারই ক্ষতি হচ্ছে। তাই অসীম ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষায় আছি।   

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়