খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

বালিশকাণ্ডের চার্জশিট চূড়ান্ত : লোপাটকৃত ৩৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আলোচিত বালিশকাণ্ডের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত প্রায় শেষ। তদন্তে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পাবনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত টিম। এরপর কমিশন অনুমোদন দিলে খুব শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। এদিকে অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে আত্মসাৎকৃত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যদিও কমিশন বলছে, আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত এলেও দুর্নীতির দায় থেকে কাউকে অব্যাহতি দেবে না দুদক।
জানা যায়, ২০১৮ সালে রূপপুর প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় পদে পদে দুর্নীতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। এতে বলা হয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরে কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জোনভিত্তিক যে কেনাকাটা হয়ে থাকে, তার বার্ষিক একটি পরিকল্পনা থাকে। সে ক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকার নিচে কেনাকাটা হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুমোদন লাগে না, স্থানীয় পর্যায়েই করা যায়। এর সুযোগ নিয়ে ১৬৯ কোটি টাকার কাজ ছয়টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। ফলে প্রতিটি কাজের মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন পড়েনি। এই সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও গণপূর্তের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিশাল অঙ্কের দুর্নীতি সংগঠিত হয়। যেখানে প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার মজুরি দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। কভারসহ কমফোর্টারের (লেপ বা কম্বলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত) দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও এর বাজারমূল্য সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। একইভাবে বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৬ টাকায়। এর বাজারমূল্য অবশ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। ৩০টি চাদর আনতে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। আর ভবনের নিচ থেকে খাট পর্যন্ত তুলতে প্রতিটি চাদরের জন্য মজুরি দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। এছাড়া একটি চুলা ক্রয়ে ৭৭৪৭ টাকা এবং তা ফ্ল্যাটে তুলতে ৬৬৫০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। একটি ইস্ত্রি কিনতে ৪১৫৪ টাকা এবং তা তুলতে ২৯৪৫ টাকা

ব্যয় দেখানো হয়। এভাবে প্রকল্পের প্রতিটি আসবাবপত্র অস্বাভাবিক দামে কেনাকাটার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দুদক তদন্ত শুরু করে। এসব ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আলাদা চারটি মামলা করে দুদক। এরপর আসামিদের রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও বেরিয়ে আসে সব পণ্যের মূল্য মোট ৩৬ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছিল। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩৪ কর্মকর্তা জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিলেন তখনকার গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেছিলেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ঘটনায় অতিরিক্ত ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা নিয়েছে।
দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে রিজার্ভ, সেগুনবাগিচা) মাসুদুল আলম, তিন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তাহাজ্জুদ হোসেন, আহমেদ সাজ্জাদ খান ও মোস্তফা কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সাইদ, জাহিদুল কবীর, শফিকুল ইসলাম ও রওশন আলী, সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, মোর্শেদ তারেক, আমিনুল ইসলাম এবং দুই ঠিকাদার সাজিন কনস্ট্রাকশনের মালিক শাহাদাত হোসেন ও মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের মালিক আসিফ হোসেনের নাম।
এদিকে অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে আত্মসাৎকৃত অর্থ (৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা) রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাজিন কনস্ট্রাকশন ও মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন এই টাকা জমা দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির জবাবে আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরতের তথ্য জানায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী এডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেছেন, অর্থ ফেরত আসা ইতিবাচক হলেও তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে আসামিদের শাস্তি পেতে হবে। আত্মসাৎকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত আসার মাধ্যমে দুর্নীতির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আত্মসাতের টাকা ফেরত দেয়ার মানেই হচ্ছে অপরাধীরা অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিচার তো এখনো শুরু হয়নি। যেহেতু এখনো চার্জশিট দাখিল হয়নি, চার্জশিট দাখিল হলে বিচার শুরু হবে। এরপর সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে শাস্তির বিষয়টি নির্ধারণ করবেন আদালত।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আমরা হাতে পাইনি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। তদন্তে যেসব বিষয় উঠে আসবে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। তবে দুদকের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত এলেও দুর্নীতির দায় থেকে কাউকে অব্যাহতি দেবে না দুদক। সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
এদিকে বালিশকাণ্ডে কারাগারে আটক আসামিরা একাধিকবার জামিনের আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছরের ২৭ আগস্ট সাজিন কনস্ট্রাকশনের মালিক শাহাদাত হোসেনকে জামিন দেন পাবনার আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিভিশন করা হলে তার জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুই সপ্তাহের রুল জারি করা হয়। এখনো বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানা গেছে।
এছাড়া পৃথক মামলায় পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ সাত প্রকৌশলী গত জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান। এর বিরুদ্ধে দুদক উচ্চ আদালতে পৃথক সাতটি আবেদন করে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জুলাই তাদের জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। মাসুদুল আলম ছাড়া অপর ছয় প্রকৌশলী হলেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান ও মোস্তফা কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল কবির, শফিকুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক ও আমিনুল ইসলাম। বর্তমানে সাজিন কনস্ট্রাকশনের মালিক শাহাদাত হোসেন ছাড়া সব আসামি কারাগারে আটক রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়