খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

পরীদের ইস্যুতে ঢাকা পড়েছে করোনা

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কী এক অদ্ভুত সমাজ-সংস্কৃতি-সভ্যতা। চারদিকে করোনায় মরছে মানুষ, লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। সংক্রমণ হচ্ছে। এ সংক্রমণ থামবে না সহসা। জীবন যেখানে শুধু বেঁচে থাকার জন্য নিরন্ন মানুষের গায়ে-গতরে খেটেযাওয়া, সেখানে পৃথিবীর বড় শহরগুলোর সাদা-কালো মানুষদের কাপড় পরানোর দায়িত্ব পাওয়া বাংলাদেশের কিছু বিশ্বপ্রেমী মানুষ দায়িত্ব থেকেই এরা মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পাড়ি দিয়ে লঞ্চ-স্টিমার-জাহাজ কিংবা ট্রেন-গাড়িতে চড়ে ফিরে এসেছে রাজধানীতে। সুতরাং উন্নয়নের মাত্রার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের ঢেউটাও গতি পাচ্ছে।
এই গতির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে হানা দিচ্ছে আরেক আতঙ্ক ডেঙ্গু। ৬ আগস্ট একটা পত্রিকায় দেখলাম, ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১০ জন অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের খাতায় তা শূন্য। কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, কে কীভাবে মারা গেছে তা খতিয়ে দেখার ব্যাপার। সুতরাং ডেঙ্গুতে মরছে না অন্যভাবে মরছে, তা এখনো তারা নিশ্চিত হতে পারছে না।
আসলে আমাদের দেশটাও এমন যে, এসব সংক্রমণ-মৃত্যু কিংবা ঢাকায় আসা মানুষের ঢল সবকিছু ক্রমেই ‘ল’ প্রোফাইল হয়ে যাচ্ছে পরী-পিয়াসাদের কাছে। দেশ-জাতির এই সংকট সময়ে মানুষ পরী-পিয়াসা কিংবা মৌদের খবর জানতে আগ্রহী কি-না, কিংবা এই খবরগুলো মৃত্যুর চেয়েও যে মূল্যবান, তা আমরা দেখছি। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে হাহাকার ওঠা শহুরে মানুষের খবরগুলো আমরা পাই আর গ্রাম-গঞ্জ দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায়। করোনায় উপজেলা কিংবা গ্রামের মানুষগুলোর মৃত্যুর খবর স্বাভাবিক কারণেই হয়তো জানতে পারে না মানুষ। তাছাড়া একটা চাপা আতঙ্কের কারণে এই মৃত্যুগুলোকে এমনকি বাড়ির লোকেরাও গোপন রাখে।
পশ্চিমা দেশগুলোতেও এক সময় মৃত্যু বেড়েছিল এভাবেই। সমালোচনার পাহাড় ছিল। জনগণ যখন চারদিকে হতাশা দেখে, তখন সরকারের ছোট ছোট ব্যাপারগুলোকেই বড় করে দেখে। আর সেজন্য ব্রিটেনের সরকারের সমালোচনা ছিল প্রতিদিন। কিন্তু এই সমালোচনার মাঝেও আমরা প্রতিদিন মৃত্যু আর সংক্রমণের খবর পেয়েছি। হাজারো-লাখো সংক্রমণের মাঝে মৃত্যুগুলো ভয়ংকর বার্তা দিচ্ছিল প্রতিদিন। কিন্তু তবুও মানুষের কাছে সংক্রমণ আর মৃত্যুগুলোর খবর পৌঁছেছে। এতে করে আরেকটা জিনিস সাধারণ মানুষ তাদের বোধের মাঝে নিয়েছে আর তা হলো, করোনা যে মহামারি, তা উপলব্ধিতে এনেছিল। যারা লকডাউনের বিরোধিতা করেছিল, তারাও এক সময় এ বিরোধিতা থেকে সরে এসেছিল। অর্থাৎ লকডাউন মানুষের বোধের মাঝে এক ধরনের স্নায়বিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। মানুষ ঘর থেকে বেরুতে ভয় পেত। এরই মাঝে সরকার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছে। কোটি কোটি মানুষকে এই লকডাউনের মাঝেই ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে এসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই ছিল মানুষের আওতায়। এমনকি গোসারি পণ্য, প্রসাধনী সামগ্রী থেকে শুরু করে অনেক জিনিসই অনলাইন নির্ভর হয়ে যায়। ডিজিটাল পদ্ধতিগুলো তখনই সার্থকতা পায়, যখন এই পদ্ধতির ব্যবহার সর্বজনীন হয়। একটা শ্রেণির মাঝে যে কোনো ব্যবস্থাই সীমাবদ্ধ থাকলে জাতীয় জীবন ধনিক শ্রেণিনির্ভর হয়ে যায়।
এখনো আমার একটা বিশ্বাস, ব্রিটেনের স্কুলগুলো মাঝে মাঝে খুলে দেয়ার কারণে সংক্রমণ বাড়িয়েছে সে সময়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে এর সংক্রমণ ব্যাপক হয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হলে সরকার চাপে স্কুল বন্ধ করে, আবার খুলে দেয়, কখনো বা শুধু একটা ক্লাসের একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রীর সংক্রমণ ধরা পড়লে ওই ক্লাসটার সব ছাত্রছাত্রীর কোয়ারেন্টাইনে চলে যেতে হয়েছে। এভাবেই প্রবল অনিশ্চয়তার মাঝে ছাত্রছাত্রীরা তাদের মূল্যবান প্রায় দুটো বছর প্রত্যাশিত ফলাফল পায়নি।
এখন ব্রিটেন খুলে গেছে। আবারো স্পন্দন ফিরে এসেছে। কিন্তু সংক্রমণ যে নেই তা নয়। হাজার হাজার সংক্রমণ এখনো হচ্ছে। কিন্তু আতঙ্ক নেই। মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে। শিশু-কিশোররা ঝুঁকিতে নেই। তাই শিশু-কিশোরদের ভ্যাকসিন এখনো নিশ্চিত হয়নি, তবে শুরু হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে লকডাউন কতটুকু কাজ করছে, তা দেশের নাগরিক কিংবা সরকারই জানে। দেশটির উন্নয়নের ধারা টিকিয়ে রাখতে সরকার সদয় হয়েছে বিনিয়োগকারীদের প্রতি। তাই শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। কারণ তাদের তো বাঁচতে হবে। আর উৎপাদনশীল খাত বাঁচাতে হবে, তাই করোনাও বাড়ছে। এই যখন অবস্থা, তখন একের পর এক ইস্যু আসছে। মডেলরা ধরা পড়ছেন। একজন মডেল তার সৌন্দর্য কিংবা তার শিল্পসত্তা নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তার জীবন-জৌলসে স্বাভাবিক কারণেই কিছুটা ভিন্নতা আসে, বারে-যৌনতায় পেয়ে যায়। এই মডেলরা তো তাদের চিত্রজগৎ কিংবা অন্যান্য জায়গায় এই-ই জানান দেন, দেশের প্রচলিত নিয়মেরই আওতায়। যেভাবে আমরা দেখি মাঝে মাঝে অভিজাত শ্রেণির বাসায়-বুট ক্লাবে। এক সময় আমরা দেখেছিলাম রাজনীতিবিদ মওদুদ আহমদকেও আটক করা হয়েছিল এ রকম অবৈধ মদ-বার ইত্যাদির কারণে। সম্রাট-পাপিয়া-জাহাঙ্গীররাও ওই একই। কিন্তু বাংলাদেশের মডেলরা হঠাৎ করেই ফাঁসছেন। তাদের সামাজিক আভিজাত্য আমাদের চোখ ধাঁধায় ঠিকই, কিন্তু এই