নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

জয়া পতির বঙ্গমাতা পদক লাভ

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের রয়েছে অপরিসীম অবদান। বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহধর্মিণী ও বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের অন্যতম নেপথ্যের কারিগর। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার দেশপ্রেম, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, মানব কল্যাণ ও ত্যাগের মহিমা বাঙালিসহ বিশ্বের সব নারীর কাছে চিরন্তন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বঙ্গমাতার অবদান চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতির জন্য এ বছর থেকে সরকার ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ পদক প্রবর্তন করেছে।
এই সম্মান সূচক পদকে ভূষিত হয়েছেন সমাজসেবক জয়া পতি। জয়া পতি অদম্য এক সাহসী যোদ্ধার নাম। ব্যক্তিত্বময়ী এই নারী সারাজীবন ব্যক্তিগত অর্জনের ব্যাপারে ছিলেন নিস্পৃহ। নারীর স্বাবলম্বন, মানবতাবাদী কর্মকাণ্ড, সর্বোপরি দেশ সেবাই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। জয়া পতির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট ১৯৮২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়। পিতা কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত হন। জয়া পতি অত্যন্ত সফল মেধাবী শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসন, পরিচালক, অত্যন্ত সফল উদ্যোক্তা। তিনি পিতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার যোগ্য উত্তরসূরি।
জয়া পতি ১৯৩২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বিদেশে বোর্ডিং স্কুলে লেখাপড়া শেষে ১৯৫০ সালে লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে শরীর চর্চা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে দেশে ফেরেন। এরপর বাংলাদেশের প্রথম আবাসিক বালিকা বিদ্যালয় ভারতেশ্বরী হোমসের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন তার আদর্শ। বাবার নির্দেশনা পেলেও মুক্তচিন্তা ও সংস্কারমুক্ত জয়া পতি ছাত্রীদের তৈরি করতেন আত্মমর্যাদাশীল-প্রত্যয়ী-স্বাবলম্বী হিসেবে। সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারতেশ্বরী হোমসের মেয়েরা শরীর চর্চা ডিসপ্লে করেছে, যা আজ ভাবতে অবাক লাগে।
১৯৬৪ সালে স্বামী ডা. বিষ্ণুপদ পতির ডাকে লন্ডন চলে যান। এরপর ১৯৭০-এর শেষের দিকে অসুস্থতার খবর পেয়ে বাবাকে দেখতে আসেন। কিছুদিন থাকার পর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার ফিরে যাওয়া বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিল।
এলো ভয়াল ’৭১। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়টাতে কেবল জীবন বাঁচাবার জন্য মানুষ দিগি¦দিক ছুটছে, করছে দেশ ত্যাগ। কিন্তু রণদা প্রসাদ সাহা রয়ে গেলেন পরিবারসহ। তিনি তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী হাসপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকশ রোগী, ভারতেশ্বরী হোমস ও কুমুদিনী মহিলা কলেজকে অভিভাবকহীন করে কোথাও চলে যেতে পারেননি। ফলাফল দাঁড়াল ৭ মে রাতের অন্ধকারে পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাসহ তিনি অপহৃত হলেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা। দখল হয় তখনকার সময়ে ট্রাস্টের প্রধান আয়ের উৎস বেঙ্গল রিভার সার্ভিস। এ অবস্থায় কুমুদিনীর সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো অসহায় হয়ে পড়ে। জয়া পতি এই সংকটময় অবস্থায় কুমুদিনীর হাল ধরেন। আর ভেতরে ভেতরে চলতে থাকে বাবা ও ভাইয়ের সন্ধানে জীবন বাজি রেখে বিদেশি দূতাবাস থেকে শুরু করে রেডক্রস এমনকি মিলিটারি হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত যোগাযোগ। বাড়ি ফিরে নিজেকে শক্ত রেখে স্বজনদের সান্ত¡না দেন, দেন ভরসা। তখনকার প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘু এক নারীর পক্ষে সে ছিল কঠিন অকল্পনীয় যুদ্ধ। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুমুদিনী হাসপাতালে অতিগোপনে চিকিৎসার্থে আগত মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করা খাবার ও অসুধ সরবরাহ করতেন। কিন্তু বন্দুকের নলের মুখেও তিনি মাথানত করেননি। যুদ্ধ শেষে তার শ্রম ও বিচক্ষণতায় কুমুদিনী ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হলেও ফিরে পাননি প্রাণ প্রিয় দুই স্বজনকে। স্বাধীন বাংলাদেশে কুমুদিনী পরিবার বুক বাঁধেন তারা একদিন ফিরবেন এই আশায়। কিন্তু সে শূন্যস্থান আর পূরণ হয়নি।
জয়া পতি বাবার রেখে যাওয়া দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চিন্তা করতে থাকেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের। বাবা রণদা প্রসাদ সাহার মতো জয়া পতিও বিশ্বাস করতেন কেবল বণিক বৃত্তি নয় তার সঙ্গে মানবিক বৃত্তির মিশেল দিয়েই উন্নয়ন করতে হয় সমাজের, দেশের এবং ত্যাগের মধ্যেই আনন্দ। ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন জয়া পতি। ‘মিসেস পতি’ এই পোশাকি নামের বাইরে ঘরোয়াভাবে তিনি সবার কাছে ছোটদি বলেই পরিচিত। ছোটদির স্মৃতি তার অসংখ্য ছাত্রীকে জাগিয়ে রাখবে, অদৃশ্য পরশ বোলাবে তার অপার মমতা। প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের বাইরে তার স্নেহ-মমতায় সিক্ত হয়েছে সবাই। তিনি ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হওয়ায় আমরা গর্বিত।

হেনা সুলতানা, লেখক : শিক্ষক, ভারতেশ্বরী হোমস
মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়