খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

নড়াইলে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ কাজ

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুভ সরকার, নড়াইল থেকে : নড়াইলে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজ। জেলায় প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় বালু ভরাটসহ ৪টি সেতু, ১৮টি কালভার্ট, ২টি স্টেশন লোহাগড়া ও নড়াইল সদর নির্মাণকাজ চলছে। রেল সড়কে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে খুশি এই জনপদের মানুষ। এ এক বিশাল কর্মযোগ, নড়াইলের মানুষ এর আগে এত বড় কাজের বাস্তবায়ন দেখেনি। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার কমলাপুর থেকে রেললাইন শুরু হয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, নড়াইলের লোহাগড়া ও সদর

উপজেলার উপর দিয়ে যশোরের সিঙ্গিয়া জংশনের সঙ্গে মিলিত হবে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ১০টি স্টেশন, ৩১টি ব্রিজ, ৮৯টি কালভার্ট ও ৮৪টি আন্ডারপাস নির্মাণকাজ চলছে, যা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরসি) এ রেললাইনের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে এবং প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত কনস্ট্রাকশন, সুপারভিশন, কনসালটেন্টের (সিএসসি) অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যসহ ৪ শতাধিক দেশি-বিদেশি পরামর্শক ও প্রকৌশলী কাজ করে চলেছেন। প্রকল্পের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা থেকে যশোরের সিঙ্গিয়া পর্যন্ত মোট ১৬২ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।
নড়াইলের উপর দিয়ে রেললাইন স্থাপনে খুশি এলাকাবাসী। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অবহেলিত এই জেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব যাতায়াত সুবিধাসহ উন্নয়নের মহাসড়কে নড়াইল পৌঁছাবে উল্লেখ করে এলাকাবাসী বলেন, এটা খুব আনন্দের ব্যাপার। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা রেলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি আমরা। আরো আনন্দের বিষয় এটা আন্তর্জাতিক মানের রেললাইন হচ্ছে। ঢাকা-কলকাতা যুক্ত হবে এই লাইনে। রেললাইন তৈরি হওয়ার আগেই আমরা প্রতিদিন এখানে দেখতে আসি কাজের অগ্রগতি, আমাদের বিনোদনের জায়গা হয়ে উঠেছে এটা।
নড়াইলের উপর দিয়ে নতুন একটা রেললাইন হচ্ছে- এতে আমরা আনন্দিত-উদ্বেলিত হচ্ছি। কারণ নড়াইলের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্য জেলার তুলনায় বেশ পিছিয়ে এবং আমরা খুবই আশাবাদী। এই রেললাইনটা হওয়ার পর এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। এখানে কলকারখানা হবে, শিল্পায়ন হবে, কাজের সুযোগ বাড়বে।
নড়াইলে আগে সড়কপথ ছাড়া যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এখন রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে। এই ট্রেন জার্নিটা খুবই আনন্দদায়ক হবে।
এর মাধ্যমে যাতায়াতের এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। এখানে যেসব শ্রমিক কাজ করছেন তারাও এখানে কাজের সুযোগ পেয়ে আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি বৃহৎ কর্মযোগের অংশীদার হতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করছেন।
জানতে চাইলে ভোরের কাগজকে নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, আমাদের এই প্রজেক্টের কাজ সুন্দরভাবেই চলছে। আমরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই কাজ করছি। তারা বলেন, এখানে কাজ করতে পেরে নিজেকে খুব ধন্য মনে করি। এটা নিজেদেরই কাজ, আমাদেরই কাজ, এখান থেকে উপার্জন করে পরিবার চালাচ্ছি। আমার পরিশ্রমে দেশের একটা কিছু তৈরি হয়। ভবিষ্যতে বলতে পারব, এটা আমরা বানিয়েছি।
প্রকল্পের নির্মাণকাজ তদারকির জন্য সেনাবাহিনীর ৩টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অত্যন্ত খুশি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারী-কর্মকর্তারা। উপপ্রকল্প পরিচালক, সিআরসি তান বিং হুই বললেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক ভালো সম্পর্ক। আমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি। বাংলাদেশে এই পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প অনেক বড় একটা কাজ। এখানে এই রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আমরা আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। যেসব শ্রমিক কাজ করছেন সবাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করছেন। এ কাজটা করতে পেরে আমাদেরও খুব ভালো লাগছে।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নড়াইলের উন্নয়ন হবে উল্লেখ করে বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ভাঙ্গা থেকে যশোরের সিঙ্গিয়া পর্যন্ত দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। এই অংশের রেল প্রকল্পে ব্যয় ধরা আছে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিএসসি কোম্পানি ও চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সিআরসি সার্বিক তত্ত্ব¡াবধান এবং প্রযুক্তিগত দিক সেগুলো বাস্তবায়ন করছে। এক্ষেত্রে ৪ শতাধিক দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে নিয়োজিত রয়েছেন।
করোনা মহামারির এ পরিস্থিতির মধ্যেও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০২৪ সালে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে এই জনপদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে এবং মানুষের সামগ্রিক জীবনমান উন্নত হবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়