নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

মন্ত্রিসভায় ৩ আইনের অনুমোদন : জাদুঘরের সম্পদ ধ্বংস করলে ১০ বছর জেল

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন, চিড়িয়াখানা আইন এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবসের পরিবর্তে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস ঘোষণা এবং দিনটি উদযাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারিকৃত পরিপত্রের ‘গ’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া গত ১৩ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফরের কর্মকাণ্ড পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রিসভাকে জানান।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ের শুরুতেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তারা এটা নিয়ে আলোচনা করছে, কিভাবে এটা করা যায়। আগে ভ্যাকসিনেশন জোরদার করছে, যাতে ছাত্রদেরও ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া যায়। তারপর দেখা যাক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিনোদন কেন্দ্র এবং জনসমাগমেরও অনুমতি দেয়া হয়নি।
৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন : কেউ জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ করলে ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে নতুন আইন করছে সরকার। আইন অনুযায়ী, এখন থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে এ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এসডিজি অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্য

নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকার এর আগেই লক্ষ্যে পৌঁছাবে। নতুন আইনে সবাইকে জন্ম ও মৃত্যুর দেড় মাসের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। বর্তমানে এ নিবন্ধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ৭৫ টাকা করে ফি নেয়া হয়। গত ৫/৬ মাস ধরে সরকার এটা নিয়ে কাজ করছে। সঠিক নিবন্ধন না থাকায় অনেকে বয়স লোকান। নতুন আইনে সেটা সম্ভব হবে না বলেও জানান সচিব।
এর আগে, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর প্রতি বছর ৬ অক্টোবরকে ‘জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে সংশ্লিষ্ট পরিপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি তার মৃত্যুও নিবন্ধিত হওয়া আবশ্যক। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৯ এবং সূচক ১৭.১৯.২-এ ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম নিবন্ধন এবং ৮০ শতাংশ মৃত্যু নিবন্ধনের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালনের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বিষয়ে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
এতে আরো বলা হয়েছিল, ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন-২০০৪ (সংশোধিত ২০১৩)’ এর ধারা ৮ অনুসারে শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন এবং কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু জন্ম নিবন্ধনের তুলনায় যথাসময়ে মৃত্যু নিবন্ধনের হার আশানুরূপ নয়। আগামীতে দেশের সব নাগরিকের জন্য শুদ্ধ তথ্যভাণ্ডার তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে মৃত ব্যক্তির উত্তরসূরিদের মৃত্যু নিবন্ধন ও মৃত্যু সনদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।’
‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন-২০০৪’ এর ১৮ ধারার উপধারা (৩) অনুসারে নি¤œবর্ণিত বিষয়াদির ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু প্রমাণের জন্য মৃত্যু সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে – সাকসেশন সার্টিফিকেট প্রাপ্তি, পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তি, মৃত ব্যক্তির লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দাবি, নামজারি এবং জমাভাগ প্রাপ্তি। ‘জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস’ এর পরিবর্তে ‘জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন করা হলে জন্ম নিবন্ধনের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু নিবন্ধনের বিষয়ে সার্বিক জনসচেতনতা তৈরি হবে।
বিনা টিকেটে চিড়িয়াখানায় ঢুকলে দুই মাসের জেল : ‘জাতীয় চিড়িয়াখানা আইন, ২০২১’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে বলা হয়েছে, টিকেট ছাড়া কেউ চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলে দুই মাসের জেল দেয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে গুনতে হতে পারে ১ হাজার টাকা জরিমানা। আর পশুর কোনো ক্ষতি করলে কেমন শাস্তি হবে সে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। আইনে দুই বছর জেল এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা চেয়েছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাতে সায় দেয়নি মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রস্তাবিত আইনের অপরাধ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আনা প্রস্তাব মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেনি। পশুর যদি কোনো ক্ষতি করে সেটা আইনে ছিল না। সেক্ষেত্রে একটা শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের আইনে কীভাবে আছে সেভাবে দেখে দেবে। এছাড়া চিড়িয়াখানার সাধারণ ব্যবস্থাপনা, পশু-পাখি প্রতিপালন, চিড়িয়াখানা পরিচালনাসহ নানা বিষয় খসড়া আইনে তুলে ধরা হয়েছে।
জাদুঘরের নিদর্শন ধ্বংস করলে ১০ বছরের জেলা : জাদুঘরের স্থাবর নিদর্শন ধ্বংস বা ক্ষতি করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন, ২০২১’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলোকে আইনে রূপান্তরের বাধ্যবাধকতা থাকায় অধ্যাদেশের বদলে এ আইন করা হচ্ছে।
কীভাবে জাদুঘর পরিচালনা করা হবে তা এই আইনে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাদুঘরের নিদর্শন চুরি, পাচার বা ক্ষতি করলে করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নিদর্শনের ওপর খোদাই করলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন : অধ্যাদেশের পরিবর্তে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এককালীন চাঁদা দিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের এই ট্রাস্টের সদস্য হতে হয়। শিক্ষকদের পাশাপাশি তাদের পোষ্যরাও এখান থেকে সুবিধা পাবেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এর ভাইস চেয়ারম্যান হবেন। ট্রাস্টি বোর্ডে আটজন তিন বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হবেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান।
আইনে নতুন একটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষক মারা গেলে তার নাবালক, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সন্তানেরা এই ট্রাস্ট থেকে সহায়তা পাবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অনুদান হিসেবে কিছু দিলে ট্রাস্ট তা গ্রহণ করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়