নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

বদলে যাচ্ছে আমেরিকা

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমেরিকা। একুশ শতকের বিশাল জনসংখ্যার চাপ কিংবা প্রযুক্তিসভ্যতার অতি দাপটে পৃথিবীর জলবায়ু যতখানি না দ্রুততার সঙ্গে বদলে যাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতিতে বদলে যাচ্ছে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার লোকসমাজ, সভ্যতাসংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক পলিসির দিকনির্দেশনা। তাতে একদিকে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খল পরিবেশ, অন্যদিকে সামঞ্জস্যহীন পরিবর্তনের স্রোতে ওলটপালট হচ্ছে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র। বলা হচ্ছে- ঞযরং রং সড়ৎব পযধহমব ঃযধহ যঁসধহ নবরহমং ধৎব ফবংরমহবফ ঃড় ফরমবংঃ. সময় এবং প্রয়োজনের তুলনায় এই পরিবর্তনের চাপ এতই প্রবল ও ব্যাপক যে, এখানকার নিয়ত পরিবর্তনশীল যুগ সমাজের জনমানসকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সংঘাতে অস্থির করে তুলছে। কেননা পরিবর্তনের স্রোত কেবল একটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে নেই। বিপুল স্রোতের বিরাট আবেগে তা রাষ্ট্রের সব সুগভীর বিষয়কে স্পর্শ করেই বিদ্যুৎগতিতে ছুটে চলেছে আমেরিকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। বদলে যাওয়ার গভীর মূলে পরিবর্তিত জনসমাজ। পরিবর্তিত জনসমাজ মানেই শেষ অবধি সভ্যতাসংস্কৃতির পাশাপাশি রাজনীতিরও বদলে যাওয়া। কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্য থেকে আদর্শনীতির রদবদল ঘটানোই বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক দর্শন। এই বাস্তব দর্শনের ভয়ংকর চেহারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অতি প্রকট বর্তমানে। আদর্শ, নীতি, সততা, নিষ্ঠা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলি বিপর্যয়ে দিশাহারা। ২০১৮-তে চবি জবংবধৎপয সেন্টারের একটি গবেষণা তথ্য জানিয়েছিল, ইমিগ্রেশনের কারণে মাত্র দুই যুগের মধ্যে আমেরিকার কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যের শহরগুলোতে শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার হার নেমে এসেছে ৫০ শতাংশের নিচে। ২০১৮-এর সেন্সাস রিপোর্ট অনুসারে আমেরিকার সব অঙ্গরাজ্যের সর্বমোট ৩ হাজার ৬টি কাউন্টির মধ্যে ২৯৩টি কাউন্টিতে অশ্বেতাঙ্গ পপুলেশন ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়াগো, অরেঞ্জ, রিভারসাইড, স্যাক্রাম্যান্টো, টেক্সাসের ট্যারান্ট, মিশিগানের ওয়েন, ফ্লোরিডার ব্রাউয়ার্ড, উইসকন্সিনের মিলাউকি, ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স, নিউইয়র্কের কয়েকটি শহরসহ অনেক শহরে অশ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যা আগেই শ্বেতাঙ্গদের ছাপিয়ে গিয়েছে। আপাতত সেন্সাস রিপোর্টের তথ্যসূত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে- নিকট ভবিষ্যতে এই চিত্র সর্বত্র বাস্তবতা পাওয়ায় আরো গভীর থেকে বদলে যাবে আমেরিকা।
