জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

চারঘাটে দিশাহারা ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের শ্রমিকরা

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাইনুল হক সান্টু, চারঘাট (রাজশাহী) থেকে : চারঘাটে করোনা ভাইরাসের থাবায় হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষজন। টানা লকডাউনে উৎপাদিত দ্রব্যাদি নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রয় কমে যাওয়ায় মূলধন হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উপজেলার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পগুলো। ফলে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক বাধ্য হয়েই পেশা বদল করছেন। বরাবরের মতো সব প্রতিষ্ঠান ২৩ জুলাই থেকে কারখানা বন্ধ হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
লকডাউন শিথিল হলেও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা না থাকায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার শ্রমিকরা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করায় অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ঘরে খাবার না থাকায় জীবিকার তাগিদে তাদের বিকল্প আয়ের পথ বেছে নিতে হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উল্লেখযোগ্য ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত বস্ত্রশিল্প, পাদুকা শিল্প, খয়ের ফ্যাক্টরি, মৃৎশিল্প, লোহা ও বাঁশ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র। এর পাশাপাশি দেখা যায় উপজেলা-গ্রাম পর্যায়ের প্রায় অধিকাংশ নারী লোকাল ও জাতীয় পর্যায়ের ফ্যাশন হাউসের বিভিন্ন পোশাকের হাতের কাজের সঙ্গে জড়িত।
উপজেলার সারদা ইউনিয়নের খোর্দ্দগোবিন্দপুর পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, এক সময়ে কাজে ব্যস্ত মানুষগুলো কাজ গুটিয়ে অলস সময় পার করছেন।
স্থানীয় কুমার নন্দ কিশোর পালের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, লকডাউন পালন করতে সরকারি সিদ্ধান্ত তারা মেনে চলছেন। টানা লকডাউনে উৎপাদিত দ্রব্যাদির বিক্রি কম হওয়ায় শ্রমিকের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, অন্যদিকে চলমান লকডাউনে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরাও বিকল্প আয়ের দিকে চলে যাচ্ছেন। ফলে এই শিল্পে আগামীতে শ্রমিক সংকটের জন্য হয়তো আমার কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুপমপুর, ইউসুফপুর নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত তাঁত পল্লীগুলো ও থানাপাড়া গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রায় ৫০০ তাঁতি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে কাজ করছে, এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ নারী। বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে কাজের ভরা মৌসুমেও মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রয়েছে, বিক্রয় প্রস্তাব বাতিল হয়েছে অনেকগুলো। প্রান্তিক তাঁতিদের উৎপাদিত তাঁতের গামছা বিক্রয় না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এসব নারী তাঁত মালিক। উপজেলার একমাত্র তাঁত বস্ত্র রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থানাপাড়া সোয়ালোজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রায়হান আলী বলেন, করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে যানবাহন বন্ধ থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি না। চলমান অর্ডার ক্রেতারা স্থগিতাদেশ দেয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে স্থানীয় তাঁত শিল্প নারী শ্রমিকরা।
একইভাবে উপজেলার গোপালপুরে বিখ্যাত খয়ের শিল্প, পিরোজপুর ডালিপাড়ার বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনে গৃহস্থালি পণ্যের শ্রমিক, কালুহাটির পাদুকা কারিগর ও নন্দনগাছির কামারশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব শিল্পের অধিকাংশ শ্রমিকই দিন আয়ের ওপর নির্ভরশীল, কাজ বন্ধ থাকায় অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছেন সব শ্রমিক। এ সময় বেকার হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য সরকারি খাদ্য ও অর্থ সহায়তা যা স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কিছু শ্রমিক সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ পেলেও সব শ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন অনুপমপুর কারিগরপাড়ার তাঁতি মাজেদা বেগম।
বাধ্য হয়েই এসব ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প আয়ের পথে অগ্রসর হচ্ছেন। রপ্তানিযোগ্য পোশাক শিল্পের একজন সেলাইকর্মী কাজ না থাকায় তাকে দেখা গেছে কনস্ট্রাশন কাজের একজন জোগালদার হিসেবে কাজ করতে। কেউ আবার ভ্যান চালিয়ে অথবা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাজ না থাকায় নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই অন্যের বাসাবাড়িতে স্বল্প বেতনে কাজ করতে দেখা গেছে।
এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে দরকার স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি বলে দাবি করেছেন সরদহ সরকারি কলেজ অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম। উপজেলার প্রকৃত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি প্রণোদনোর আওতায় স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে এসব শিল্পকে পুনরায় উৎপাদনে সহায়তা করতে হবে। ফলে শ্রমিকরা তাদের পুরনো কর্মব্যস্ততায় ফিরতে পারবেন এবং দেশের অর্থনীতিতে এসব ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কর্মহীন শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা শ্রমিকরা তালিকা থেকে বাদ পড়লে পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের মাধ্যমে ত্রাণ প্রদান করা হবে। তবে মূলধন হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কুটিরশিল্পের সার্বিক সহাযোগিতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করবেন বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়