শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

যে কৌশলে ছড়ায় ইয়াবা

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন সুভাষ কুমার সরকার ওরফে আবদুর রহমান। কখনো দিনে কখনো বা রাতে অজ্ঞাত লোক এসে তার বাসায় পৌঁছে দেয় ইয়াবা। এরপর টেকনাফ থেকে মূলহোতা বিভিন্ন অ্যাপস ছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন নম্বর থেকে কল দিয়ে ইয়াবা পৌঁছে দেয়ার ঠিকানা দেয়। কিন্তু কার কাছে ইয়াবাগুলো দেবে সেই নাম বা ফোন নম্বর দেয়া হয় না। ইয়াবা নিয়ে সঠিক ঠিকানায় সময়মতো পৌঁছালে অজ্ঞাত লোক এসে সেগুলো নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দেয় ইয়াবার পরিবহন খরচ। এভাবে ইয়াবা পৌঁছে দিলে রাজধানীর মধ্যে প্রতি হাজার ইয়াবার জন্য মেলে এক হাজার টাকা, আর ঢাকার বাইরে দূরত্ব বুঝে প্রতি হাজার ইয়াবার জন্য মেলে ২-৩ হাজার টাকা। দীর্ঘদিন ধরে আবদুর রহমান এভাবে ইয়াবা ছড়িয়ে দিলেও জানেন না মূল ব্যবসায়ীর আসল নাম ঠিকানা। এমনকি কোন এলাকায় কার কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছেন তাও জানেন না তিনি। শুধু পরিবহন করেই হাজার হাজার টাকা আয় হওয়ায় কাজটি করে যেতেন তিনি। এই কৌশলেই রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ইয়াবা। ফলে মূলহোতা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। থামানো যাচ্ছে না ইয়াবার স্রোত। উল্টো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক সঙ্গে বড় চালান বেড়ে যাওয়ার ঘটনা।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনির ১ নম্বর গেট এলাকা থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আবদুর রহমান ও মো. কবির হোসেন নামে দুই ইয়াবা সরবারহকারীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় মামলা দায়েরের পর তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইয়াবা ব্যবসার এমন কৌশল সম্পর্কে জানতে পেরেছে ডিবি। আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূলহোতার নাম কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার মফিজ বলে জানতে পারলেও বাস্তবে এ নামের কারো হদিস পাচ্ছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ডিবির দাবি, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যে কৌশলে সারাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে তাদের আইনের আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব। ধরা পড়বে শুধু ক্যারিয়ার বা সরবারহকারীরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেকনাফ থেকে বিভিন্ন ক্যারিয়ারের মাধ্যমে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেয়া হতো আবদুর রহমানের কাছে। পরে তিনি ইয়াবাগুলো নিজ বাসায় রেখে দিতেন। মূলহোতা বিভিন্ন মাধ্যমে ঠিকানা পাঠিয়ে ইয়াবা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করত। বেশিরভাগ চালান রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এবং এর আশপাশ এলাকা যেমন গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন ঠিকানায় পাঠানো হতো। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছেন, রাজধানীর মধ্যে প্রতি হাজার ইয়াবা পৌঁছে দিতে তারা এক হাজার টাকা করে নিতেন। রাজধানীর বাইরে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে পৌঁছে দিতে প্রতি হাজারে নিতেন ২-৩ হাজার টাকা। কার কাছ থেকে ইয়াবা আসছে আর কার কাছে দিয়ে আসতেন- এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তারা। শুধু যে ঠিকানাগুলোতে ইয়াবা পৌঁছে দিয়ে আসতেন সেই ঠিকানাগুলোর নাম বলতে পেরেছেন। তবে, এক ঠিকানায় কখনো দুবার ইয়াবা দিতে যাননি তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মতিঝিলের টিএন্ডটি কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা মূলহোতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।
মামলার ১ নম্বর আসামি আবদুর রহমানের আরেক নাম সুভাষ কেন? জানতে চাইলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, আগে হিন্দু ধর্মালম্বী থাকলেও সম্প্রতি তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। ধর্ম পরিবর্তনের কোনো প্রমাণ দিতে না পারলেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর তার নাম আবদুর রহমান রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়