আভিজাত্য কীভাবে আসে। শত শত প্রভাবশালী মানুষ যখন তাদের সান্নিধ্যে যায়, তখন তারা প্রভাবশালী হয়ে যায়, সম্পদশালী হয়ে ওঠে। রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী যখন এদের ঘর পর্যন্ত যান, তখন ওই মডেলরা একক অপরাধী থাকেন না। ওই শত শত মানুষগুলোই হয়ে যায় অপরাধের আধার। কিন্তু আমরা কি শোনলাম এদের নাম প্রকাশ করা যাবে না। তাহলে পরীদের সামনে নিয়ে আসা হলো ঠিকই, অপরাধ তো সুপ্ত থেকে গেল, কিংবা অপরাধগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে আইওয়াশের মতো করে দেয়া হলো বিষয়টা।
পরীরা বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এক ধরনের মেধা নিয়েই তাদের প্রকাশ ঘটিয়েছে। তারা সাধারণ নাগরিকদের কলুষিত করেনি। বরং তাদের নোংরামির প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই নোংরামিতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু তবুও এরা টিকে আছে। এরা রাজনীতিতে প্রভাব খাটাচ্ছে না। সমাজ কলুষিত করছে না। অভিজাতরা তাদের কাছে ঘেষছেন, এতে সমাজের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বরং ওই অনৈতিক উপার্জনের অভিজাতদের ‘উচ্ছিষ্ট’ থেকে এরাও প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে। আর তাই পরীরা বাঁচুক। তারাও আভিজাত্য নিয়ে তাদের সুখ-কষ্টের জীবন রাঙিয়ে আগাক এটা অনেকেই চায়। আর পরীদের যদি অন্ধকার কুঠিরে যেতেই হয়, তবে শত শত মানুষের নামও আসুক জনসমক্ষে।
বড় খারাপ সময় যাচ্ছে মডেলদের। তাই মডেলপাড়ায় আতঙ্ক থাকাটা স্বাভাবিক। যা কিছুই হোক না কেন, অ্যাভিডেন্স থাকবে কেন। বড় বড় প্রোফাইলের মানুষগুলো নিয়ে খেলা যায়, তবে এ খেলা হতে হয় ‘দিনের আঁধারে’। ক্যামেরার বাইরে। কিন্তু সময় বড় বেহায়া। তাই অভিজাত পাড়ায় ক্যামেরা থাকে, অটো হয়ে যায় সব কিছু। তাই তো ভেসে আসছে হাওয়ায় হাওয়ায় অনেক কিছু। চাকর যখন সম্রাট হয়, অভিজাতদের কাছে একসময়ের মোহ-মডেল যখন প্রেতাত্মা হয়ে উঠে, তখনই চক্কর মারে। আভিজাত্য আর সামাজিক-রাজনৈতিক স্ট্যাটাস যখন বড় ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার উপক্রম হয়, পরীদের মদ-বার তখনই সামনে আসে।
করোনার এই ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা যেমন অসহায়, ঠিক তেমনি হতাশায় সুন্দরী রমণীরা। কেন, কোন অদৃশ্য কারণে তারা এই ঘোর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে, তারাই হয়তো জানে। আর জানে ওই নেপথ্যের অভিজাত মানুষগুলো, হয়তো যাদের দুর্লভ হাসিমাখা স্থির চিত্রগুলো পরীদের পেনড্রাইভে কিংবা গুগল ড্রাইভে লুকিয়ে আছে ডিজিটাল উন্নয়নের স্রোতধারায়।

নোট : পরীর লাইভে বারবার ‘মিডিয়া মিডিয়া’ উচ্চারণে মনে হয়েছে বড় বেশি মিডিয়া রিলেটেড তিনি। এটাই কি তার বর্তমান নিয়তিরও একটা কারণ?

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়