শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

বিল ছাড়ছে আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক : অলস টাকা কমানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : বিনিয়োগ বাড়ানোর অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি একেবারে তলানিতে নেমেছে। প্রণোদনার অর্থ বিতরণের পরও কাক্সিক্ষত মাত্রার প্রায় অর্ধেকে। ব্যাংক খাত থেকে ঘোষণা অনুযায়ী ঋণ নিচ্ছে না সরকারও। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে তৈরি হয়েছে অলস তারল্যের স্তূপ। গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
একই সময়ে উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় বাজার থেকে টাকা তুলতে দীর্ঘদিন পর ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ছাড়া হচ্ছে। আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার এ বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
চলতি মাসের ৬ দিনে মোট ৯টি নিলাম হবে। বাংলাদেশে ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে এ বিল বিক্রি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেবে এবং এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মুনাফা পাবে। এর মাধ্যমে ঠিক কত টাকা তুলে নেয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো তা নির্ধারণ করেনি। তবে এই বিলের সুদহার যদি ট্রেজারি বিল ও কলমানির চেয়ে কম হয়, তাহলে কোনো কাজে দেবে না মনে করছেন বেসরকারি খাতের ব্যাংকাররা।
জানা যায়, দেড় বছর আগেও তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছিল দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ও সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ (এসএলআর) সংরক্ষণেই হিমশিম খাচ্ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তারল্যের সংস্থান করতে বেশি সুদে অন্য ব্যাংকের আমানত বাগিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল ব্যাংকগুলো। আর এখন তার ঠিক উল্টো চিত্র ব্যাংকগুলোতে। বেশির ভাগ ব্যাংক আমানতের সুদহার কমিয়ে ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে। আবার কোনো ব্যাংক ৫-৬ শতাংশ সুদে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আশানুরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অলসভাবে পড়ে আছে। একই সময়ে উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের শীর্ষ নির্বাহী মাসরুর আরেফিন।
তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগের জন্য আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু ভালো ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। অন্যদিকে যারা ঋণ নিতে চাচ্ছেন, তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে ঋণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতির কারণেই দেশের ব্যাংক খাতে অলস তারল্যের পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সিটি ব্যাংকে এ মুহূর্তে ৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। বড় গ্রাহকদের ৫-৬ শতাংশ সুদেও ঋণ দেয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত তারল্য ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সরকার স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়ে ব্যয় নির্বাহ করছে। এ কারণে ব্যাংক থেকে অর্থের জোগান দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। এটি সরকারের দিক থেকে ভালো। তবে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ নীতিপ্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দরকার।
জানা যায়, গত অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। তবে বছরের শুরু থেকেই ঋণের চাহিদা কম থাকায় এ লক্ষ্য কাটছাঁট করে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা- যা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কম।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত তারল্যের অর্থ বিনিয়োগ করে মূলত সরকারি বিল-বন্ড বা কলমানি বাজারে। কিন্তু বর্তমানে ট্রেজারি বিলের সুদহার নেমে এসেছে ১ শতাংশের নিচে। ট্রেজারি বিলের মতোই সুদহারে পতন হয়েছে বন্ডে। ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে চাহিদা না থাকায় কলমানি বাজারের সুদহারও নেমেছে ১ শতাংশে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত টাকা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ সোমবার থেকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ এর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এই টাকা তুলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসের ৬ দিনে মোট ৯টি নিলাম হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ৯, ১৬ ও ২৫ আগস্ট ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের ৬টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। আর ১১, ২৩ ও ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ৩০ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম। তবে যে কোনো সময় নিলামের এ তারিখ পরিবর্তন হতে পারে বলে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়।

তবে এর মাধ্যমে ঠিক কত টাকা তুলে নেয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো সেটা নির্ধারণ করেনি। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে নামমাত্র সুদে লেনদেন হয়েছিল। ওইদিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে ৭ দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এ অংশগ্রহণের জন্য চিঠি দিয়ে বলেছে, মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে এই বিল বিক্রি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেবে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মুনাফা পাবে।
এর আগে গত ২৯ জুলাই চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদবুদ তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাহিদার তুলনায় ব্যাংক খাতে নগদ টাকা বাড়লে সিআরআর বাড়িয়ে, রিভার্স রেপো ও স্বল্পমেয়াদি বিলের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়। করোনা শুরুর পর সিআরআর সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নামানো হয়। বর্তমান তারল্য পরিস্থিতিতে সিআরআর বাড়ানোর চিন্তা থাকলেও এখনই তা করলে টাকার টান পড়তে পারে। আবার রিভার্স রেপোতে ৪ শতাংশ সুদ নির্ধারিত থাকায় এ উপায়ে টাকা তুলতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খরচ অনেক বাড়বে। সার্বিক বিবেচনায় ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়