বিশেষত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপেন বর্ডার পলিসির কারণে সেটা আরো ত্বরান্বিত হবে। শুধু ২০২১-এর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত (বৈধ ছাড়াই) অবৈধ মাইগ্র্যান্টদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখের ওপরে। ১৬ জুলাই ওয়াশিংটন পোস্টের একটি হেডিং ছিল- ‘ট.ঝ-গবীরপড় নড়ৎফবৎ ধঢ়ঢ়ৎবযবহংরড়হং ভড়ৎ ঃযব ভরংপধষ ুবধৎ ংঁৎঢ়ধংংবফ ১ সরষষরড়হ রহ ঔঁহব.’ বিশ্বের ১৬৭ দেশের মানুষ নির্বিচারে বিশেষত, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং সেন্ট্রাল আমেরিকার জনস্রোত টেক্সাস-মেক্সিকো আর অ্যারিজোনার সীমান্তকে জোয়ারের মতো উত্তাল করছে প্রতিদিন। তার মানে এই নয়, এ দেশে আগে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের প্রবেশ কখনো ছিল না। কিন্তু সেটা রাষ্ট্র এবং জনসমাজের নিরাপত্তার প্রশ্নে ইমিগ্রেশন পলিসির অনুমোদিত না হওয়ায় তাকে প্রায় সব সরকারের আমলেই গণ্য করা হতো অনুপ্রবেশ বলে। সুতরাং অবৈধ মাইগ্র্যান্টরা সীমান্ত অতিক্রম করতে গেলে তখন স্বাভাবিক আইনেই বাধাগ্রস্ত হতো।
এখন উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার নামধামহীন শিশু-কিশোর, নর-নারীর আগমন ঘটছে। ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত অজস্র হৃদয়বিদারক ঘটনাও। কেবল জুলাই মাসেই অবৈধ মাইগ্র্যান্টদের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২০ হাজার। কেননা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পূর্বে বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে বিশ্বের সব মানুষের জন্য মার্কিন সীমান্ত অবারিত উন্মুক্ত থাকবে। তাদের দেয়া হবে ফ্রি এডুকেশন আর ফ্রি হেলথ কেয়ারের সুযোগ। অতএব ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রেসিডেন্সি ঘোষণার পর থেকে সীমান্তজুড়ে যে বিরামহীন জনস্র্র্রোত প্রতিদিন ছুটছে, তার সামাল দিতে বর্ডার প্যাট্রোল এজেন্টারা যেমন প্রতিনিয়ত ধস্তবিধ্বস্ত, তেমনি অসন্তোষ আর বিদ্রোহ জমাট বাঁধছে সাধারণ জনমনেও।
এ কথা ঠিক, শত শত বছর ধরে ইমিগ্র্যান্টদের নিয়েই গড়ে উঠেছিল আমেরিকা। আদিবাসীদের (ক্রিস্টোফার কলম্বাস যাদের এককভাবে ‘রেড ইন্ডিয়ান’ বলে সম্বোধন করেছিলেন) হত্যা ও পরাজিত করে জাতিবৈচিত্র্যের সমাবেশে এদেশে দ্রুত গড়ে উঠেছিল এক নতুন নেশন। ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা’ সৃষ্টির কারিগররা পরবর্তীতে গভীরভাবে বিশ্বাসও করেছিলেন, শক্তিশালী ও আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য জাতিবৈচিত্র্যের মহামিলন গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বাস এবং ধারণা জনমানসের গভীরেও প্রচলিত ছিল এতকাল। ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ তাই এখানকার কোনো নতুন ইতিহাস নয়। যে কারণে ইমিগ্রেশন ইস্যুর আলোচনায় এসে বিতর্কে বসে অনেকেই বলতেন- অসবৎরপধ রং ধ হধঃরড়হ ড়ভ রসসরমৎধহঃং. অসবৎরপধ রং ংঃৎবহমঃযবহবফ নু ঃযব পড়হঃৎরনঁঃরড়হং সধফব নু রসসরমৎধহঃং. ঋড়ৎ ঃযব ট.ঝ বপড়হড়সু ঃড় ভষড়ঁৎরংয ঃড় রঃং ভঁষষ ঢ়ড়ঃবহঃরধষ, ড়ঁঃফধঃবফ রসসরমৎধঃরড়হ ঢ়ড়ষরপু সঁংঃ নব সড়ফবৎহরুবফ. কিন্তু বাস্তবতা হলো ম্যাস ইমিগ্রেশনের নেতিবাচক প্রভাবও যে বিস্তর থেকে যায়, সেটা তারা আমলে নিতে একেবারেই ভুলে যেতেন। যার প্রভাব এখন আমেরিকাজুড়ে বিশাল বেগে ঝড় তুলছে।
