জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

কিশোর কুমার : মৃত্যুর তিন দশক পরও সমান জনপ্রিয়

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রেমের গান হোক বা বিরহের গান কিংবা পার্টি সং সবকিছুতেই কিশোর কুমার ছিলেন অনবদ্য, তাই তার মৃত্যুর তিন দশক পরও তিনি সমান জনপ্রিয়। গত ৪ আগস্ট ছিল কিংবদন্তি এই শিল্পীর ৯২তম জন্মবার্ষিকী। চারের দশক থেকে শুরু করে টানা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় সংগীতে বিরাজ করেছেন তিনি আর শ্রোতাদের মনে আজো তার আবেদন একইরকম। একাধারে তিনি অভিনেতা, গায়ক, প্রযোজক, গীতিকার ও সুরকার। শাস্ত্রীয় সংগীতের তথাকথিত তালিম না থাকা সত্ত্বেও সুরের আকাশে খুব তাড়াতাড়িই উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠেছিলেন মেলেডি কিং। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই তার কণ্ঠের আবেদন। মুম্বাইয়ের বম্বে টকিজে কোরাস গায়ক হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কিশোর কুমার, তখন সেখানেই অভিনয় করতেন দাদা অশোক কুমার। এরপর ১৯৪৮ সালে ‘জিদ্দি’ ছবিতে প্রথমবার প্লেব্যাক করেছিলেন তিনি। শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম না থাকার দরুন বিমল রায়ের ‘নকরি’ ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয় কিশোর কুমারের। তবে পরে তার গান শুনে সুরকার সলিল চৌধুরী তাকে ‘ছোটা সা ঘর হোগা’ গানটি গাওয়ার সুযোগ দেন। গানটি গাওয়ার কথা ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের। সেইসময় কে এল সায়গলের বড় ভক্ত ছিলেন কিশোর। এমনকি গান গাওয়ার সময় সায়গল সাহেবকেই নকল করতেন তিনি। একদিন অশোক কুমারের বাড়িতে পৌঁছে কিশোর কুমারকে কে এল সায়গলের গান গাইতে শুনে সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মন তাকে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শেই নিজের অনন্য স্টাইল তৈরি করেন কিশোর কুমার। এই নতুন স্টইলই তাকে করে তোলে সবার থেকে আলাদা। শিখে ফেলেন ইয়োডলিং। কিশোর কুমারের দাদা অনুপ কুমারের সংগ্রহের অস্ট্রিয়ান কিছু রেকর্ডস ছিল। সেখান থেকেই অস্ট্রিয় গায়কের অননুকরণীয় ভঙ্গিতে হাতেখড়ি হয় কিশোর কুমারের। সেই স্টাইল হিন্দি গানে মিশে এক বিশিষ্টতা দেয়। কিশোর কুমার ছাড়া সেই সময়ের আর কোনো শিল্পী ইয়োডলিং করতেন না। একের পর এক বিখ্যাত গানের শুরুতে সংগীত পরিচালকের অনুমতি নিয়েই তার প্রয়োগ করেন তিনি। বলিউডে ‘ম্যায় হুঁ ঝুমরু’ বা ‘ইয়ে শাম মস্তানি’ গানের ব্যাপ্তি অনেকটাই তার ইয়োডলিং ব্যবহারের কারণেই। পরে তা বাংলা ছবিতেও ব্যবহার করেন কিশোর কুমার। ‘সিং নেই তবু নাম তার সিংহ’ গানে ইয়োডলিং ব্যবহার করেন কুশোর, তা জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়ে আছে আজো। কিশোর কুমার ছাড়া বলিউডে বিভিন্ন বিদেশি স্টাইল যেসব শিল্পী ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে একেবারে সামনের সারিতে থাকবেন আশা ভোসলে। দুজনের ইয়োডলিং আর স্কেটিং, সেই সময়ের হিন্দি ছবির গানকে নিয়ে গেছে এক অনন্য চূড়ায়। তবে এই প্র্যাকটিসের অন্যতম মূল কাণ্ডারি ছিলেন সংগীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মন। ভারতীয় ফিল্ম সংগীতের ইতিহাসে এমন সব গান তৈরি করলেন, যা সময়কে পার করে অনেক এগিয়ে থাকা। এই স্টাইলের প্রয়োগ আমরা পরবর্তীকালে বেশ কিছু সংগীত পরিচালককে করতে দেখেছি। তবে পরবর্তীকালে যে একটা ‘হাফ টিকেট’ ছবির ‘আকে সিধি লাগি দিল পে য্যায়সে কাটারিয়া’র মতো গান তৈরি হয়নি, তার কারণ, তা গাওয়ার মতো একজন কিশোর কুমারও পাইনি আমরা। ১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ার এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি কিশোর কুমার। কিশোর কুমারের অন্যতম পছন্দের খাবার ছিল জিলিপি। তাই প্রতিবছর খান্ডোয়াতে জন্মদিনে তার সমাধির সামনে জিলিপি রাখা হয়। কিশোর কুমারের অন্তিম ইচ্ছে ছিল যেন তার পার্থিব শরীর খান্ডোয়াতেই দাহ করা হয়। তার অন্তিম ইচ্ছা শুনেই বোঝা যায় খান্ডোয়ার প্রতি তার নাড়ির টান। কিশোর কুমারের বাসভূমিতে দুই কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় করে তার সমাধি ও স্মারক তৈরি করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার ও খান্ডোয়া নগরনিগম। সেই বাড়িতে কেটেছিল তার শৈশব। কিশোর কুমারের স্মরণে তার জন্মবার্ষিকীতে ‘কিশোর সম্মান’ প্রদান করে মধ্যপ্রদেশ সরকার। অভিনয় ও গানের জগতের বিভিন্ন শিল্পীদের হাতে তুলে দেয়া হয় মানপত্র ও আর্থিক পুরস্কার।
চার সংখ্যাটি যেন কিশোর কুমারের জীবনে এক অদ্ভুত কাহিনীর মতো। কিশোর কুমার ৪ আগস্ট ৪টার সময় জন্মগ্রহণ করেন এবং ৪র্থ সন্তান। তিনি জীবনে ৪টি বিয়ে করেন, চলচ্চিত্র জীবনে ৪টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি মারা যান।
:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়