কাগজ প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশিদের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাবের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল শুক্রবার ৭৬তম হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘বর্তমান বিশ্বে গণহত্যা : হিরোশিমা থেকে মিয়ানমার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, যদি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশিদের সঙ্গে একীভূত করতে সহায়তা করার চেষ্টা করে তবে তা জাতিগত নির্মূল বা গণহত্যাজনিত অপরাধ হিসেবে চি?ি?হ্নত হবে। রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, উইঘুর অথবা যে কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা গণহত্যাজনিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান গণহত্যা বন্ধ করতে এবং রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য জাতিসত্ত্বার বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে দ্রুত তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘকে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের আহ্বান জানান তারা। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে চলমান গণহত্যা বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন জাপানের এহাইম ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এবং মেটাবোলজি বিভাগের গবেষক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক শহীদ সন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্কের সভাপতি, লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা ফেরহাত আতিক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবি হক, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্কের সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী জাগরণের হিন্দি বিভাগের সম্পাদক ভারতের তাপস দাস, ফিলিস্তিনি ছাত্র রামি খলিলি, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সম্পর্কিত কমিটির সদস্য ফয়সাল হাসান তানভীর প্রমুখ। নির্মূল কমিটির তরুণ নেতাদের এই সভায় কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও অন্যান্য প্রবীণ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর বলেন, অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী না হলেও আমেরিকার বর্তমান সচেতন নাগরিক সমাজ ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টের বর্বরোচিত সেই পারমাণবিক বোমা হামলার পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। আমেরিকান রাষ্ট্রপতি হিসেবে বারাক ওবামা প্রথম পারমাণবিক হামলার দুঃসহ স্মৃতিজর্জরিত হিরোশিমা স্মৃতি জাদুঘর ও হিরোশিমা পিস পার্ক পরিদর্শন করলেও তার পূর্বসূরির এহেন কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। অথচ তা নিঃসন্দেহে ছিল গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমরা আশা করি, আমেরিকার বিশিষ্টজনরা এই অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। এই বিভীষিকা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়- অবিলম্বে ১৩ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক সমরাস্ত্র ধ্বংস করা। ফেরহাত আতিক বলেন, ঐতিহাসিকভাবে গণহত্যাকারীরা সম্মিলিতভাবে তাদের অজ্ঞতা ও নৃশংস মনোভাবের কারণে একে অন্যকে নানা অজুহাতে হত্যা করেছে।
আধুনিককালে যখন আমরা এই অজ্ঞতা এবং নৃশংসতার অবসান চাই, তখন এ ধরনের গণহত্যা প্রকৃতপক্ষে গণহত্যাকারীরই দুর্বলতা। এ অবস্থা অগ্রহণযোগ্য।
জাতিসংঘের শিশু অধিকারবিষয়ক কমিটির সদস্য ফয়সাল হাসান তানভীর বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য টোকিও ট্রাইবুনাল গঠিত হয়েছিল। এই ট্রাইব্যুনালের বাঙালি বিচারক রাধাবিনোদ পাল টোকিও ট্রাইব্যুনালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দাবি করেছিলেন, যা অন্য বিচারকরা নাকচ করে দেন। কারণ টোকিও ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আমেরিকা। তখন বিশ্বের কোনো দেশ আমেরিকার এই গণহত্যার নিন্দা করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যুদয়ের পর থেকে নিজেদের দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী। এমনকি বাংলাদেশের গণহত্যা চলাকালে তারা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে ছিল। গণহত্যাকারীরা এভাবে বিচার থেকে অব্যাহতি পেলে বর্তমান বিশ্ব কখনো গণহত্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।