বর্ডার সিকিউরিটি জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ, এ বিষয়ে প্রফেশন্যাল বিশেষজ্ঞদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আমেরিকার বর্তমান বাস্তবতা হলো, সবকিছুকেই রাজনীতির কব্জায় বন্দি করতে গিয়ে বহুক্ষেত্রে যে নতুন নতুন বিশেষজ্ঞের জন্ম দেয়া হচ্ছে, তাদের মতাদর্শ বড়ই মারাত্মক। তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, জেলখানার সংখ্যা যত কমে আসবে, ততই কমতে থাকবে অপরাধপ্রবণতা। এই তত্ত্বে অসংখ্য ক্রিমিন্যাল জেলখানা থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ায় ফের রাজপথে শুটিং এবং খুনসহ বিভিন্ন অপরাধের মাত্রা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা বলছেন, পুলিশের ক্ষমতা খর্ব হলে প্রতিবেশীর কমিউনিটি পাবলিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে (কিন্তু তারা নিজেদের সিকিউরিটির জন্য বডিগার্ড রাখতে পারবেন)। এই থিওরিতে এরা পুলিশকে ডিফান্ড করার দাবিও তুলেছেন। কারণ এদের অভিমত, মানুষের নিরাপত্তাহীনতার মূল কারণ পুলিশ প্রশাসন। ওদিকে শিক্ষাক্ষেত্রেও বিপ্লবের জোয়ার তুলতে শিশুদের চার বছর বয়স থেকেই নর-নারীর লিঙ্গসংক্রান্ত সব পাঠ গেলানোর সাজেশন দেয়া হয়েছে। রেসিজমের চেতনা যাতে জনসমাজকে ভবিষ্যতে সংঘাতে আরো বেশি খণ্ডিত করে, তার জন্যও নতুন তত্ত্ব আবিষ্কৃত হচ্ছে হররোজ। সুতরাং ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তনের সূত্র ধরে নতুন বিশেষজ্ঞরা রাজনৈতিক আদর্শ, নতুন সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, জননীতি, বিচারনীতি এবং অপরাধনীতির কারিগর হওয়ায় অতি গভীর থেকেই বদলে যাচ্ছে আমেরিকা। তাতে রাজনীতির খারাপ দৃষ্টান্তগুলো আরো বেশি ভয়ংকর চেহারা নিয়ে উপস্থিত হওয়ায় সমস্যা পরিণত হচ্ছে সংকটে। ওদিকে নামধামহীন লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে নির্বিবাদে প্রবেশ করছে সিরিয়াল রেপিস্ট থেকে ড্রাগস্মাগলাররা। মানবপাচারকারী থেকে জেল পালানো খুনি ক্রিমিন্যালের দল। আলকায়েদার মতো ভয়ংকর আদর্শপন্থি দলগুলোর অনুচরসহ গঝ-১৩-এর কুখ্যাত গ্যাং। স্যাংকচুয়্যারি শহরজুড়ে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ায় অপরিচ্ছন্নতা দৃশ্যমান। বিভিন্ন নেশাগ্রস্তদের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, নিডল চারপাশে ছড়ানো-ছিটানো। পুলিশ প্রশাসন ডিফান্ড করার প্রস্তাবে অজস্র পুলিশ অফিসাররা অবসরে। ওদিকে সেনাসদস্য, ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটিকেও রাজনৈতিক আদর্শে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়েছে বিপজ্জনকভাবে। অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে ছড়াচ্ছে অনিশ্চয়তার ভয়। পরিবর্তনের প্রভাব এতটাই ব্যাপক আর শক্তিশালী যে তার আঘাতে শতাব্দীর প্রতিষ্ঠিত সমাজসভ্যতা, নীতি-আদর্শের ভিত্তিভূমি ভূমিকম্পে টলায়মান রাজপ্রাসাদের মতোই অস্থির আর বিপন্ন এখন।
মহাকালের ধারায় সভ্যতার ভাঙাগড়া বহুবার হয়েছে। যখন জনস্রোতের দুর্নিবার শক্তি ইন্টারনাল পরিবর্তন ঘটিয়ে সমাজসংস্কৃতিকে বদলে দেয়, তখন শক্তিমান প্রযুক্তি, অর্থনীতির গতিশীলতা কিংবা রাষ্ট্রের বিশালত্ব অনেক সময়েই প্রভাব রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে। সেই দৃষ্টান্ত ইতিহাস যুগে যুগে রেখেছে। সুপার পাওয়ার আমেরিকাও কি বাইডেন প্রশাসনের পথে পা রেখে সেই ইতিহাসের দিকেই এগিয়ে চলেছে আজ?

দীপিকা ঘোষ : কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়