কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক প্রথমবারের মতো আয়োজিত শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাত ক্যাটাগরিতে ১০ জন ক্রীড়াবিদসহ পুরস্কৃত হয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শেখ কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত গতকাল ওই অনুষ্ঠানে পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ¡সিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ফুটবল কিংবদন্তি কাজী সালাউদ্দিনসহ অন্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। এ সময় আজীবন সম্মাননা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘সব পুরস্কারের চেয়ে আমার কাছে এই পুরস্কারের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অন্যরকম। আমি খুব আনন্দিত যে এই পুরস্কার পেয়েছি। শেখ কামালের বন্ধু ও তার দল আবাহনীতে খেলা কাজী সালাউদ্দিন বন্ধুকে স্মরণ করে আরো বলেন, ‘শেখ কামাল এত অল্প বয়সে এত অল্প দিনে যা করেছে, তা সত্যিই অসাধারণ। ও বেঁচে থাকলে দেশের ক্রীড়াঙ্গন আরো এগিয়ে যেতে পারত।’
অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতিও পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। তবে তিনি নিজের অবদানে নয় শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ হয়ে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ সময় নাজমুল হাসান পাপন আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘যখন নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোনো কিছু অর্জন করে তখন স্বাভাবিকভাবেই সারাদেশের মানুষের মতো আমরাও অত্যন্ত আনন্দিত হই। খুব ভালো লাগে। অনেকগুলো পুরস্কার আছে, অনেক বড় বড় পুরস্কার সেগুলো। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ অনেক পুরস্কার আছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যেহেতু এটা ক্রিকেট এবং খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই মনে করি এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পুরস্কার এবং সময়টাও বেশি ভালো লাগছে। এমন একটা সময়ে যখন আমরা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে পরপর দুটি ম্যাচ জিতে এ পুরস্কার নিতে পারছি।’ এ সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেরা পারফরমারদের অ্যাওয়াড নাইট পুনরায় চালু হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘বিসিবির এরকম আয়োজন না করার কোনো কারণই নেই। আগেও করতে পারতাম। চাইলে এখনো করতে পারি। আমাদের অবশ্যই পরিকল্পনায় আছে। তবে এই পুরস্কারের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না।’
টোকিও অলিম্পিক খেলে দেশে ফেরার পরই আরচার রোমান সানা এই পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত হয়ে বলেন, ‘আসলেই খুব ভালো লাগছে। অলিম্পিক থেকে আসার পর এই পদক আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে সামনের দিকে আরো ভালো করার জন্য।’
২০১৬ এসএ গেমসে রেকর্ডসহ দুই স্বর্ণপদক ও টানা দুটি এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জেতা ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত পুরস্কার গ্রহণকালে বলেন, ‘আগামী দিনে আরো এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে নিচ্ছেন এই পদককে, ‘আমরা ক্রীড়াবিদরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে ভালো কিছু করতে চাই।
সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলাও পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ¡সিত হয়ে জানান, ‘ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কারই পেয়েছি। এই পুরস্কারটি একটু ভিন্ন ধরনের। যিনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের পথিকৃৎ, তার নামে পুরস্কার পাওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেটা আসলেই স্মরণীয় একটি বিষয়।’
এর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টাওয়ারের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ কামাল বেঁচে থাকলে দেশের যুব সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারত। খেলাধুলার প্রতি তার ছিল অত্যন্ত আগ্রহ। ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ ছিল তার। বিশেষ করে ফুটবল-ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলায় আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে চেয়েছিল সে। রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করত কামাল। অর্থ, সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে তার কোনো নজরই ছিল না। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিই ছিল তার সবকিছু।’ যারা প্রথমবার শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সেটাই আমি চাই। কারণ যে কোনো জাতির জন্য শিক্ষা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতি চর্চা অপরিহার্য। আমি মনে করি, এ পুরস্কারের মধ্যে কামালকে যেমন সম্মান জানানো হয়েছে তার পাশাপাশি খেলায়ও মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে এবং উৎসাহিত হবে।’
শেখ কামালের ৭২তম জন্মদিনে সাত ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- ক্রীড়া সংগঠক মনজুর কাদের (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব), উদীয়মান ক্রীড়াবিদ ক্যাগরিতে আকবর আলী (ক্রিকেট), ফাহাদ রহমান (দাবা), উন্নতি খাতুন (ফুটবল) এবং ক্য শৈ ল হ্ন (কারাতে ফেডারেশন)। পুরস্কার প্রাপ্তরা ১ লাখ টাকা ও সম্মাননা স্মারক পেয়েছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।